ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪০ বছরেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন কোচ আমদানি হয়নি রেলের

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

৪০ বছরেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন কোচ আমদানি হয়নি রেলের

মশিউর রহমান খান ॥ গত ৪০ বছরেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন কোচ আমদানি করেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য প্রথম শ্রেণীর কোচ আমদানির প্রতি উক্ত সময়ের সব সরকারের সময়ই বিশেষ নজর দেয়া হলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানির প্রতি অজ্ঞাত কারণে অনীহা দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী একমাত্র গণপরিবহন বাংলাদেশ রেলওয়ে। কোচ না আনায় এসব কোচের মধ্যে বর্তমানে প্রায় শতভাগ কোচই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই চলছে এসব ট্রেন। নতুন কোচ আমদানি না হওয়ায় পুরনো কোচ দিয়েই চলছে লোকাল, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি এখনও সচল পুরনো এসব কোচ। এরই মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৪টি দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে নিম্ন আয়ের যাত্রীরা রেলপথে চলাচলে নানান বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আগ্রহ হারাচ্ছেন রেলপথে ভ্রমণের। যার প্রভাব পড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়ে। কোচ সঙ্কটের ফলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ৪৩টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের জন্য ২শ ২৬টি কোচ থাকার কথা থাকলেও প্রতিদিন ১শ ৬৭টি কোচ দিয়ে ট্রেনগুলো পরিচালনা করে পরিবহন বিভাগ। তবে আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ আমদানিতে কোন কার্পণ্য নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ সঙ্কটের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় রেলের যান্ত্রিক প্রকৌশল দফতরকে একাধিক চিঠি দিয়েছে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। এসব চিঠির পর পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টকে (সিওপিএস) দেয়া প্রতি উত্তরে চিঠিতে বলা হয়, প্রকৌশল দফতর জানায় যে, দ্বিতীয় শ্রেণীর পুরনো কোচগুলো আর মেরামতের উপযোগী নেই। এছাড়া রেলের পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত সব দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া ট্রেন মেরামত করা লাভজনক নয় বিধায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৪টি দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর ২শ ৫৫টি কোচের মধ্যে কার্যকর রয়েছে ২০২টি। ফলে পরিবহন বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী কোচ সরবরাহ সম্ভব নয়। চিঠিতে এ নিয়ে বারবার চিঠি দিয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশল দফতরকে বিব্রত না করার অনুরোধও জানানো হয়। রেলসূত্র জানায়, সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপর নতুন করে দ্রুতগতি ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা হলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানিতে আগ্রহ দেখায়নি সংস্থাটি। রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ৫৯টি দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ সঙ্কট নিয়ে প্রতিদিন ট্রেন পরিচালনা করছে। প্রতিটি মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন ছয় থেকে সর্বোচ্চ ১২টি পর্যন্ত কোচের সমন্বয়ে চলার কথা থাকলেও সর্বনিম্ন দুটি কোচ দিয়েও ট্রেন পরিচালনার অনেক নজির রয়েছে। এক সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বল্প দূরত্বের এলাকাগুলোয় একাধিক ট্রেন চালু থাকলেও শুধু কোচ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে মেইল ও লোকাল ট্রেনের সংখ্যা রেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই কমিয়ে এনেছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের ট্রেন সেবা গ্রহণের সুযোগ দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। যা সরকারী এ গণপরিবহনের জন্য সুখকর নয়। রেলসূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৪৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী ৩শ ৩৬টি কোচের চাহিদা হলেও কোচ সঙ্কট রয়েছে মাত্র দুটি। অন্যদিকে ৪৩টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের জন্য ২শ ২৬টি কোচ থাকার কথা থাকলেও প্রতিদিন ১৬৭টি কোচ দিয়ে ট্রেনগুলো পরিচালনা করে পরিবহন বিভাগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের (২০টি) চেয়ে তিনটি কম কোচ নিয়ে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা মেইল ট্রেন দুটি চলাচল করে। একইভাবে পূর্বাঞ্চলের ৪৩টি মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের চেয়ে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। ফলে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষের গণপরিবহন সুবিধা প্রতিনিয়ত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে সেবা প্রদানের মান কমানোর পাশপাশি রেলের আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে রেলওয়ের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জানা গেছে, স্বাধীনতার পরপরই ইংল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরবর্তীতে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ার পর রেলওয়ে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ইরান ও চীন থেকে কোচ আমদানি করে। রেলসূত্র জানায়, ৪০ বছরের অধিক সময় আগে আমদানি করা দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও এখনও চলাচল উপযোগী থাকলেও অথচ মাত্র দেড় বছর আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করা ইন্দোনেশীয় কোচগুলোর ত্রুটি দিনদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অপরদিকে সমস্যা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানি না করে আন্তঃনগর ট্রেনের দিকেই বেশি ঝুঁকছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষজন ট্রেনে চলাচলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। রেল কর্তৃপক্ষের আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ সংগ্রহের পাশাপাশি অতি জরুরী উন্নতমানের দ্বিতীয় শ্রেণীর রেলকোচ আমদানির প্রতি মনযোগ দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
×