ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদকম-লীর সভা শেষে কাদের

অসুস্থতার মাত্রা বুঝে খালেদার চিকিৎসার ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

অসুস্থতার মাত্রা বুঝে খালেদার  চিকিৎসার ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মাত্রা বুঝে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই সরকার নেবে বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মাত্রা বুঝে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে সরকার। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সভা শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জেলে আছেন বলে তার প্রতি সরকার অমানবিক আচরণ করবে না। আওয়ামী লীগ সেই ধরনের সরকার না। অবশ্যই দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। তারপরও যদি (বিদেশে নেয়ার) প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম জিয়া অসুস্থ আছেন; এটা বিএনপির মহাসচিব জোর গলায় উচ্চারণ করেছেন। তার অসুস্থ হওয়াটা কি টার্মিনাল ডিজিজ না নরমাল ডিজিজ, সেটা দেখতে হবে। টার্মিনাল ডিজিজ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের চিকিৎসকরা যদি বোর্ড বসিয়ে বলেন যে বিদেশে পাঠাতে হবে, তাহলে পাঠাব। খালেদা জিয়াকে সরকার বিদেশে পাঠিয়ে দেবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কারাগারে আছেন। আমরা তো কারাগারে গিয়ে দেখিনি তিনি কেমন অসুস্থ। এটা আমরা বলতেও পারব না। এটা চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের ১৩৩ প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, বিএনপি যে কয়টা জায়গায় জিতেছে এক-দুটি ছাড়া বাকি সব কিন্তু আমাদের বিদ্রোহী, আমাদের অন্তর্কলহের ফলে তারা জিতেছে। ওই নির্বাচনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের প্রতি সুবিচার করছে না অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ (শুক্রবার) একটা কাগজে দেখলাম যে চারটা এলাকায় আমরা হেরেছি শুধু সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এটা কেন? পুরো চিত্রটা তুলে ধরুন। আমাদের প্রাপ্য কভারেজটুকু তো দেবেন। আমাদের যেখানে হার শুধু সেখানের খবর নিয়ে আসেন তারা। আর কয়েকটি পত্রিকা এটাকে আংশিকভাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ফলাফল সমান দেখনোর চেষ্টা করেছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সম্পাদক-লীর সভায় সদ্য অনুষ্ঠিত দুই নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। আমরা মনে করি, সুপ্রীমকোর্ট নির্বাচনে আমাদের যে ফল এসেছে, তাও আমাদের অভ্যন্তরীণ কর্মকা-ের কারণেই হয়েছে। আমাদের সামষ্টিক কারণেই আমাদের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি বলব, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আমাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণেই বিএনপি জিতেছে। আমাদের অন্তর্কলহের ফসলই বিএনপি ঘরে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধীদের শাস্তি না হলে অপরাধের প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল দ্রুত নিরসনের তাগিদ ॥ এর আগে বৈঠকে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দেশের ১৩৩ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের ফল বিষয়ে বিশ্লেষণ করেন নেতারা। বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনার সময় অনেক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য দলীয় কোন্দল, অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর আধিক্যকে দায়ী করে নেতারা বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের অনেকগুণ আস্থা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলার জনসভায় বিপুল জনসমাগম দল ও সরকারের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু বিভিন্নস্থানে দলীয় কোন্দলের কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দ্রুতই দলের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল-দ্বন্দ্ব নিরসন করা না গেলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িতদের কড়া সাংগঠনিক শাস্তি গ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কড়া অবস্থানের কথা তৃণমূল নেতাদের জানিয়ে দিতে হবে। সূত্র জানায়, জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক সমস্যা যেমন দেখা দিচ্ছে তেমনি বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত হতে হচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকম-লীর সভায় মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দেলোয়ার হোসেন, এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, ড. শাম্মী আহম্মেদ, শামসুন্নাহার পাঁপা, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
×