ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিনগরে লিফট দুর্ঘটনা

জন্মদিনের আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৩১ মার্চ ২০১৮

জন্মদিনের আনন্দ পরিণত  হলো বিষাদে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মায়ের জন্ম দিনের আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো লিফটে চাপা পড়ে মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায়। মুহূর্তেই আনন্দ উবে গেছে। পরিবারসহ আবাসিক বহুতল ভবনটির বাসিন্দাদের মধ্যে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। ত্রুটিপূর্ণ লিফট কেড়ে নিল প্রিয় মেয়েকে। মেয়ে হারানোর বেদনায় পিতা-মাতা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর বলছেন, কি প্রয়োজন ছিল জন্ম দিন উপলক্ষে বাইরে খেতে যাওয়ার পরিকল্পনা করার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর শান্তিনগরের বহুতল আবাসিক ভবন আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের গ্রিন পিস এ্যাপার্টমেন্টে। লিফটে চাপা পড়ে আলভিরা রহমান নামে নয় বছরের একটি মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তার পিতার নাম শিপলু চৌধুরী। তিনি আলী বাবা ডোর কোম্পানির মালিকের ছেলে। শিপলু চৌধুরীর ভাই পিয়াল সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার ছিল নিহত আলভিরার মা রুনির জন্মদিন। রুনিরা ভবনটির ১৫ তলায় থাকতেন। পরিকল্পনা মোতাবেক জন্মদিন উপলক্ষে তারা সবাই রাতে বাইরে খাবেন। রুনির কোলে ছিল ছয় মাসের শিশুসন্তান। আর আলভিরা তার বাবার হাত ধরেছিল। বাসা থেকে বেরিয়েই শিপলু চালক বাদশাকে ফোন দিয়ে গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলেন। তখন লিফটটা ১৫ তলায় এসে থামে। লিফটি উপরের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ কি ভেবে আলভিরা লিফটে ঢুকতে যায়। তখনও আলভিরার হাত ওই বাবার হাতে ধরা ছিল। লিফটের দরজাটি তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। শিপলু তখনও পেছনের দিকে টান দিলে হয়তো আলভিরাকে বের করে নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু কি ভেবে শিপলু সে কাজ করেননি। আলভিরার মাথা ও এক হাতসহ শরীরের কিছু অংশ লিফটের বাইরে রয়ে গেল। বাকি অংশ লিফটের ভেতরে ঢুকে রইল। লিফটে থাকা সেন্সর সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আপনা আপনি দরজা খুলে দেয় বা যায়। কিন্তু ওই সময় লিফটের দরজা চেপে গেল। পুরোপুরি দুইটি দরজা লাগলো না। আলভিরার মাথা ও এক হাত এবং এক পাসহ শরীরে কিছুটা অংশ আটকে রইল। আর লিফটি অদ্ভুতভাবে ওপরের দিকে যেতে থাকে। ওই সময় লিফটের ওপরে থাকা স্টিলের ফ্রেমে আলভিরার মাথা জোরে ধাক্কা খায়। আলভিরার মাথা ফেটে যায়। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত বের হতে থাকে। আলভিরার রক্ত লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পিতামাতার শরীরের পড়তে লাগলো। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট আলভিরা এভাবে লিফটে আটকে ছিল। সেখানেই আলভিরা ছটফট করতে করতে মারা যায়। পরে সেখান থেকে নামানো হয় আলভিরাকে। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, দ্রুত পুলিশ গিয়ে আলভিরাকে উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলভিরাকে মৃত ঘোষণা করেন। ভবনটির অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, প্রায়ই লিফটের সেন্সর কাজ করে না। ঠিকমতো লিফটম্যান থাকে না। যদিও ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছেন ভবন পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর মিয়া। প্রায় ৭/৮ বছর আগে লাগানো লিফটটি সঠিকভাবে সার্ভিসিং করা ছিল। লিফটম্যানও ছিল। ভবনটির বাসিন্দারা জানান, সেখানে ১৮০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রায় হাজারখানেক মানুষের বসবাস। তিনটি ভবনের জন্য ছয়টি লিফট। তবে সব সময় চালু থাকে একটি। আগে তিনজন লিফটম্যান থাকলেও বর্তমানে একজন কাজ করেন। প্রতিটি ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে চার হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। সেই হিসাবমতে, সাত লাখেরও বেশি টাকা ওঠে অথচ মাঝে মধ্যেই দেখা যায়, লিফটের বাটন ও সেন্সর কাজ করে না। পর্যাপ্ত সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যান থাকে না। ভবন বাসিন্দরা জানান, আলভিরার প্রথম জানাজা শুক্রবার ওই এ্যাপার্টমেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। জুমা’র নামাজের পর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের লেক মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১২ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানে দাফন করা হয় আলভিরাকে।
×