ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম ছোবলেই নিহত ৪ ॥ শুরু হলো কালবৈশাখীর মৌসুম

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৩১ মার্চ ২০১৮

প্রথম ছোবলেই নিহত ৪ ॥ শুরু হলো কালবৈশাখীর মৌসুম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীতে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারি শিলার আঘাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একজন, বজ্রাঘাতে রংপুরে দু’জন ও ভৈরবে একজন নিহত হয়েছে। রাজধানীতেও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। সবজিক্ষেত, তামাক, বোরো ও ভুট্টাক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ফসলি ক্ষেতের পরিমাণ হবে চার হাজার বিঘার বেশি। ঝরে পড়েছে আম-লিচুর মুকুল। ৫শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের শিলার আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ায় শুক্রবার দিনভর বিদ্যুত সংযোগ ছিল না অনেক এলাকায়। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। ঝড়ো বাতাসে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত ও ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সারাদেশে কালবৈশাখী ছোবল দিয়েছে। যা এখন ঘনঘন হবে। সঙ্গে থাকবে শিলাবৃষ্টিও। কালবৈশাখীর ছোবলে দেশের নদীবন্দরগুলোতে দেয়া হয়েছে সতর্কতা। গত কয়েকদিন থেকেই দেশের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা বেড়েছে। শুক্রবার দেশের সব বিভাগেই শুরু হয়েছে কালবৈশাখী, সঙ্গে শিলা ঝরছে। শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদী বন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যাবে। সেই সঙ্গে বজ্র/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, এখন কালবৈশাখীর সময়। এটা ঘনঘন হবে। শুক্রবার দেশের সব বিভাগের ওপর দিয়েই এটা বয়ে যাচ্ছে। তবে সামুদ্রিক সতর্কতা নেই। ভারি বৃষ্টিপাতেরও কোন পূর্বাভাস নেই। শুক্রবার দেশের সবচেয়ে বেশি ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হাল্কা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এভাবে মে মাসেও দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিলে ঢাকা বিভাগে ১৫০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ১৫২ মিমি, চট্টগ্রামে ১৪৩ মিমি, সিলেটে ২৯৬ মিমি, রাজশাহীতে ৮২ মিমি, রংপুরে ৯২ মিমি, খুলনায় ৭৬ মিমি ও বরিশাল বিভাগে ১৩২ মিলিমিটার হতে পারে আর শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৫.৮ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ৩৩.৫ ও ২৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর থেকে জানান, রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচন্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার সময় বজ্রাঘাতে দু’জন মারা গেছে। অপরদিকে ঝড়ে ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। বজ্রাঘাতে মারা যাওয়া শামিমের বাড়ি বদরগঞ্জ ও নয়া মিয়ার বাড়ি তারাগঞ্জ। তারা দু’জনই ক্ষেতমজুর। শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে প্রচন্ড ঝড় রংপুর নগরী ছাড়াও গঙ্গাচড়া, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানে। বিশেষ করে পাথরের মতো শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানক্ষেত, ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে একটানা চলা এ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ভুট্টা, ধান, উঠতি গম ও তরমুজের ব্যাপক ক্ষতিতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। পীরগঞ্জের জাফরপাড়া, মোনাইলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা জানান, ধানের গাছ এখন বেশ বাড়ন্ত। ধানও গজাতে শুরু করেছে। কিছুদিন পরই দৃশ্যমান হতো ধান। কিন্তু শুক্রবার দুপুরের এই শিলাবৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে ধান মিশে গেছে। ঝরে গেছে আমের গুঁটি; আধ পাকা কিংবা পাকা গম আর ভুট্টা মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এগুলো থেকে ফলন পাওয়া এবং গম থেমে বীজ পাওয়ার কোন ভরসা দেখছেন না স্থানীয় কৃষকরা। পীরগঞ্জের মোনাইল গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী রফিক ম-ল বলেন, একেকটা শিলার ওজন আধা কেজি থেকে এক কেজি। গত ৩০ থেকে ৪০ বছরে এমন বড় বড় শিলা দেখিনি। ৪০ মিনিটের মতো স্থানীয় ওই ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ফসলের সর্বনাশ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম ও লিচুর ফলনে। পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, টুকুরিয়ার চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান ও চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শামীম জানান, ঝড়ের চেয়ে শিলাবৃষ্টিতে তাদের এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা পার্বতীপুর থেকে জানান, প্রচন্ড শিলাবৃষ্টিতে সৈয়দ আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার পিতার নাম মৃত লালমিঞা। বড়চন্ডিপুর চৈতাপাড়া গ্রামে বাড়ি। শুক্রবার দুপুর ১২টার হঠাৎ প্রচন্ড বেগে শিলাবৃষ্টি যখন শুরু হয়। সৈয়দ আলী তখন তার ভাইসহ ঘরবাড়ি মেরামত করছিলেন। এ সময় বিশাল আকৃতির শিলাখ- মাথায় পড়লে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। শিলার আঘাতে ৫ ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। শিলাপাতে পৌরসভাসহ ১০ ইউনিয়ন ও পাশর্^বর্তী অঞ্চলে টিননির্মিত ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তছনছ, ল-ভ- হয়ে গেছে। আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভূপতিত শিলার পরিমাণ ছিল ১শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম পর্যন্ত। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে শিলাবৃষ্টিতে নাগেশ^রী উপজেলার সন্তোষপুর, রামখানা ও নাগেশ^রী সদরের বালাটারি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবেেচয় বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো আবাদের। এছাড়াও শিলের আঘাতে আম ঝরে পড়েছে। ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে একযোগে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। দুই দফায় এ বৃষ্টি থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। তবে টানা ১৫ মিনিট শিল পড়ে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ে এবং সংযোগ তার ছিঁড়ে সকাল থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, শিলাবৃষ্টিতে নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলার সাত ইউনিয়নে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় ৩৩ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। গোটা জেলায় পিডিবির বিদ্যুত সরবরাহ সকাল ১০টা হতে ছয় ঘণ্টা পর চালু করা হয়। শিলার আঘাতে ১৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাল্কা বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাপাত শুরু হয়। ১০০ গ্রাম থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও এক কেজি ওজনের শিলা পড়ে। প্রচন্ড বেগে মাত্র ১০ মিনিটের শিলাপাতে দুই উপজেলায় দুই সহস্রাধিক বসতঘরের টিনের চালা ঝাঁজরা হয়ে যায়। অনেক ফসলি ক্ষেতে শিলা পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ডিমলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান শিলাবৃষ্টিতে এমন ক্ষয়ক্ষতি এর আগে কোনদিন দেখা যায়নি। আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, ভুট্টা, গম, পিঁয়াজ, মরিচ বিভিন্ন ফল ও বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে টিনের ঘরগুলোর। শিলাবৃষ্টিতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পূর্ব বাইশপুকুর গ্রামের মোখলেছার রহমানের স্ত্রী মিনা বেগম (৩৫), ভোলা মামুদের ছেলে রমজান আলী (৫৪) ও নলিন রায়ের ছেলে চিত্ত রায়ের (৪৭) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদের চিকিৎসা দেয়া হয়। নাউতরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম লেলিন বলেন, আকাশকুড়ি ও গোদার বাজারের ৬ শতাধিক পরিবারের টিনের ঘরে ভারি শিলাবৃষ্টিতে ছিদ্র হয়ে গেছে। ডোমার উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৪ ইউনিয়ন ভোগডাবুড়ি, কেতকীবাড়ি, জোড়াবাড়ি, গোমনাতী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাদের এলাকার প্রায় বারোশত টিনের ঘরের চালা ছিদ্র হয়ে গেছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার বলেন, উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে ভারি শিলাবৃষ্টিতে টিনের ঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি সরেজমিন এলাকার পরিদর্শন করে ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে বলেছেন বলে জানান। স্টাফ রিপোর্টার পঞ্চগড় থেকে জানান, পঞ্চগড়ের কয়েক ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝরে গেছে মৌসুমি ফলের মুকুল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কৃষকরা। শুক্রবার ভোরের দিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত। শিলাবৃষ্টিতে সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মারুপাড়া, পাঠানপাড়া, জঙ্গলপাড়া, জিয়াবাড়ি, পানিমাছপুকুর, বিশমনিসহ বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নত জাতের টমেটো, তরমুজ, শসা, ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আকস্মিক শিলাবৃষ্টিতে নিজের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সংবাদদাতা সৈয়দপুর, নীলফামারী থেকে জানান, সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে শুক্রবার দুপুরে বয়ে যাওয়া শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ইটভাঁটির তৈরি ইট বৃষ্টির কারণে গলে গেছে এবং আমের মুকুল ও কলি ঝরে পড়েছে। মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে। শিলাবৃষ্টিতে গ্রাম এলাকায় ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, পটোল, বোরো ক্ষেতসহ বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের কারণে ইটভাঁটির তৈরি করা কাঁচা ইট পানিতে গলে গেছে। এতে মালিকরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ বজলুর রশীদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীমের নির্দেশে পরিদর্শন করে সঠিক তথ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকাও করতে বলা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার বিকেলে সিলেট শহর ও শহরতলীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দুই দফা ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে অন্তত ৮ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুত লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। ঝড়ের কবলে পড়ে সিলেট নগরীর কাজিরবাজার সেতুতে মারাত্মক আহত দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন মুসাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম জামে মসজিদের টিনের চাল। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৫ মুসল্লি। ঝড়ের সময় বিভাগীয় স্টেডিয়াম জামে মসজিদের টিনের পুরো চাল উড়ে গিয়ে পাশর্^বর্তী আবদুল মতিনের বাড়িতে পড়ে। এ সময় মসজিদের ভেতর মুসল্লিরা এশার নামাজ আদায় করছিলেন। স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শুক্রবার দুপুরে শিলাবৃষ্টিসহ প্রচ- কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। জেলার নবাবগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলায় শুক্রবার দুপুরে অধিকাংশ এলাকার ওপর দিয়ে ওই শিলাবৃষ্টি হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টির কারণে টিনের ছাউনি ঘরবাড়ি, আম, কাঁঠাল ও ভুট্টা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক, জয়পুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আঃ মান্নান, মাহমুদ ইউনিয়নের সাবেক অধ্যক্ষ একেএম আজিজুল হক ও দাউদপুর ইউনিয়নের সুলতান মাহমুদ জানান, দুপুরের ওই শিলাবৃষ্টিতে ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে ঘরে পানি পড়ছে। গাছের কাঁঠাল নষ্ট হয়েছে। বোরো ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুরেজা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এ শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের বিন্দুমাত্র ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কেননা বোরো ফসলে এখনও ফুল আসেনি। কাঁঠালেরও ক্ষতি হবে না। আম কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর থেকে জানান, নাটোরের গুরুদাসপুরে বজ্রপাতে দুই নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, একই উপজেলার মশিন্দা মাঝপাড়া গ্রামের নিলুফা বেগম (৪০), সাহাপুরের আয়েতুন (৬০), বিলহরিবাড়ী গ্রামের আইগরী (৪৫), জগিন্দনগর গ্রামের হাবিবুর (৩০), শরিফুল (২৪), কালাম (৪৫), বাবলু (২৮), সাড্ডাক (৫০) এবং খ্বুজীপুরের আফছার (৪০)। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে আবহাওয়া খারাপ হলে নাটোরের গুরুদাসপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়। এ সময় বজ্রপাত হলে উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের মশিন্দা মাঝপাড়া গ্রামের নিলুফা বেগম ও খুবজীপুর গ্রামের আফছার নিজ বাড়ির বারান্দায় বসে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন। অন্যদিকে, একই সময় বিয়াঘাট ইউনিয়নের জগিন্দনগর গ্রামের একটি মাঠে কাজ করছিল কয়েক শ্রমিক। কিন্তু বজ্রপাত শুরু হলে একই গ্রামে স্লুইস গেট এলাকায় রসুন বহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ট্রলির নিচে আশ্রয় নেয় তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বজ্রপাতের কবলে পড়ে তারাও আহত হয়। পরে স্থানীয়রা নিলুফা বেগমকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদের উদ্ধার করে গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে এবং পুরাতন বছরের শেষে চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও ও তার আশপাশের এলাকায় শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। চলতি মৌসুমের বোরো, গম, ভুট্টা, তরমুজ এবং আম, লিচুসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কোথাও কোথাও গাছপালা উপড়ে পড়েছে সেই সঙ্গে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং কোন কোন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ভৈরব ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ভৈরব থেকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ভৈরবের ভবানীপুর এলাকায় বজ্রপাতে আলমগীর হোসেন (২৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল থেকে ভৈরবে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ধমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। কৃষক আলমগীর বজ্রপাতে আহত হলে গ্রামবাসী তাকে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
×