ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে রাজশাহী জেলা পরিষদ

উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা গতিহীন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৩১ মার্চ ২০১৮

 উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা গতিহীন প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ তীব্র জনবল সঙ্কটে এখন ধুঁকছে রাজশাহী জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা সংস্থা জেলা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের আসন পূরণ হলেও কাঙ্খিত জনবলের অভাবে এগুচ্ছে না এর কার্যক্রম। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ছাড়াও নাগরিক সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় গতিহীন হয়ে পড়েছে রাজশাহী জেলা পরিষদের কার্যক্রম। ফলে রাজশাহী জেলা পরিষদ এখন অনেকটায় চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত পরিষদ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ পরিষদই ম্যানেজ করছে সবকিছু। পদের বিপরীতে কর্মকর্তা না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও শুধু জনবলের অভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প। এমন তথ্য দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি বলেন, বিধি অনুযায়ী জেলা পরিষদের যে জনবলের দরকার তার বেশির ভাগই নেই। শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরকার অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেও জেলা পরিষদে আসেন না তারা। এ কারণে অনেক কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্য ছড়াও ২২টি পদ রয়েছে। তবে রাজশাহী জেলা পরিষদের এসব পদের বিপরীতে প্রায় শূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। পরিষদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার। সেটি শূন্য রয়েছে। সম্প্রতি একজনকে নিয়োগ দিলেও তিনি রহস্যজনক কারণে জেলা পরিষদে আসছেন না। গত ১৫ মার্চ এ পদে জেলা প্রশাসনের একজন এডিসি পারভেজ রায়হানকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও তিনি আসেননি একদিনেও। এছাড়া সচিব, সহকারী প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদশূন্য রয়েছে রাজশাহী জেলা পরিষদে। জানা গেছে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমানকে সম্প্রতি জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি আসছেন না। আর দুই মাস আগে বদলি হয়ে যাওয়ায় উপ সহকারী প্রকৌশলী পদের দুটি পদও শূন্য রয়েছে জেলা পরিষদে। এছাড়া ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণের পর রাজশাহী জেলা পরিষদে নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ফলে এ পদটি প্রায় ১৫ বছর ধরে শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী জেলা পরিষদে হিসাব কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। এরপর এ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এখন প্রধান সহকারী আফজালুর রহমান অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এ পদে। শুধু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী কিংবা সচিবের পদেই নয়, নিম্নস্তরের পদেও নেই জনবল। জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে দুইজন থাকাও কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এ পদ দুটিও শূন্য অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া সাটলিপিকার, উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, বার্তাবাহক পদের বিপরীতেও কোন জনবল নেই বর্তমানে রাজশাহী জেলা পরিষদে। দফতরিও নেই। এমএলএসএস পদে ৫ জনের বিপরীতে কোন রকমে কাজ চালাচ্ছেন দুইজন। তিনটি পদ শূণ্য রয়েছে এ পদের বিপরীতে। শুধুমাত্র একজন নৈশপ্রহরী, একজন সার্ভেয়ার ও প্রধান সহকারীকে নিয়ে চালাতে হচ্ছে জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ এ দফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে সুইপারের পদও শূন্য রয়েছে। তবে শ্রী বিন্দু কুমার দাস নামের একজনকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সেও বিনা বেতনে সার্ভিস দিচ্ছেন। তার আশা একদিন জেলা পরিষদে তার নিয়োগ হবে। এ অবস্থায় মূলতঃ উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে ধুকছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সরকারী অর্থ বরাদ্দ থাকলেও জনবল সঙ্কটে প্রকল্প গ্রহণ না করার কারণে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না উন্নয়ন কর্মকান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে জেলা পরিষদ গতিশীল করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচিত পরিষদ গঠন করেছে। বাস্তবে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অবকাঠামোসহ জেলা পরিষদের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়বে। রাজশাহী জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সরকার যে লক্ষে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জেলা পরিষদ গঠন করেছে তার প্রতিফলন হচ্ছে না শুধু জনবল সঙ্কটের কারণে। এ অবস্থায় তিনি জেলা পরিষদের গতিবৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×