ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন পূরণে বিভোর দুই দরিদ্র পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৩১ মার্চ ২০১৮

 স্বপ্ন পূরণে বিভোর দুই দরিদ্র পরিবার

প্রত্যাশার ৪০ বছর পরে প্রাপ্তির যোগসূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন মাকসুদা বেগম। এই স্বপ্নের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় এখন বিভোর মাকসুদা। যদিও তার কাছে রঙিন স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঘর দেয়ার খবর শোনার পর থেকেই কয়েক যুগের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার স্বপ্নে বিভোর এই অসহায় মাকসুদা। তামাটে বর্ণের এ মায়ের স্বপ্ন কবে বাস্তবায়ন হবে তা যেন জানতেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। জীর্ণদশার ঘরটির এখন কী হাল তা একমাত্র চোখে দেখলেই বোঝা য়ায়। তালপাতার ছাউনির ঝুপড়িঘর। তাও তিনবছর আগের ছাউনি। ভেঙ্গে গেছে। উপরের বাতাসের ঝাপটা ঠেকাতে ছেড়া জাল, পলিথিনের চাপা দেয়া। বেড়া নেই। এরই মধ্যে স্বামী নজরুল ইসলাম, ছেলে নবম শ্রেণীর কুদ্দুস, পঞ্চম শ্রেণীর মুক্তা এবং বড় ছেলে কর্মক্ষম জেলে সবুজকে নিয়ে বসবাস। না আছে লেখাপড়ার কোন টেবিল, না আছে পরিবেশ। ঘরটির একপাশে রান্নার কাজ চলে। এক চিলতে, আনুমানিক চার শতক জমিতে করা নামেমাত্র ঘরটিতে ৪০টি বছর কাটিয়েছেন। গ্রামটি ঘুরলেই মাকসুদা-নজরুল ইসলাম দম্পতির অসহায়ত্বের বাস্তব উপলব্ধি বোঝা যায়। আশপাশের সকলের ঘরে স্বাচ্ছন্দের ছাপ ফুটে আছে। নেই এই দম্পতির। দারিদ্র্য যেন জাপটে ধরেছে। হাতে আঘাত পেয়ে মাকসুদা প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। স্বামী নজরুল ইসলাম ডাব কিনে বিক্রি করছেন। আর বড় ছেলে জেলে নৌকায় কাজ করেন। এদের ওপর নির্ভর ছয় জনের এ পরিবারটি। সন্তানের নিজেদের পেটের যোগানসহ লেখাপড়ার খরচ এখন আর জোটাতে পারেন না মাকসুদা। তারপরও এখন সরকার প্রধানের ঘর দেয়ার খবর শুনে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের আশায় এখন রঙিন স্বপ্নে বিভোর এই মধ্যবয়সী মানুষটি। ৪০টি বছরে একটি ছোট্ট পছন্দের ঘরে নির্বিঘেœ একটু রাত কাটানোর স্বপ্ন পূরণের রঙিন স্বপ্নের বাস্তবায়নের অপেক্ষা পশ্চিম ধুলাসার গ্রামের এ দম্পতির। এ পরিবারটির ভাগ্যে আজ অবধি খাদ্য নিরাপত্তার সরকারের কোন সুবিধা জোটেনি। শুধু মাকসুদা নজরুল দম্পতি নয়, নুরভানু-শাহাদৎ মোল্লা দম্পতির একই দশা। যেন অবাস্তব বাস্তবতা। জীর্ণদশার তালাপাতার ছাউনির ঘরে হোগলা বুনছিলেন নুরভানু বেগম। কাঁথাও সেলাই করেন। হোগলা বুননে এক- দেড়শ’ টাকা এবং কাঁথায় দুই শ’-আড়াইশ’ টাকা পায়। স্বামী থেকেও নেই। মেরুদ-ে আঘাত পেয়ে এক ধরনের কর্মহীন হয়ে আছেন। তারপরও পেটের জ¦ালা মেটাতে শ্রমজীবির কাজ করেন কখনও কখনও, অনেক কষ্টে। একই গ্রামে এ পরিবারটিরও বাস। তাঁরাও শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করবেন। এখন এই খবরটির বাস্তবতার স্বপ্নে বিভোর এ হতদরিদ্র পরিবারটি। ঘরটির তালপাতাও জীর্ণদশায় খসে পড়ছে। ঠেকাতে ছেড়া জাল দিয়ে চাপা দিয়েছেন। কাঁত হয়ে পড়া ঠেকাকে ঠেস দিয়েছে লাঠির। কোন চৌকি পর্যন্ত নেই। মাটিতেই শুয়ে রাত কাটায়। সন্তানেরা বিয়ে করে আগেই আলাদা সংসারে বসবাস করছে। এক নাতিসহ চরম মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। নুরভানু জানালেন, মৃত শ^শুরের পাওয়া ছয় শতক জমিই তাদের সম্বল। কিন্তু একটি ঘর কোনমতে তোলার স্বপ্ন কোনদিন বাস্তবে রূপ দিতে পারবে কি না তা নিজেও জানেন না। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর শুধু ফেয়ার প্রাইস কার্ডের ১০ টাকা কেজির চাল পেয়েছেন। তাও মাপে কম। এ পরিবারটি এখন শুধু অপেক্ষা একটি ঘরের। তা যে মানেরই হোক। তাইলে ৪০ বছরের সংসারে জীবনে একটু স্বস্তির পরশ খুঁজে পাবেন। কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী এসব হতদরিদ্র পরিবারকে এ বছরের মধ্যেই গৃহ পুনর্বাসনের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কেউ আশ্রয়হীন থাকবেন না। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×