ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩১ মার্চ ২০১৮

একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ সরকারী অনুদানে নির্মিত ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি সম্প্রতি ৩টি আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছে। আগামী ১-৫ এপ্রিল ইরাকের কারবালায় অনুষ্ঠিতব্য ইরাকের আল নাজ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ৩০ মার্চ-৮ এপ্রিল কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতের সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ইতালির সানমাওরো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’। ৬০’র দশকের বাঙালীর মুক্তি সংগ্রাম, আগরতলা মামলা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ পরিচালনা করেছেন ফরিদ আহমদ। প্রামাণ্যচিত্রটির গবেষণা, চিত্রনাট্যও তৈরি করেছেন তিনি। ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও পাকিস্তানী শাষকদের শোষণ ও নির্যাতনের প্রেক্ষিতে ’৬০-এর দশকের শুরুতে বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করার পদক্ষেপ নেন সামরিক বাহিনীর কিছু দেশপ্রেমিক বাঙালী সদস্য। প্রাথমিক অবস্থায় এই পরিকল্পনা সংগঠিত করেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সমর্থন, পরামর্শ এবং নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা আন্দালন যখন রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছিল তখনই এ পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। গ্রেফতার হয় প্রায় ১৫০০ বাঙালী। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ভারতবিরোধী সাধারণ মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে এই প্রত্যাশায় পাকিস্তান সরকার মামলার প্রকৃত নাম ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব এবং অন্যান্যর স্থানে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামটি ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু করে। অন্যদিকে মামলার বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার সমর্থন পাওয়ার জন্য মামলাটি মিথ্যা মামলা বলে প্রচার করা হয়। মামলা শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে থাকে। ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র জনতা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র জনতার আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবসহ সকল অভিযুক্তদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। পরদিন আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ঐতিহাসিক এই আগরতলা মামলার সত্য ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। প্রসঙ্গত, ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ চলচ্চিত্র বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত প্রথম প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। ২০১২ সাল থেকে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদান শুরু করে। তখন এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এটি ভারতের ডকওয়াক আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার নির্মাণাধীন প্রামাণ্যচিত্রের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত হয়। জার্মানির ডক লাইপজিগের সহযোগিতায় ডক ওয়াকের বছরব্যাপী পোস্ট প্রোডাকশন মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে এই প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি বর্তমানে সেন্সর বোর্ডে ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
×