ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ মাধ্যমিকে শঙ্কা নয়

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৩১ মার্চ ২০১৮

উচ্চ মাধ্যমিকে শঙ্কা নয়

দুদিন পরেই ২ এপ্রিল শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এবারের এসএসসি পরীক্ষার নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এইচএসসি অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়েও বিরাজ করছে নানা সন্দেহ, শঙ্কা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি থেকে সমাজ পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারছে না বলেই জনমনে সংশয় ও শঙ্কা। তবে সরকারও সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। নানা ইতিবাচক কৌশলী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যাতে সব বাধা বিঘœ ও ভয় উজিয়ে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে এই গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফাঁসের গুজবের সঙ্গে জড়িত ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসএসসিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এসব নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ জন। এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বুধবার নানা পদক্ষেপের কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী। সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে যত রকম উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রীর কথায় জনমনে শঙ্কা কাটবে কিনা। গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করলে অবশ্য আমরা আশাবাদী হতে পারি। যেমন, এবার পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন নিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সেট কোডের নির্দেশনা পাঠানো হবে। তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা যায় না। বলাবাহুল্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস সাম্প্রতিককালে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শুধু স্কুল-কলেজের পরীক্ষা তথা পাবলিক পরীক্ষাই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এটি এখন সমাজে এক ভয়াবহ আত্মঘাতী ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা আগেও বলেছি, আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির কারণে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়ে পড়ছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার সমাধানও বের করা সম্ভব। প্রশ্নপত্র বিতরণে কৌশলগত ভিন্নতা আনলেও অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলে আমরা মত দিয়েছি। পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দুই উদ্দেশ্যে শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করেন। তা হচ্ছে- পাসের হার বাড়ানো এবং অর্থ উপার্জন। পাসের হার বাড়ানোর কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে। একটি হচ্ছে, কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীকে সহায়তা। দ্বিতীয়টি, স্কুলের পাসের হার বাড়ানো। সম্প্রতি যোগ হয়েছে কেন্দ্রের পাসের হার বাড়ানো। বিভিন্ন সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ঘটনা ধরা পড়েছে। সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই জাল যে কোন মূল্যে ছিন্ন করতেই হবে। দুটো উপায় রয়েছে। এক, এই আত্মঘাতী অপরাধকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। দুই, জালচক্রের শিকড় উপড়ে ফেলা। মানুষের প্রত্যাশা আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘেœ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক।
×