ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌম্য সালেক

শান্তির শিল্পযজ্ঞ...

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৩০ মার্চ ২০১৮

শান্তির শিল্পযজ্ঞ...

চিত্রকলা সকল শিল্প-প্রকরণের মধ্যে অধিক আন্তর্জাতিক। চিত্রের এই শ্রেষ্ঠত্বের বড় কারণ এর নির্মাণ প্রক্রিয়া ও অনুষঙ্গ। পৃথিবীর সকল চিত্রশিল্পীর জন্য রং অনিবার্য, এর ফলে রঙের ব্যবহার ব্যঞ্জনার মধ্যে বিভেদ থাকলেও কিন্তু একটি সাধারণ অর্থ খুঁজে পেতে কোন শিল্পী বা কোন শিল্প-পিয়াসুরই কষ্ট হয় না। শিল্পের সকল ধারার মধ্যে উচ্চশিল্প (High-Art) বলে আমরা জানি কবিতা ও চিত্রকলাকে। অবশ্য এ দুটি শিল্পধারা থেকে বিষয় বা বক্তব্যের পাঠোদ্ধার কখনও কখনও কিছুটা দুরূহ হয়ে ওঠে। নানান দেশে নানান ভাষা ব্যবহারের ফলে সাহিত্যকর্মকে ভিন্ন দেশে অনুবাদের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হয়। অনুবাদে বক্তব্য, বিষয় কিংবা অর্থান্তর না হলেও মূল ভাষায় লেখক সংশ্লিষ্ট পটভূমিতে কৃষ্টি, সৃজন ও স্থানিকতার যে ব্যঞ্জনা দেখিয়েছেন, সেটি যে ক্ষুণ্ণ হয়, তা সর্বজন বিদিত। চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনুবাদ কিংবা কোন প্রকার পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না বলে এটি সবচেয়ে আন্তর্জাতিক শিল্প-ধারা। চিত্রকলা আন্তর্জাতিক হলেও যে সকল শিল্পকর্ম বা সবার শিল্প বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপিত হয়ে যায় তেমন কিন্তু নয়। সেজন্য প্রয়োজন শিল্পীর স্বকীয় উপস্থাপন নৈপুণ্য এবং শিল্পকর্মে নান্দনিক অবস্থিতি ও সক্ষমতা। আমাদের চিত্রকলার ইতিহাসে এ যাবৎ যেসব শিল্পীর চিত্রকর্ম আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে তাঁদের কয়েকজন- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, এসএম সুলতান, কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন, আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী এবং সর্বশেষ বড় সংযোজন শাহাবুদ্দিন। শাহাবুদ্দিন গতি, শক্তি, সাহস ও সংগ্রামের শিল্পী। প্রচন্ড ক্ষীপ্রতায় ধাবমান মানবশরীর, সংক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষের আত্মধ্বনি ও মহান ব্যক্তিবর্গের মুখচিত্র আঁকতে ভালবাসেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন। নিস্তেজ জীবন, প্রকৃতি কিংবা জরাগ্রস্ত-বিধ্বস্ত বিষয়ানুষঙ্গ তাঁর চিত্রকে আকীর্ণ করে না। শক্তি, সাহস, বীর্য ও গতির মধ্যে জীবনের যে সমুত্থান রয়েছে, তাকেই তিনি চিত্রপটে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রায় প্রতিটি চিত্রকর্মে লাল রঙের স্বল্প হলেও প্রয়োগ দেখা যায়, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘রক্ত সংবাহনের ফলে মানুষের দেহ সচল থাকে এবং রক্তদানের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি আর রক্তের রং হচ্ছে লাল, তাই আমার চিত্রে লাল রং আপনাতেই চলে আসে।’ তাঁর চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আবুল মনসুর এর ‘শাহাবুদ্দিন : দুর্দম মানব গাথা, প্রবন্ধের কিছু পাঠ এখানে প্রণিধানযোগ্য বলে বোধ করছি, ‘শিল্পচর্চায় তিনি মাইকেল এঞ্জেলো বা জয়নুল আবেদিনের গোত্রের শিল্পী। মানুষের প্রতি তাঁর মমতা ও বিশ্বাস বাঙময় হয়েছে মানবদেহের বিন্যাস ও শক্তিময়তার রূপায়নের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সংযোগ একটি যথাযথ অনুষঙ্গ হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মানব শরীর প্রিয়তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ একত্রিত হয়ে তাঁর বিষয়কে একটি যথাযথ আবেগ দিতে সহায়তা করছে। তাঁর প্রবল গতিশীল বিস্ফোরোন্মুখ মানবদেহসমূহ বাস্তবানুগ হয়েও অর্ধ-প্রস্ফুটিত, অনুপুঙ্খবিহীন।’ দুই. গত ১৯ মার্চ শাহাবুদ্দিনের ‘শান্তি’ শীর্ষক প্রদর্শনী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ২ নং গ্যালারিতে আরম্ভ হয়েছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির আয়োজনে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রাধানমš শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শুধু খাদ্যের মাধ্যমে পেটের ক্ষুধা মিটলেও ব্যক্তির ক্ষুধা মেটে না, তার মনের ক্ষুধাও পূরণ করতে হবে। আর মনের ক্ষুধা পূরণ করতে পারে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। কবি, সাহিত্যিক শিল্পীদের ভালবাসতেন জাতির পিতা। শিল্পীদের প্রতি ভালবাসার উপহারস্বরূপ ১৯৭৪ সালে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনকে প্যারিসে পাঠান বঙ্গবন্ধু। শাহাবুদ্দিন শুধু একজন শিল্পী না, মুক্তিযোদ্ধাও। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শাহাবুদ্দিনের ভালবাসার প্রমাণ পাওয়া যায় তার চিত্রকর্মে। একদিন রংতুলি ছাড়া কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে, কাগজ পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে পেস্ট সহকারে শাহবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, তেজ, শক্তি ও সাহস ঐশ্বরিক শক্তির মতো তার চিত্রকে ধারণা করে আছে। শাহাবুদ্দিন আমার খুবই হের ছোট ভাই।’ প্রদর্শনী উদ্বোধনের প্রাক্কালে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমার জীবনের তিনটি দিক আছে সেগুলো হচ্ছে ছবি আঁকা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। আমি মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছি, দেশের জন্য লড়েছি, খেয়ে না খেয়ে থেকেছি এবং আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমরা হারু পার্টি না, আমরা বিজয়ী।’ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের কথা তিনি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করেছেন, ‘১৯৭৪ সালের কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের বন্যার্তদের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ ও খাদ্য সংগ্রহ করছেন। আমরা তখন শিল্পকর্মের নিলাম আয়োজন করে ২৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি। এই টাকা নিয়ে তাঁর কাছে হাজির হলাম, বললাম-‘কাকা, এটা আপনার বন্যার্তদের তহবিলে দিলাম, আমরা নিলাম করে এটা সংগ্রহ করেছি।’ তিনি খুব আবেগী স্বরে বললেন, ‘এই টাকা দিয়ে কি হবে রে আমার দেশের মানুষের। তুই এটা নিয়ে যা, তোর বাবার হাতে দিস, আমি তো তার জন্য কিছুই করতে পারিনি।’ আমি অনুরোধ করে বললাম-‘এটা আমরা অনেক কষ্ট করে জোগাড় করেছি, আপনাকে নিতেই হবে।’ তিনি টাকাটা নিলেন এবং কেঁদে ফেললেন, দেশের মানুষের জন্য এমন দরদী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ প্রয়োজন, শাহাবুদ্দিন এর ‘শান্তি’-শীর্ষক এই প্রদর্শনটি ২০১৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত হয় এবং সেটি উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১৯ মার্চ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আলোচনা শেষে শিল্পী শাহাবুদ্দিন রচিত ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষনামের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টরি Colour of Freedom-এর প্রদর্শনী এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু এ্যাক্রোবেটিক দলের তিনটি নান্দনিক পরিবেশনা। জাতীয় নাট্যশালার আয়োজন শেষে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি-২ তে উপস্থিত হয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে একযোগে একটি ছবি অঙ্কন করেন এবং প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। ‘শান্তি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম এবং শিল্পী শাহাবুদ্দিনের শিল্প মানস, তাঁর সক্ষমতা ও প্রবণতা বিষয়ক দুটি রচনা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত একটি চমৎকার ক্যাটালগ প্রকাশিত হয়েছে, যা মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীর একটি সম্পূর্ণতার দিক। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের চিত্রের বিশেষত্ব এবং মাহত্ত্ব সম্পর্কিত দারুণ একটি বিশ্লেষণ আমরা খুঁজে পাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ‘বাঙালীর পুঞ্জীভূত শক্তি ও গতির স্ফুরণ’-শীর্ষক রচনায়, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে তাঁর চিত্রে সাহস, গতি ও সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি; শক্তি ও মুক্তির ইঙ্গিতময় হয়ে ওঠে। বড় ক্যানভাসের পর্দায় পেশীবহুল অতিমানবীয় পুরুষের ছবি আঁকতে ভীষণ ভালবাসেন শাহাবুদ্দিন। তাঁর তুলিতে নারীদের চিত্রও চিরায়ত কোমল-দ্যুতি এবং স্নিগ্ধতাকে প্রকাশ করে।’ এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রকর্মবিষয়ক আয়োজন নিয়ে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার চিত্রকর্ম সংরক্ষণের পরিমাণ সম্প্রতি পাঁচশত থেকে বেড়ে একহাজার পাঁচশ’তে উন্নীত হয়েছে। নতুন যেসব শিল্পকলা একাডেমি তৈরি হচ্ছে সেখানে চিত্রকলা গ্যালারি নির্মিত হচ্ছে। শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অভিলক্ষ্য।’ ‘শাহাবুদ্দিন : দ্রোহী ও শান্তিকামী’-শীর্ষক রচনায় মইনুদ্দীন খালেদের মন্তব্যটিও এখানে প্রণিধানযোগ্য, ‘জন্মগতভাবে শাহাবুদ্দিন দুর্দমনীয় আবেগ ও সাহসের অধিকারী। তার রক্তবীজে রয়েছে লড়াই করার এবং অপরাজেয় থাকার প্রণোদনা। দুঃসাহসী লড়াকু মানুষের শক্তি ও তেজেরই নিঃসরণ ঘটেছে তার শিল্পে। মালকোচা দিয়ে লুঙ্গিপরা কৃষক যোদ্ধারাই যেন শাহাবুদ্দিনের ছবির নগ্নপ্রায় মডেলের উৎস। চেতনে-অবচেতনে সেই কৃষক-যোদ্ধারা শিল্পীকে সৃজনের তাড়না দেয়।’ তিন . চিত্রকালায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশে বিদেশে বহু সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন, এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করছি: স্বাধীনতা পদক-২০০০; Knight in the order of Arts and literature-ফ্রান্স, ২০১৪; অলেম্পিয়াড অব দ্য আর্টস, স্পেন-১৯৯২; স্বর্ণ পদক, প্যারিস-১৯৮১ এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সেরা তরুণ চিত্রশিল্পী পুরস্কার তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। তাঁর চিত্রকর্ম দেশ-বিদেশের বহু চিত্রশালা ও মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, সিউল অলেম্পিক মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব বুলগেরিয়া, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব তাইওয়ান, অলিম্পিক মিউজিয়াম-সুইজারল্যান্ড, Museum of Bourg-en Bresse, France এবং জাতীয় চিত্রশালা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, অন্যান্য শিল্প মাধ্যমে যেভাবে আলোকিত- উন্মোচিত হয়েছে, চিত্রশিল্পে সেভাবে আসেনি, এ বিষয়ে কবি ও চিত্রকর দ্রাবিড় সৈকতের মন্তব্যে খেদ লক্ষণীয়, তার ‘চিত্রকলার মহাকাব্যিক বিস্তার’ শীর্ষক রচনা থেকে কিছু পাঠ তুলে ধরছি, ‘একটি মর্মান্তিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের পরেও বাংলাদেশের চিত্রকলায় আমরা তার অনুরণন খুব বেশি অনুভব করতে পারি না। বাংলাদেশের চিত্রকলায় স্বাধীনতার রক্তক্ষরণের ছাপ স্পষ্ট নয়; অনেকটা উন্মুল। অথচ বাংলা ভাষার সাহিত্যে, সিনেমায়, সঙ্গীতে রচিত হয়েছে অজ মাইলফলক। শাহাবুদ্দিনের এই শিল্পকর্মগুলো হয়ত চিত্রশিল্পী মহলকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহিতা থেকে বাঁচিয়ে দেবে। আমরা বলতে পারব মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশকে চিত্রকলায় উপলব্ধি করতে চাইলে শাহাবুদ্দিনের শিল্পকর্মের সামনে দাঁড়াও।’ শাহাবুদ্দিনের চিত্রকর্মে গভীরভাবে, প্রচুরভাবে বাঙালীর মুক্তি সংগ্রাম প্রকাশ পেয়েছে। এটি এতই ব্যাপক যে, তাঁর বিষয়সীমা এবং একই আঙ্গিকের কাজ বার বার দেখে, কেউ কেউ ক্লান্তি এবং উন্নাসিকতা প্রকাশ করেছেন। তবে সর্বোপরি তিনি তাঁর আত্মবোধকে, স্বকীয়তাকে ও দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদনকে সমুন্নত রাখতে পেরেছেন এবং তিনি সফল হয়েছেন। আজ লোকে লোকে বিশ্বময় তাঁর প্রীতিবন্ধন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন প্রবাসে থাকছেন সেই ১৯৭৪ সাল থেকে কিন্তু তাঁর চিত্র ও চিন্তার মধ্যে আজও বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও প্রকৃতি খুব গভীর বন্ধনে স্থিত রয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতির মাধ্যমেই খুব সহজে বিশ্ববাসীর সামনে একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও কীর্তি উপস্থাপিত হয়। শিল্পী শাহাবুদ্দিন তাঁর চিত্রকর্মে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলার দৃশ্যপটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আজও সচেষ্ট রয়েছেন। তাঁর চিত্র গতি, সংগ্রাম, শক্তি ও মুক্তিকে অধিকভাবে প্রকাশ করলেও এর মূলে রয়েছে মানুষেরÑ শান্তি কামনা। আজকের পৃথিবী থেকে, মানুষের কাছ থেকে যা সুদূরবর্তী তা হচ্ছে ‘শান্তি’। শান্তির অন্বেষণে মানুষের সংগ্রাম, শ্রম ও প্রচেষ্টা থাকলেও প্রতিদিন যুদ্ধ, বিগ্রহ, বিসম্বাদ, দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসা মানুষের শান্তির পাথকে রুখে দিচ্ছে। একজন শিল্পী কোনও দ্বন্দ্ব বা বিগ্রহকে বন্ধ করতে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ চালাতে পারেন না; তিনি কেবল শান্তি, সুন্দর ও সুনীতির সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে পারেন, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন সেই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আজও করে যাচ্ছেন। যা মানুষের কল্যাণে, শান্তি ও সুন্দরের প্রত্যাশায় মাটির পৃথিবীতে একজন কবি, একজন শিল্পী ও একজন কর্মীর অভিনিবেশ।
×