ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা এবং আমি

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৩০ মার্চ ২০১৮

কবিতা এবং আমি

এক. গর্জন সমুদ্রেও হয়, ভেজা শ্বাস নীল- মৃত্যুর ঢেউ এসে ঢুকে পড়ে নিঃশব্দে জীবনে। গর্জন মেঘেরো হয় শরীরে তিল জন্মায় নিভৃতে শুধু বৃষ্টি পড়ে ধিমি মুখর মুখের ওপর। শহরে মিথ্যা গাছের সারি, আলোর জড়িবুটি, হারানো মরিয়ম, সিনেমার পোস্টার ভাল থেক। দুই. এক ধরনের ছোট্ট সমুদ্রে আমরাও নেমেছিলাম একদিন। সমুদ্র ছোট হয় না বলে তুমি তর্ক শুরু করলে আমার সমুদ্র ফুলে ফেঁপে পড়ে যায় ঝড়ের কবলে। আমি কি জানতাম সমুদ্র তুমি আমাকেই বলবে আরেকদিন! সেদিন কুয়াশা কুয়াশা রোদ। ঝরা ডাল পাতার গাছ খুব প্রাচীন কোন প্রহরীর মতো, আমি তোমাকে ডুবে যেতে দেখে গুটিয়ে নিচ্ছিলাম ছেড়ে দেয়া সুতা। তুমি থাকো। যেভাবে থাকা যায়। শুধু থাকো মরিয়ম। চলে যেও না কোথাও! তিন. চারপাশে এত শব্দ এত দোল! শুধু এখানে কোন দোল নেই। জল পড়া, পাতা পড়ার। বিষণœ শখের ভেতর চুপচাপ বসে আছো। তুমি কাঁদছো মরিয়ম? তুমি ঠিক আমার চোখ। বুকের ভেতর সবুজ পাতা। লাল রক্তের দাগ। তোমার স্বপ্নেরা কাঁদে ঠিক কুয়াশার মতো। চারদিকে শব্দের ফিরতি আলিঙ্গন। কত রকমের ডায়াগ্রাম। নক্সি রং কমলা রঙের শব্দ। শুধু এখানে কোন শব্দ নেই! সকাল থেকে দুপুর অবধি অপেক্ষার শেষে এখন তাই নীরবতা বসে আছে নিঃশূন্য বাগানেই। চার. বুকের ভেতর ভীষণ কিছু কষ্ট নিয়ে দিন কোনটা, কোনটা দিন কাটাচ্ছি গাছ, গাছের শেকড়, শব্দ ধরা বুকের ভেতর! শব্দ থাকা রাতের গভীর, তারার গর্ভ, চেতনা জল, তরতরিয়ে বাড়তে থাকা লতার লাজুক নরম চিবুক, ভীষণতর কষ্ট নিয়ে গুটাচ্ছি মন আস্ত শামুক! বুকের ভেতর কথার পাহাড়, ভাঙছে গড়ছে অগস্ত সব। বুকের ভেতর গজিয়ে উঠছে বৃষ্টি ফোঁটা, যেমন আমার ভীষণ ছোটা মেয়েবেলার চড়ুইভাতি। আকাশ তারায় মরিয়মের জড়িয়ে পড়া রাতারাতি। পাঁচ. ধন্যবাদ, শূন্যকে বৃষ্টির ফোটা ভেবেছো। শূন্যকে ভেবেছো অতলান্ত সঞ্জীবনী। না লেখা দীর্ঘ এক চিঠির শুরু যে জীবনে, তাকে ভালবেসে আমি বেঁচে বেঁচে উঠি এই পৃথিবীর বারংবার জন্মে। আমার সমস্ত জীবন এক ছোট্ট হীরের টুকরোর মতো তোমার পাশে জ্বলজ্বল করছে মরিয়ম। আমি চোখ বুজলেই দেখি এমন বিভ্রম। ছয়. চলে যাওয়াই ভাল এই মুহূর্তে চলে যাওয়াই সমাধান। ঘোড়াদের পা কারা ভেঙ্গে দিচ্ছে মরিয়ম,সমুদ্র ভিজে যাচ্ছে একা ভীষণ? কি চাতুর্যে বালিতে মুখ গুঁজে রইছে পাথরের প্রজাপতিকুল! কে জানে সূর্য ডুবতে শুরু করলে কি হয়। বিগ্রহের পায়ের কাছে পুরনো প্রেম জমা দিলে কোথায় কোথায় ফুটতে থাকে আশ্চর্য ফুলেরা! সাত. তেমনই বৃষ্টির দিন আজও। যেমন পত্রলেখার উত্তর খুঁজতে বসে আমি বুঝে যাই পথ ফিরে যায় অতীতে। যেন গভীর জঙ্গল আমাকে ডাকে, এসো এই অরণ্যানী তোমাকে স্পর্শ করেছিল কোন একদিন, এসো সেই গভীর গল্পের মতো খাদ Ñ চেয়েছিল নেমে যাবার খাঁজে খাঁজে মিলে যাওয়া জিগ ’স। আমার মনে হয় জিগ ’স কোন এক পাজেল। মেলাতে মেলাতে যখন কপাল আর শিরা বেয়ে চিন্তার নদী বয়ে যাবে, আমার মনে হয় নদীর ধার আছে, অথচ কাটে না ধারাল কথার মতো, তোমাকে কেটেছিল কোন এক সর্পিণী, আমি নই। সে আমি বড় অন্য কেউ ভেবে মনে মনে নিশ্চিন্ত হই বিষ সাজাই, কাটব কাটব... স্ব-উৎসাহে ধার দিতে থাকি দাঁত, আমার নদীটা ক্লান্ত এমন! পত্রলেখার তীর ধরে ছুটিতে ছুটতে আমি ভ্রমের ভেতর পড়ে যেতে থাকি বার বার, সেই সব বৃষ্টিরদিন কি বার বার ফিরে আসে? কেন যে আমি ধোঁয়া ভালবাসি! কেন যে আমার ধোঁয়ার তৃষ্ণায় বুক ফেটে যেতে থাকে। কেন যে আমার আসন সরে সরে যায়, একদ- নিশ্চিন্তে বসতে পারি না। ডাকছে কেড়ে নিচ্ছে সরিয়ে নিচ্ছে কেউ আমাকে আমার থেকে। তোমারও কখনও এমন হয় মরিয়ম? হয়েছে এমন? আট. এভাবে চরাচর প্রলয়ের সঙ্গে মেশে, কোথাও আর মানুষ থাকে না। ল্যাম্পোস্টে দোধারি আলো থাকে না। শুধু কিছু গুচ্ছ গুচ্ছ অসুস্থ তারা একঘরে হয়ে ঝুলতে থাকে শূন্যে। মরিয়ম, যে মানুষ কোথাও থাকে না তার কি আর কান্না পাবে না কোনদিন? নয়. মরিয়ম এসো পান করি হলাহল যেন জন্মেই দু’চোখ পায় ঘাসের রস, সবুজ সন্ধি। অদৃষ্টের এই গ্লাসে ঘাসের রস, ডুবে আছে মুক্তার মতো চাঁদ, এই পৃথিবী এমনÑ তোমার সন্তান যেভাবে গর্ভ ভ্রমণ করে আমার! দশ. হয়ত এটাই ঠিক শীত রাত্রির শেষ তারা অপেক্ষা করেনি মানুষের! অপেক্ষার কালো হাত ভেঙে দাও বলেনি মিছিলে। রাত্রি কে বলেনি, যে ছিল সে ঘুমিয়ে গেছে পূর্ণদৈর্ঘ্য বেদনা নিয়ে। অন্ধকারে মুহূর্ত কেবল মুহূর্তের ভেতর তলিয়ে যায়। অপেক্ষা কাঁপায়, অপেক্ষা শাস্তি। পথে নামলেই অচেনা মানুষ পাশ দিয়ে যায়। মরিয়ম ভাবো? আমি তো মানুষ ছাড়া সৌন্দর্য বিশ্বাস করি না, ভালবাসা ছাড়া সম্পর্ক।
×