ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতা

বিরোধ মেটাচ্ছে চীন ও ফিলিপিন্স

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩০ মার্চ ২০১৮

 বিরোধ মেটাচ্ছে চীন ও ফিলিপিন্স

চীন ও ফিলিপিন্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সমঝোতায় আসতে রাজি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দুদেশের মধ্যে একটি প্রাথমিক সমঝোতার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। এতে সংঘাতের পথে না যেয়ে সাগরের বিতর্কিত অংশে দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষামূলক কথা বলা হয়েছে।- স্ট্রেইট টাইমস। চীন ও ফিলিপিন্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চলতি সপ্তাহে বেজিংয়ে আলোচনা করেছেন। এতে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট এগ্রিমেন্ট (জেডিএ) প্রণয়নের বিষয়ে উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হেগে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত ফিলিপিন্সের পক্ষে রায় দিয়েছিল। ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট বর্তমান প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে তখন ক্ষমতাসীন হননি। তিনি ক্ষমতায় আসার পর সালিশ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। দুতের্তের সরকার এখন বেজিংয়ের সঙ্গে বোঝাপড়ার যে নীতি গ্রহণ করেছে তা নিয়ে ফিলিপিন্সের সুশীল সমাজ, প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর মধ্যেই তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে। বেজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি ও তার ফিলিপিনো প্রতিপক্ষ এ্যালান পিটার সায়াটানো সোমবার দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে রাজি হয়েছেন। তবে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমঝোতা হলেও দুদেশেরই কেউই সার্বভৌমত্বের দাবি থেকে সরে যায়নি। গত বছর দুতের্তে সাগরের মূল্যবান খনিজ সম্পদের ওপর যৌথ মালিকানার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দক্ষিণ চীন সাগর সম্পদে পরিপূর্ণ। সেখানে প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করা হয়। এছাড়া প্রচুর খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতও সেখানে আছে। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে সাগরটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্যিক জাহাজ ওই সাগরের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে। এ কারণে সাগরটি ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই সাগরকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত বিরোধ চলছে। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবাল প্রাচীরের ওপর চীন অনেক দিন ধরেই একগুচ্ছ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে। যা সাগরের ওই অঞ্চলের ওপর চীনের দাবিকে জোরদার করে। কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে চীন সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে বলে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মার্কিন সিনেটে তার শুনানিতে একবার বলেছিলেন, ‘চীন দক্ষিণ চীন সাগরে যা করছে তা রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সঙ্গেই তুলনীয়। চীনকে একটা শক্ত বার্তা দিতে হবে যেন তারা এ রকম কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি বন্ধ করে। তাছাড়া এসব দ্বীপে তাদের ঢুকতে দেয়া উচিত হবে না।’ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-এর জবাবে শুধু এটুকুই বলেছিল যে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনেরই সীমানা এবং সেখানে স্বাভাবিক তৎপরতা চালানোর অধিকার তাদের আছে। সম্প্রতি চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপ স্থাপনের ভিত্তিতে টহল বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের দ্বন্দ্ব। মালিকানা নিয়ে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইর সঙ্গে বিরোধ রয়েছে চীনের। যেসব দেশগুলোর সঙ্গে জলসীমা নিয়ে চীনের বিরোধ চলছে তার বেশিরভাগই মার্কিন মিত্র। যেমন ফিলিপিন্স ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন মিত্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অবনতির ঝুঁকি নিয়েই দুতের্তে এখন চীনের সঙ্গে সমঝোতার হাত বাড়িয়েছেন। তাই বিষয়টি যতটা না মালিকানার, তার চেয়েও বেশি ভূরাজনৈতিক। বিরোধপূর্ণ এলাকায় রয়েছে বড় দুটি দ্বীপ স্পার্টলি ও প্যারাসেল। ২০১২ সালে প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয় চীন। এদিকে স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের আটটি দ্বীপ আগে থেকেই চীনের দখলে রয়েছে। এখানে ভিয়েতনামীদের দখলে রয়েছে অনেক দ্বীপ। পাঁচটি দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করছে মালয়েশিয়া, দুটো ব্রুনেই এবং একটি তাইওয়ান। ফিলিপিন্সেরও সেখানে আটটি দ্বীপ দখলে রেখেছে। চীনা কর্তৃপক্ষ সম্পদ আহরণের জন্য আগামী ২০ বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলারের এক মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ফিলিপিন্স পশ্চিম কালায়ানে ১৯৭০ সাল থেকে তেল আহরণ করছে। ১৯৭৬ সালে সেখানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও চীনের বিরোধিতার মুখে তা উত্তোলন করতে পারেনি ফিলিপিন্স। ১৯৭০ সালে সাবেক ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস কালায়ান দ্বীপপুঞ্জকে নিজস্ব ভূখ- বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন যদিও চীন তাতে স্বীকৃতি দেয়নি।
×