ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে বিএসিআইর অভিযোগ

অসাধু চক্র রডের দাম বাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩০ মার্চ ২০১৮

অসাধু চক্র রডের দাম বাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশ করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশের নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই)। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএসিআইয়ের সভাপতি মুনীর উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুইদিন আগে অর্থাৎ ২৭ মার্চ সকালে টন প্রতি এম এস রডের দাম ছিল ৬৩ হাজার টাকা আর ওই দিন বিকেলে টন প্রতি রডের দাম দাঁড়ায় ৭২ হাজার টাকা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। এতেই প্রমাণ হয়, একটি চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের দাম বাড়াচ্ছে। রডের দর বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে এই প্রকৌশলী বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টন প্রতি রডের দর ছিল ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার। কিন্তু এই কয় মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে রডের মূল্য। আমরা সাধারণত ৫ শতাংশ লাভ করে থাকি। কিন্তু রডের মূল্য বৃদ্ধিতে ২৫ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসেবে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড টন প্রতি ৭১ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, যার এক সপ্তাহ আগের দর ছিল ৬২ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ৪০ গ্রেডের এমএস রডের টন প্রতি দর হচ্ছে ৫৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা। সংস্থাটির হিসেবে গত এক মাসে ৬০ গ্রেডের এম এস রডের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ, আর ৪০ গ্রেডের রডের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা গত এক বছরে বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ২০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে বাস্তবে দাম বেড়েছে আরও বেশি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড টন প্রতি ৪৮ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেই দাম গিয়ে ঠেকে ৬৩ হাজার টাকায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এম এস রডের মূল্য ছিল ৭২ হাজার টাকার কিছু বেশি। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বিএসিআইয়ের নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর হক তালুকদার বলেন, দেশের জিডিপিতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবদান প্রায় ৯ শতাংশ। কিন্তু গত কয়েকমাস যাবত অব্যাহত শিল্প সংশ্লিষ্ট সামগ্রির দাম বেড়েছে। এতে সারা দেশের নির্মাণ কাজ ধীরগতিসম্পন্ন হচ্ছে, এমনকি বন্ধ হয়েও গেছে। এতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ব্যাহত হচ্ছে। যা জিডিপিতে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমএস রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে কোন নিয়মনীতি না মেনে অস্বাভাবিক এবং অব্যাহতভাবে রডের দর বাড়িয়ে চলছে। তারা (রড প্রস্তুতকারী কোম্পানি) বলে থাকেন, কাঁচামালের দাম, পরিবহন খরচ, ডলারের দাম, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি ও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বিলম্বের কারণে রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে রডের দাম সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়তে পারে; কোন অবস্থাতেই ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে না। এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ জড়িত জানিয়ে শফিকুর বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দর বাড়ার ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে প্রচুর জনবল কর্মহীন হবে। তার অভিযাগ, রডের সিন্ডিকেটের দেখাদেখি সিমেন্ট কোম্পানিগুলো গত ২৫ দিনে ব্যাগ প্রতি ৬০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া টাইলস, ইলেকট্রিক ক্যাবল, স্যানিটারি মালামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সরকার অতি দ্রুত পিপিআর অনুযায়ী আমাদের প্রাইস এডজাস্ট ক্লজ-২৭.৯ কার্যকর করবে। না হলে আমরা ১৫ এপ্রিল থেকে সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। এটা কর্মসূচী কিনা জানতে চাইলে মুনীর বলেন, না না কর্মসূচী নয় এবং ঘোষণা করতে হবে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণ কাজ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, অতীতে কয়েকবার সিন্ডিকেট করে রডের দাম বৃদ্ধি করা হলেও সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এবারও সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হবে বলে আমরা আশা করছি। এ বিষয়টি অবগত করে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান মুনীর উদ্দিন। সংগঠনটি সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম, সাবেক সভাপতি আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ রফিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×