ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

প্রথম তালিকার সুরাহা না হলেও দ্বিতীয়টি তৈরির কাজ চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ মার্চ ২০১৮

প্রথম তালিকার সুরাহা না হলেও দ্বিতীয়টি তৈরির কাজ চলছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রথম দফায় প্রেরিত ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা থেকে মিয়ানমার সরকার মাত্র ৩৭৪ জনকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হওয়ার ঘটনায় এতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১০ হাজারের নতুন একটি তালিকার কাজ চলছে। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমও এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করতে মিয়ানমার পক্ষ রাজি হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানানো হয়েছে, আরও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত রয়ে গেছে। এরসঙ্গে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা যুক্ত হচ্ছে। যদিও সংখ্যায় কম, কিন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়নের পর সে দেশের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বান্দরবানের থানছি ও আলীকদম এলাকা থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা, মারমা, বম, ত্রিপুরা ও ¤্রাে উপজাতীয়দের লোভে ফেলে রাখাইন রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) পক্ষ থেকেও নিজেদের সংরক্ষণে উপজাতীয়দের ভেড়ানোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। তাদের পক্ষে বান্দরবানের থানছি আলিকদম এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে উপজাতীয় যুবকদের দলে বেড়াতে বহুমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি তাদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করতে ওইসব এলাকার মারমা সম্প্রদায়ের কিছুসংখ্যক যুবককে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে থানছিতে প্রশাসনের পক্ষে জরুরী বৈঠক হয়েছে। সীমান্তের এপার থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনভাবেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে না যেতে আহ্বান জানানো হয়েছে। আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার উপজাতীয়দের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আরাকন আর্মির এ ধরনের তৎপরতার খবরে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়েতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানকার সেনা ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ জরুরী বৈঠক হয়েছে বলে ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। মূলত রাখাইন রাজ্যে সৃষ্ট রোহিঙ্গা ইস্যুটির সমাধান কোন পথে যাচ্ছে এবং সমাধান হবে কিনা তা এখনও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ রাখাইন থেকে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলদেশে পালিয়ে এসেছে বলে স্বীকার যেমন করেছে, তাদের প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা ছিল। গঠিত হয় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটিও। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় ৮০৩২ রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠানোর পর মিয়ানমার পক্ষ তা থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী বলে নিশ্চিত করে। শুধু তাই নয়, এ ৩৭৪ জনকে কখন ফিরিয়ে নেবে তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণও জানায়নি। এ অবস্থায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যায়। অপরদিকে, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ঢাকায় জানিয়েছেন, প্রথম দফায় প্রেরিত তালিকা নিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় দ্বিতীয় দফার তালিকার কাজ চলছে। এ তালিকা শীঘ্রই মিয়ানমার পক্ষকে হস্তান্তর করা হবে। তিনি এও নিশ্চিত করেছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে তা থেকে কতসংখ্যক তারা ফিরিয়ে নেবে এবং কখন নেবে সবই এখনও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, সংখ্যা বড় কথা নয়, প্রত্যাবাসন শুরু করাটাই লক্ষ্য।
×