ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যালট পেপার ছিনতাইকালে টাঙ্গাইলে একজন গুলিতে নিহত

স্থানীয় সরকার নির্বাচন, কোথাও শান্তিপূর্ণ কোথাও সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ মার্চ ২০১৮

স্থানীয় সরকার নির্বাচন, কোথাও শান্তিপূর্ণ কোথাও সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৩৩ স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে কোথাও শান্তিপূর্ণ হলেও আবার কোথাও ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সাগরদিঘী ইউনিয়নে ব্যালট পেপার ছিনতাইকালে পুলিশের গুলিতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও নির্বাচনে জাল ভোট দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বাকি এলাকায় ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচনসহ ৮৯ ইউপিতে, দুটি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন, ৪টি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন, ৭ পৌরসভার বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন ও স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন এবং খুলনা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১টি করে সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি কমিশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়। কেন্দ্র নিরাপত্তাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের পাঁচটি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে সাধারণ, তিনটি ইউনিয়নে উপনির্বাচন ও একটি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ১১ নং গুপ্তবৃন্দাবন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইকালে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় একজন নিহত হয়েছে। নিহতের নাম মালেক মিয়া (৪০)। সে গুপ্তবৃন্দাবন গ্রামের নেছার উদ্দিনের ছেলে। বৃহস্পতিবার ভোর চারটার দিকে সাগড়দিঘী ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে। এছাড়া পুলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানায়, সাগড়দিঘী ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতে পুলিশ ভোট কেন্দ্র পাহারা দিচ্ছিল। ভোর রাত চারটার সময় একদল দুষ্কৃতিকারী অস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স কেড়ে নিয়ে বাক্সে ব্যালট পেপার ভর্তি করতে থাকে। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ ও এলাকাবাসী তাদের বাধা দেয়। দুষ্কৃতিকারীরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে ভীতি প্রদর্শন করলে পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় আব্দুল মালেক মিয়া নামের একজন গুলিবিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনগণ কেন্দ্রের বাইরে ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কুমিল্লার বরুড়ার ৩টি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার সাধারণ নির্বাচনে ভোট নেয়া হয়। ভোট চলাকালে নৌকার কর্মীদের কেন্দ্র দখল, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, বিএনপি সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টি ও জাল ভোটের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ভোট বর্জনসহ ওই ৩টি ইউনিয়নে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী। নিজস্ব প্রতিবেদক কুমিল্লা থেকে জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে লগ্নসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী শিলমুড়ি উত্তর ইউনিয়নের জয়কামতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা ভোটার শূন্য। ভোটাররা জানান, জয়কামতা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে নৌকার কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নৌকার কর্মীরা ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এনায়েত উল্লাহ খান (হোন্ডা) সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করে বলেন, জয়কামতা কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা নৌকা ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করলেও পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল ও এসআই মোয়াজ্জেম এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। এদিকে সুনামগঞ্জ পৌরসভা উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ কালে কেন্দ্র দখল, ব্যালেট ছিনতাই ও দফায় দফায় সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে অর্ধ শত রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার ভুলেট নিক্ষেপ করে। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। পরে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনঃনির্বাচন দাবি করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন এই দুই প্রার্থী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাদের বখত, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান সাজাউর রাজা সুমন এ স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গনিউল সালাদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ফরিদপুর থেকে জানায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে এ ইউনিয়নগুলোর ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রেই নারী পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা দেয়। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে ভোট প্রদান করে। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। তবে কানাইপুর ইউনিয়নের রামখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রনকাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম এবং জাল ভোটের চিত্র দেখা দেয়। এছাড়া আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে গেরদা, মাচ্চর, চরমাধবদিয়া, ডিক্রীরচর, নর্থচ্যানেল, আলীয়াবাদ, কৈজুরী, কৃষ্ণনগর, ঈশান গোপালপুর, অম্বিকাপুর এবং কানাইপুর। এ ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৭, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১৬ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১১টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ৯০৩ জন। নিজস্ব সংবাদদাতা মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা থেকে জানায়, উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউপি উপনির্বাচনে জাল ভোট দিতে এসে তিনজন ভুয়া ভোটার গ্রেফতার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের নিজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, তেঁতুলিয়া গ্রামের লাহুত মিয়ার ছেলে আরাফাত (১৫), ইস্তু মিয়া ছেলে নুরুল হক (১৬) তেঁতুলিয়া ভূমি অফিস কেন্দ্রে, মির্জা ইস্কান্দরের ছেলে আরমান (১৭) তেঁতুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
×