ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মাহবুবুল হায়দার স্মৃতিপদক পেলেন আকরামুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩০ মার্চ ২০১৮

মাহবুবুল হায়দার স্মৃতিপদক পেলেন আকরামুল  ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রতি দায়বদ্ধ এক শিল্পী ও সংগঠক মাহবুবুল হায়দার মোহন। সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা ও গণসঙ্গীত শিল্পী। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে পালন করেছেন বাংলাদেশ গণসঙ্গীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। সেই সঙ্গে ছিলেন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি। গত ২৩ মার্চ ছিল তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে স্মরণসভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। এ বছরের মাহবুবুল হায়দার মোহন স্মৃতিপদক প্রদান করা হয় বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী আকরামুল ইসলামকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসঙ্গীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর ও পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ গিয়াস। স্বাগত বক্তব্য দেন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ঝর্না আলমগীর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মাহবুবুল হায়দার মোহন একজন মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী হিসেবে আমৃত্যু স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। তাই সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সামনের সারির সৈনিক। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যখন দেশব্যাপী প্রচার অভিযাত্রা চালায় সে সময় তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ শরীর নিয়ে তখন তিনি একটি কথা বারবার বলতেন ‘মৃত্যুর আগে যেন অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার দেখে যেতে পারি’। আজ তিনি না থাকলেও তার সেই প্রত্যাশার বাস্তবায়ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসব ॥ দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বসন্ত উৎসব। বৃহস্পতিবার ঢাবি আঙিনায় দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ (ডিইউসিএস)। উৎসবে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দুই নাট্যশিল্পী অনন্ত হীরা ও নূনা আফরোজকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) উৎসব উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ। সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বসন্ত উৎসবের আহ্বায়ক আহসান রনি। উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, বাংলাদেশে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। তাই সব সময়ই এদেশে কোন না কোন উৎসব বিরাজ করে। যদিও বসন্ত ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এটা আসলে আমাদের মাঝে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়। বসন্ত জীবনের প্রতীক। এটা ঋতুর রাজা। বসন্ত এলে সবার মনে আনন্দ বয়ে যায়। সবার মধ্যে তারুণ্য ফিরে আসে। প্রথম পর্বেও উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে বসন্ত উৎসবের বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করা হয়। দুপুরে সাংস্কৃতিক পর্বের উদ্বোধন করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। পরিবেশিত হয় পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ গীতিনাট্য, কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বিশেষ নৃত্যনাট্য, পাহাড়ী নৃত্য, লাঠিনৃত্য ও পুতুল নাচ । নাট্যদল বঙ্গলোক পরিবেশন করে ‘রূপচান সুন্দরীর পালা’। এছাড়াও ছিল ব্যান্ডদল জলের গান ও গানকবির বিশেষ সঙ্গীত পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি প্রাঙ্গণে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। এতে নাগরদোলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপসহ নানা অনুষঙ্গ যুক্ত করা হয়। শহীদ মিনারে সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ॥ ঐক্যের সুরে সাম্যের গান বাঁধার প্রত্যয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। তিন দিনের উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী ও গণসঙ্গীত’ বিষয়ক আলোচনা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহফুজা খানম, লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী, লেখক গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালী, বিশিষ্ট গীতিকার ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে সনদ ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এবারের প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রজ্ঞা তালুকদার, দ্বিতীয় হয়েছে সাফায়েত আলম চৌধুরী আর তৃতীয় হয়েছে নবনীতা ঘোষ শ্রেয়া। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে সাবরিনা জাহান শোভা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস এবং তৃতীয় হয়েছে ওয়াজিহা তাসনিম। ‘গ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে অরুণ চন্দ্র বর্মণ, দ্বিতীয় হয়েছে কমল ঘোষ এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে চন্দ্রিমা ভৌমিক রাত্রী। আর দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের যোদ্ধা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন, দ্বিতীয় হয়েছে উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ আর তৃতীয় স্থান পেয়েছে উদীচী যশোর জেলা সংসদের শিল্পীরা। আলোচনা শেষে ছিল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রজ্ঞা তালুকদার, সাবরিনা জাহান শোভা, জুটন চন্দ্র মজুমদার, মায়েশা সুলতানা ঊর্বি, দিদারুল করিম। এছাড়া দলীয় সঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসে মৌলভীবাজার উদীচী পরিচালিত ধ্রুবতারা ললিতকলা একাডেমি ও চারণ। ছিল ভারত থেকে আগত গণসঙ্গীত শিল্পী অসিম গিরি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ও এবারের উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি বিমল দে’র পরিবেশনা। এ পর্বটি সঞ্চালনায় ছিলেন মিজান সুমন ও সৈয়দা অনন্যা রহমান। আজ শুক্রবার উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন সন্ধ্যায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণসঙ্গীত শিল্পী বিমল দে।
×