ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কর্মপরিকল্পনাতে শিশু বিষয়টিকে সংযুক্ত করার আহবান

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ২৯ মার্চ ২০১৮

জাতীয় কর্মপরিকল্পনাতে শিশু বিষয়টিকে সংযুক্ত করার আহবান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরাই পাচারের শিকার হয়ে থাকে। তাই মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার অগ্রগতি তদারকিতে শিশুদের অংশগ্রহনের উপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রিভেনশন অব চাইল্ড ট্রাফিকিং থ্রো স্ট্রেংদেনিং কমিউনিটি অ্যান্ড নেওয়ার্কিং (পিএসটিসিএন)। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে শিশু পাচার প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২২’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ৬টি সংগঠন নিয়ে গঠিত পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়াম এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- কনসোর্টিয়ামের পক্ষে আয়োজক সংস্থা কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি)’র নির্বাহী পরিচালক মোসলেমা বারী, বিএনডব্লিউএলএ’র সাধারন সম্পাদক সীমা জহুর, নারী মৈত্রির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি প্রমূখ। মূল বক্তব্যে এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, ‘পাচার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের অঙ্গীকার নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয কর্তৃক মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহীত হয়ে আসছে যার ধারাবাহিকতায় ২০১৮-২২ সালের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে। সরকারের এসকল উদ্যোগ ও কর্মপ্রয়াসের মধ্যেও মানব পাচার বিষয়ে আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদন্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মানব পাচার সংক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের তালিকায় ‘দ্বিতীয় স্তরে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ তালিকায়’ রেখেছে যা আমাদের দেশের উপর বাণিজ্যিক বিধি বিধানে প্রভাবিত করতে পারে। আরআরআরআই টাস্কফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ২২০১ জন পাচার শিকার হয়েছে বলে উল্ল্যেখ করা হয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তর অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৬৭৭টি মানব পাচার সংক্রান্ত মামলা হয়েছে এবং বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৪৫১ (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পারসন ২০১৬)। সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বিষয়ে ২০১২ সাল থেকে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এ জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন কার্যক্রমে মধ্যে রয়েছে - মানব পাচার প্রতিরোধ, সচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ত বৃদ্ধি; পাচারের শিকার ও বেঁচে যাওয়া/ উদ্ধারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা; মানব পাচার অপরাধের বিচার; যৌথ অংশীদারিত্ব, অংশগ্রহণ, সমন্বয় ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় যৌথ আইনি সহায়তার ক্ষেত্র গড়ে তোলা; এবং তদারকি, মূল্যায়ন এবং প্রতিবেদন প্রদান বিষয়ক একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা ইত্যাদি কথা বলা আছে। বিএনডব্লিউএলএ’র সাধারন সম্পাদক সীমা জহুর বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২’ এবং ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিধিমালা ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে যেখানে জাতীয় মানব পাচার দমন সংস্থা, মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিল ও মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার প্রতিরোধ ও দমনে কাজ করার অঙ্গীকার রয়েছে। আমাদের দেশে অনেক আইন রয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। হাজার হাজার মামলা ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। ২০১৬ সালে প্রায় ৬০০ মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৯৮টির মামলা করা হয়েছে। তবে মাত্র একটি ঘটনার রায় হয়েছে আর সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধী শাস্তি পেয়েছে। মাত্র দুই একজনকে সাজা দিলে তো হবে না। প্রত্যেক পাচারকারীকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অনেক সময় রায়ের পরও অপরাধী রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে বাইওে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আমরা সেই খবরগুলো পাই না। আইন বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদেও একাত্মতা প্রয়োজন যেন কোন ফাঁকফোঁকর দিয়ে অপরাধী বের হতে না পারে। (সিপিডি)’র নির্বাহী পরিচালক মোসলেমা বারী বলেন, ‘পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরী। শিশুদেরকে এ বিষয় সম্পর্কে জানাতে হবে। এজন্য আমাদের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে পাচার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ক্যাম্পেইন চলমান রয়েছে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, বিয়ের পর অনেক নারীকে পাচার করে দেওয়া হয়ে থাকে। এজন্য অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে। বেশিরভাগ পাচারকারীরা পরিবারের সদস্য হয়ে থাকে।’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা পাচারের শিকার ও উদ্ধারকৃত শিশুদের জন্য টেকসই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া, মানব পাচার প্রতিরোধে ও দমন আইন ২০১২ বাস্তবায়নকালে শিশুবান্ধব পরিসর নির্মাণ করা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাঝে পরিকল্পিত সমন্বয় কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
×