ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছর নিষিদ্ধ স্মিথ-ওয়ার্নার

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ মার্চ ২০১৮

এক বছর নিষিদ্ধ স্মিথ-ওয়ার্নার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরও দু’জন আর কখনই অধিনায়ক হতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে সিএ। আর ঘৃণিত পরিকল্পনা যিনি মাঠে বাস্তবায়ন করে ঝড় তুলেছেন, সেই ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে ৯ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ওদিকে সিএ’র এই ঘোষণার পরপরই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) থেকেও স্মিথ ও ওয়ার্নারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। টেস্টের তৃতীয়দিনের শেষ বিকেলে পকেট থেকে শিরিশ কাগজ বের করে বল ঘষামাজা করেন ব্যানক্রফট। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে খোদ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক শাস্তি হিসেবে স্মিথকে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল)। এবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) বিশেষ তদন্ত কমিটি কর্তৃক দোষী প্রমাণিত হয়েছেন স্মিথ, ওয়ার্নার ও ব্যানক্রফট। জোহানেসবার্গে সংবাদ মাধ্যমকে সিএ’র প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড জানিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সিএ’র আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদের ব্যাপারে জানান হবে। আইসিসি এর আগে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয় স্মিথকে। ব্যানক্রফট পান তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট। তিন ক্রিকেটার এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে লম্বা সময়ের জন্য বাইরে চলে গেলেন। শাস্তি পাওয়া ক্রিকেটাররা অবশ্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ও অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হলেও ক্লাব পর্যায়ে খেলতে পারবেন তারা। তবে এ বছরের আইপিএলে খেলা হচ্ছে না স্মিথ-ওয়ার্নারের। আইপিএলে রাজস্থান রয়ালসের অধিনায়কত্ব থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্মিথ। বুধবার সকালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানান ওয়ার্নারও। কিন্তু সিএ তাদের এক বছর নিষিদ্ধ করার পর আইপিএল চেয়ারম্যান রাজিব শুক্লা এই দু’জনকে এ বছরের আইপিএলে খেলতে না দেয়ার ঘোষণা দেন। শুক্লা বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড স্মিথ ও ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। অসি বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আমরাও এবারের আইপিএলে এই দু’জনকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ টেম্পারিং বিতর্কের সূত্রপাত কেপটাউন টেস্টের তৃতীয়দিনে টিভি ফুটেজ থেকে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে পকেট থেকে হলুদ এক টুকরো কাপড়ের মতো কিছু বের করে বলে ঘষতে চেয়েছিলেন ব্যানক্রফট। পরে সেটি লুকিয়ে রাখেন ট্রাউজারের ভেতর। দিনের খেলা শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টেম্পারিংয়ের চেষ্টার কথা স্বীকার করেন স্মিথ ও ব্যানক্রফট। স্মিথের দাবি, দলের লিডারশিপ গ্রুপ থেকেই টেম্পারিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে কোচ ড্যারেন লেহম্যান এর সঙ্গে জড়িত নন। সিএ’র তদন্তেও নির্দোষ লেহম্যান তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। ওদিকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়ার দিন রাতেই নাকি মদ-পার্টিতে মেতে উঠেছিলেন ওয়ার্নার। দলের ক্রিকেটারদের অভিযোগ- বল টেম্পারিংয়ের ঘটনার খলনায়ক ওয়ার্নার টিম হোটেলে থাকলে যে কোন মুহূর্তে তাদের সঙ্গে ঝামেলা বেধে যেতে পারে। কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর থেকেই নাকি ওয়ার্নার বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। দলের ক্রিকেটারদের হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ওয়ার্নারই ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয়া এই টেম্পারিংয়ের মূল হোতা বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী দুটি পত্রিকা। কিছুদিন আগে ঘরের মাটিতে ইংলিশদের হারিয়ে এ্যাশেজ ট্রফি পুনরুদ্ধার করে অসিরা। ওই সিরিজেই হাতে বিশেষ ধরনের টেপ লাগিয়ে ফিল্ডিং করেন ওয়ার্নার। এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দ্বিতীয় টেস্টেও কুইন্টন ডি’ককের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা-ধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। ওদিকে ২-১এ পিছিয়ে থাকা সিরিজে শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া শেষ টেস্টে নেতৃত্ব দেবেন টিম পেইন। তাকেই অন্তর্বর্তী অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর কলঙ্কিত তিন ক্রিকেটারের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন ম্যাট রেইন শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও জো বার্নস।
×