ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হংকং সফরে ছোটন, মারিয়া ও আঁখির লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৯ মার্চ ২০১৮

হংকং সফরে ছোটন, মারিয়া ও আঁখির লক্ষ্য

রুমেল খান ॥ গত ডিসেম্বরে নিজেদের মাটিতে সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এই সাফল্যের মূল রূপকার ছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। এছাড়া অধিনায়ক মারিয়া মান্দা এবং সহ-অধিনায়ক আঁখি খাতুনের নামটাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আঁখি হয়েছিল ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল ফেবারিট হিসেবেই এবং শিরোপা জয়ের মানসে রওনা হয় হংকংয়ে। সেখানে তারা খেলবে চারজাতি আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে। রওনা হবার আগে কোচ, অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়কের সঙ্গে একান্ত আলাপনে জনকণ্ঠ চেষ্টা করেছে টুর্নামেন্টে তাদের লক্ষ্য, প্রস্তুতি, সমস্যা নিয়ে বিশদভাবে জানতে। আঁখি খাতুন জনকণ্ঠকে জানায়, ‘ডিসেম্বরে সাফ খেলার পরে আমরা বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওখানে ১০ দিন ছুটিতে ছিলাম। বাড়ি থেকে আসার পর আমরা প্র্যাকটিসের মধ্যেই ছিলাম। সবাই একসঙ্গে প্র্যাকটিস করছি। আমরা হংকং যাচ্ছি একটা ভাল রেজাল্টের জন্য। ভাল খেলার চেষ্টা করব।’ আঁখি আরও যোগ করে, ‘মালয়েশিয়ার জুনিয়র টিমের সঙ্গে আমরা কখনই খেলিনি। সিনিয়র টিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সবাই শক্তিশালী টিম, আমরাও শক্তিশালী। আসলে খেলার আগে সবাই শক্তিশালী। যখন জিতব তখন আমরাই শক্তিশালী।’ নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে আঁখির ভাষ্য, ‘একজন ডিফেন্ডার হিসেবে আগে আমি দলকে রক্ষা করব। পরে নিজের খেলা খেলব। সাফে ভাল খেলেছিলাম, চেষ্টা করব সেখানেও ভাল খেলতে।’ অধিনায়ক মারিয়া মান্দার অভিমত, ‘ভাল কিছু করতে হলে কষ্ট করতে তো হবে। আমরা অনেকদিন ধরে কষ্ট করেছি। কঠোর অনুশীলন করেছি। সিনিয়রদের সঙ্গে একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। সেই ম্যাচগুলো খেলার পরে আমাদের যে জায়গাগুলোতে ভুল ছিল সেগুলো সংশোধন করেছি। আমরা এখন ভাল পর্যায়ে আছি। চেষ্টা করব হংকংয়ে গিয়ে ভাল রেজাল্ট করার জন্য। যেভাবে অ-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি, তেমনিভাবে হংকংয়ে গিয়েও এমন কিছুর জন্য চেষ্টা করব।’ মারিয়া অবশ্য এর আগে মালয়েশিয়া সিনিয়র টিমের সঙ্গে খেলেনি। তখন তার জেএসসি পরীক্ষা ছিল। তবে ইরানের সঙ্গে ঢাকায় এবং নেপালে গিয়েও খেলেছে। কিছুদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলায় কোন সমস্যা হবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে মারিয়ার জবাব, ‘ম্যাচ হয়নি ঠিক আছে। তবে এখানে সিনিয়রদের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ হয়েছিল। সিনিয়র দলও ভাল। হংকংয়ে আমাদের টার্গেট থাকবে তিনটি ম্যাচই জেতা।’ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে মেয়েরা কঠোর অনুশীলন করছে। খেলতে যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল আমরা সবটুকুই নিয়েছি। টুর্নামেন্ট খেলার জন্য মেয়েরা পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত। আমরা সাফে খেলেছিলাম সাউথ এশিয়ান দলের সঙ্গে। এখানে আসিয়ান এবং সেন্ট্রাল এশিয়া দলগুলোর বিপক্ষে খেলব। আমি মনে করি সবাই শক্তিশালী দল। তবে এই মুহূর্তে আমরাও শক্তিশালী দল। এখানে ইরান খেলবে। আমরা তাদের সঙ্গে আগেও খেলেছি এবং জিতেছিও। মালয়েশিয়ায় জুনিয়র টিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, তবে আমরা সিঙ্গাপুরে টুর্নামেন্টে সিনিয়র টিমের সঙ্গে খেলেছি। আর হংকংয়ের সঙ্গে কখনই খেলিনি। তবে আশাকরি সবগুলো টিমই সমমানের হবে। সাফে যেভাবে খেলেছে আশাকরি হংকংয়ে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে মেয়েরা ভাল করবে।’ গত ডিসেম্বরে সাফ অ-১৫ চ্যাম্পিয়শিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের প্রায় সেই দলটিই যাচ্ছে হংকংয়ে। এ প্রসঙ্গে কোচ ছোটন বলেন, ‘বয়সের জন্য ফরোয়ার্ড মারজিয়া বাদ পড়েছে। হংকংয়ে যেহেতু দু’জন গোলরক্ষকের বেশি নেয়া যাবে না তাই সাগরিকাকে বাদ দিতে হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকার পারভীন সুলতানাকে পারফর্মেন্সের জন্য দলে রাখা হয়নি। এছাড়া অ-১৫ সাফে খেলা বাকি সবাই আছে।’ হংকংয়ের টুর্নামেন্টে যদিও শুরুতে ২৩ জন ফুটবলার থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে দল কাঁটছাট করতে হয় ছোটনকে। ছোটন আরও যোগ করেন, ‘আমাদের টার্গেট হলো ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা। প্রতিটি ম্যাচের জন্য আলাদা পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ম্যাচ বাই ম্যাচ জেতার জন্য নামব। আশাকরি প্রতিটি ম্যাচ জিতব।’ বাংলাদেশকে খেলতে হবে প্রতিদিনই। এটা কী সমস্যায় ফেলবে না? ‘না। কারণ এই সমস্যা তো সব দলেরই হবে। কাজেই এ নিয়ে ভাবছি না।’ ছোটনের ব্যাখ্যা। হংকংয়ে খেলা হবে ঘাসের মাঠে। তাহলে এতদিন মেয়েদের টার্ফে অনুশীলন করানো হলো কেন? ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাসে অনুশীলন করার সম্ভবনা আর নেই। কারণ দল নিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি ২৮ মার্চ রাতে। বাংলাদেশ যুব গেমস এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। মাঠে প্রচুর গর্ত হয়ে গেছে। আর এ জন্যই ঘাসের মাঠে অনুশীলন করানো সম্ভব হয়নি। এখন মাঠকে অনুশীলনের উপযোগী করতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময় আর আমার হাতে নেই।’ ছোটনের ব্যাখ্যা। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ফলে বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফেই দলকে অনুশীলন করাতে বাধ্য হয়েছি। তবে ঘাসের মাঠে অনুশীলন করাতে পারলে ভাল হতো।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ, বুয়েটের মাঠ, আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাঠÑ এগুলো তো সব ঘাসের মাঠ। এগুলোর যে কোন একটিতে কী মেয়েদের অনুশীলন করানো যেত না? ‘দেখুন, প্রথম তিনটি মাঠই বাফুফে থেকে অনেক দূরে। ওখানে যাতায়াতের বিশাল ঝক্কি আছে। জানেনই তো, ঢাকা শহরে যানজট কেমন। তাছাড়া ওগুলো সব উন্মুক্ত মাঠ। কাজেই উন্মুক্ত মাঠে এতগুলো মেয়েকে নিরাপত্তা দেয়ারও বিষয় আছে। তবে রাজারবাগের মাঠটা সবচেয়ে কাছে ছিল। এখানে অতীতেও মেয়েদের অনুশীলন করিয়েছি। কিন্তু এখন সমস্যা হলো ওখানে পুলিশবাহিনীর প্রতিদিন প্রায় সারাক্ষণই বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে। কাজেই আমাদের সুবিধা ও সময়মতো ওই মাঠটি ফাঁকা পাওয়া খুবই মুশকিল। কাজেই ওখানেও প্র্যাকটিস করানো সম্ভব হয়নি।’ দলের সবার ফিটনেস খুবই ভাল পর্যায়ে আছে বলে জনকণ্ঠকে জানান ছোটন, ‘আমি সন্তুষ্ট। কোন ইনজুরিজনিত সমস্যাও নেই।’ ঘাসের মাঠে অনুশীলন করানোর ঘাটতি থাকলেও ছোটন অন্য একটা বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট, ‘ঘাসের মাঠে প্র্যাকটিস না হলেও মেয়েরা টার্ফে তো প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মধ্যেই ছিল। আমি মনে করি, ঘাসের মাঠে প্র্যাকটিস না হলেও এতে দলের পারফর্মেন্সে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কারণ দলে অনেক স্কিলফুল প্লেয়ার আছে। তারা ঘাসের মাঠে ঠিকই ভাল খেলতে পারবে।’
×