মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে মিটার রিডারদের হয়রানির পর এবার শুরু হয়েছে পিডিবির অদ্ভুত মিটারের হয়রানি। এক বছরে ১২ বার অভিযোগের পরও পিডিবি এ ধরনের মিটার সরিয়ে নিচ্ছে না। নষ্ট মিটার না সরিয়ে উল্টো মামলার হুমকি দিয়েছেন খুলশীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আদম আলী। নগরীর খুলশী, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ও পাহাড়তলী বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় এ ধরনের মিটারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ও পাহাড়তলী বিতরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন, প্রথম অবস্থায় প্রিপেইড মিটার আশার আলো দেখালেও এখন তা আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে।
চীনের তৈরি এসব প্রিপেইড মিটার খুলশী বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় গত বছরের এপ্রিল মাসে লাগানো শুরু হয় যা অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলমান ছিল। অভিযোগ উঠেছে, মিটারে ৫০ টাকার বেশি বকেয়া রাখা যায় না সেখানে খুলশী বিতরণ কেন্দ্রের একটি প্রিপেইড মিটারে (নং-০১০১১০০৩৪৩১২) ২৫ হাজার টাকা মাইনাস কিভাবে উঠে? বিদ্যুত ব্যবহার না করলে প্রিপেইড মিটারে কোন ইউনিট দেখানোর কথা নয় কিন্তু প্রতিনিয়ত তা কেন দেখাচ্ছে। মিটার লাগানোর এক বছরেরও বেশি সময় ব্যবহার না করেই মিটারে রিডিং দেখাচ্ছে। এদিকে, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ স্টেডিয়াম শাখার আওতায় থাকা জামালখান এলাকার আব্দুল কালাম আজাদ নামের হোল্ডিং নং-৭৯/এ ভবনের প্রিপেইড মিটারে (নং-০১০১১০০৭৩৬১২) সাড়ে ৬ হাজার টাকা মাইনাস দেখায় গত ডিসেম্বরে। পরের মাসে তা ১০ হাজার পেরিয়ে যায়। এদিকে, পাহাড়তলীস্থ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় একটি মিটারে ৩৫ হাজার টাকা মাইনাস বিল দেখানোয় ২০ হাজার টাকায় রফা করে নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তা নষ্ট দেখিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের আওতায় প্রিপেইড মিটার (নং- ০১০১১০০৩৪৩১২) স্থাপন করা হয়েছে গত বছরের ৬ এপ্রিল। মিটার স্থাপন করতে আসা চায়না মিটার কোম্পানির সুপারভাইজার মাসুম এই মিটারে অগ্রিম ১০০ টাকা দিয়ে মিটারটি কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চালু করেন। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল ১০০০ টাকা মিটারে রিচার্জ করা হয় খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৪র্থ তলায় থাকা কাউন্টার থেকে। কিন্তু ঐ ফ্ল্যাটে কোন ব্যবহারকারী না থাকার পরও মাত্র ৮ দিনের মধ্যেই এই মিটারে মাইনাস ২০০ টাকা বিল দেখায়। বিষয়টি গত বছরের ৯ মে খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৪র্থ তলার অভিযোগ কেন্দ্রে থাকা জনৈক পার্থের কাছে থাকা রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা হয় মিটার ও মোবাইল নম্বরসহ। তাৎক্ষণিক বিষয়টি চায়না মিটার কোম্পানির দায়িত্বে থাকা সিনিয়র রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুস সাকুরকে জানানো হয়। তিনি তাজুল নামের এক টেকনিশিয়ানকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন। পরদিন তাজুল ৫০০ টাকা টেক্সি ভাড়া অভিযোগকারীর কাছ থেকে আদায় করে কিন্তু কোন ধরনের সমাধান না দিয়ে প্রকৌশলী সাকুর অবহিত করবেন বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ৩/৪ মাস অপেক্ষার পরও কোন ধরনের সুরাহা না পাওয়ায় আবারও সাকুরের সঙ্গে সাক্ষাত করা হয়। আবারও জনৈক পার্থ তার রেজিস্টারে নথিভুক্ত করে সাকুরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে বলেন। সাকুরের সঙ্গে সাক্ষাত করার পর আবারও তাজুলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কয়েকদিন পর তাজুল আবার মিটার দেখে শুনে টাকা পয়সার বিনিময়ে সমাধানের প্রস্তাব দেয়। এতে অভিযোগকারী রাজি না হয়ে তাজুলকে কোনমতে ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে বিদায় করেন। এ সময় মিটারে মাইনাস ১৪ হাজার টাকা দেখাচ্ছিল। আবারও অভিযোগ করা হলে সাকুর চায়না কোম্পানির প্রতিনিধি প্রকৌশলীর সঙ্গে বিষয়টি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মিটার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন বলে অভিযোগকারীকে বিদায় করেন। এরপর গত বছরের ২৬ অক্টোবর আবারও অভিযোগ খাতায় লিপিবদ্ধের পর সাকুর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে এবার তাজুলকে অভিযোগকারীর বাইকে চাপিয়ে দেন। এরমধ্যে রয়েছে মিটারে বিলের পরিমাণ ২৪ হাজার ১৬৪ টাকা ৮০ পয়সা, মিটারের কিলোওয়াট ব্যবহার, আউটপুট বিচ্ছিন্নের সময় সকাল ১০টা ৫২ মিনিট ০৮ সেকেন্ড ও বিচ্ছিন্নের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৭। উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে গত বছরের মে, ৩ জুন, ২৩ জুন, ৩১ জুলাই, ২১ আগস্ট, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২৫ অক্টোবর, ২৭ নবেম্বর, ২৬ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ২২ মার্চ রেজিস্টারে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কোন ধরনের লিখিত আবেদন করতে বলা হয়নি। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চীনের হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানির ২০১৬ সালের হেক্সিং ১১০-কেপি মডেলের, আইপি-৫৪, মডেলের মিটার আমদানি করেছে সরকার। এক ফেইজ ও ২ তারের ২৩০ ভোল্টের ৫ এম্পেয়ার ৫০ হার্ডস, ধারণক্ষমতা ২ দশমিক ৫ কেএ/১০এমএস। এসব মিটারের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। প্রায়ই মিটার লক হয়ে যায়, মিটার লক হলে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকায় শাট ডাউন (বন্ধ করা) না দেয়া পর্যন্ত পুনরায় ওই মিটারের ব্যবহারকারীরা আলো দেখতে পান না। মিটার লক হয়ে গেলে জরিমানা দিতে হয়।
মিটারে মাইনাস বিল প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেনকে অবহিত করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ল্যাপটপে পিডিবির সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। যা সহকারী প্রকৌশলী আশিষ সাহেবকে দায়িত্ব দেন। এক পর্যায়ে হেক্সিন কোম্পানির তদারকী প্রকৌশলী সাকুর সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে জানতে পারেন তিনি বিয়ের ছুটিতে রয়েছেন। তবে তিনি মুঠোফোনে সাকুর সাহেবকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে গত ২২ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রকৌশলী সাকুর সাহেব অভিযোগকারীকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু এর আগের রেজিস্টারে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী লিখিত অভিযোগ ছাড়া মানছেন না।
প্রশ্ন উঠেছে তিনি গত মাসেও কোন লিখিত অভিযোগ দিতে বলেননি গ্রাহককে। এদিকে, সাকুর আরও জানান, চীনা প্রতিনিধিদল অর্থের বিনিময়ে এসব সমস্যা সমাধান করছেন। এমন অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে পাহাড়তলী এলাকায়। ৩৫ হাজার টাকার মাইনাস বিল ২০ হাজার টাকায় সমাধা করা হয়েছে এমন তথ্য সাকুরের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।