ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাব গেছে মন্ত্রণালয়ে

সিসি টিভির আওতায় আসছে দেশের থানাগুলো

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৯ মার্চ ২০১৮

সিসি টিভির আওতায় আসছে দেশের থানাগুলো

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের থানাগুলোয় ক্লোজ সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসিয়ে পুরো পুলিশ সিস্টেমকে এর আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দফতর। দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জনগণের হয়রানি রোধ, পুলিশের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত, পুলিশের জনসেবার মানোন্নয়নসহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করার জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে এসব প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পুলিশের নানাবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করে তা সমাধানের দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে প্রস্তাবে। পুলিশের প্ল্যানের আওতায় এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে লজিস্টিক সাপোর্ট সেবার মানোন্নয়নে প্রয়োজনে সারাদেশের পুলিশ সিস্টেমকে সিসিটিভির আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা তা সক্রিয় বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা এই প্রস্তাব খুব শীঘ্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিবেচনা করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) অফিস থেকে জেলাধীন প্রতিটি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষকে সিসিটিভির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের থানাগুলোতে ডিউটি অফিসাররা কাউকে অহেতুক বসিয়ে রেখে অভিযোগকারী বা দর্শনার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হবে সিসিটিভির ক্যামেরায়। এতে পুলিশের সেবার মানোন্নয়ন হবে, মানুষজন উন্নত সেবা পাবে, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধ দমনের কাজে গতি ও সহায়তা হবে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের থানা পুলিশকে আরও গতিশীল করতে ৫৯২টি থানাতেই আরও যানবাহন প্রয়োজন। কারণ থানাগুলোর জনবলের তুলনায় যে যানবাহন রয়েছে তা অপ্রতুল। এতে পুলিশের কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে, যা উন্নত জনসেবার জন্য অন্তরায়। পুলিশের ডিউটির জন্য প্রায়শ পাবলিকের কাছ থেকে গাড়ি রিকুইজিশন কিংবা অনেক সময়ে বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ ধরনের ডিউটির আওতায় সরকারের কোন টিএডিএ নেই। আনুষঙ্গিক খরচাদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেই বহন করতে হয়। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাতে যেখানে যাকে পান ধরে থানায় নিয়ে গ্রেফতার করতে বাধ্য হন। ফলে থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ না করা পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই থানা পুলিশের অনৈতিক কর্মকা- বন্ধ করা যাবে না বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশের মাঠ পর্যায়ের যানবাহন, আবাসন, যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ না করা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে শতভাগ সততা ও নিষ্ঠা আশা করা যায় না। এজন্য এসব সমস্যার সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অপরিহার্য। প্রস্তাবে বলা হয়েছে থানাগুলোতে যেতে অনেকের অনীহার কারণ হচ্ছে থানাগুলোর পরিবেশ অনুন্নত ও ভয়ভীতি। থানাগুলোতে যত্রতত্র ময়লা, বসার স্থান নেই, পুলিশকে জনগণের বন্ধু হওয়ার সহায়ক পরিবেশের অভাব। বেশিরভাগ থানাতেই মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট বা হাজতখানার ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও লজিস্টিক সাপোর্ট সরবরাহ করার পর থানাগুলোকে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের আওতায় ৪৯১টি থানাকে অত্যাধুনিক ভবন গড়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দেশের ১০১টি থানাকে অত্যাধুনিক ভবনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় ওপেন হাউজ ডে নিয়মিত ব্যবস্থা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রস্তাবে। এই প্রস্তাবের আওতায় প্রতিমাসে একটি থানা ভিজিট করবেন জেলার পুলিশ সুপার। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে তে পুলিশ সুপার ও জনসাধারই থানায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার বাদীা বক্তব্য শুনবেন। এতে তারা অকপটে সমস্যার কথা পুলিশ সুপারকে জানাতে পারবে। মামলার বাদীর কাছ থেকে শোনার পর পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে বসবেন। মামলার অগ্রগতির অবস্থা কোন গাফিলতি থাকলে তার জন্য জবাবদিহিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিবেন পুলিশ সুপার। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নিতে গড়িমসি করেন। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ওই ওসিকে সাসপেন্ড করার কথাও বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের আইজি হিসাবে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশকে আরও গণমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছেন। পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরে তা সমাধানের পথের দিকনির্দেশনা পেতেই এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেশের জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, থানাগুলোতে গিয়ে যাতে আর কাউকে কখনও যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
×