ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

রাশিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ॥ মে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৯ মার্চ ২০১৮

রাশিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ॥ মে

রাশিয়ার পক্ষ থেকে অব্যাহত নিরাপত্তা হুমকির প্রেক্ষিতে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো কর্র্তৃক রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মঙ্গলবার দেশটির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডে স্বপক্ষত্যাগী একজন সাবেক রুশ গুপ্তচরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। -দি গ্লোব এ্যান্ড মেইল বিবিসি। ইংল্যান্ডের সলসবেরিতে নিভৃতচারী সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা ইউলিয়াকে বিগত ৪ মার্চ মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ নোভিচক দ্বারা হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২২টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র বহু রুশ কূটনীতিককে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। মস্কোর বিরুদ্ধে গৃহীত এ ধরনের ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ স্থায়ুযুদ্ধের সময় টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও দৃষ্টিগোচর হয়নি। রাশিয়া স্ক্রিপালের ওপর হামলায় তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এটিকে পাশ্চাত্য দেশগুলোর উস্কানিমূলক তৎপরতা বলে অভিহিত করে তাদের কূটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। ব্রিটেনের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষস্থানীয় পাশ্চাত্য দেশগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ব্রিটেনের প্রতি জোরালো সমর্থন জ্ঞাপন মে’র টেরেসার কূটনীতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা, তার দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোট ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের সময় তার পাশে এতগুলো দেশ থাকবে কিনা- এ নিয়ে টেরেসার যথেষ্ট সংশয় ছিল। মঙ্গলবার লন্ডনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে মে বলেন, শুধু যুক্তরাজ্যের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি ব্যবস্থা নেয়নি, উদ্ভূত হুমকিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে বলেই নিয়েছে। “ওই বেপরোয়া আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল গতকাল (সোমবার)। যদিও আরও করার বাকি আছে। রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের ও আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের।” পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুসরণ করে ন্যাটো জোট ও তাদের ব্রাসেলসের সদর দফতর থেকে রাশিয়া মিশনের সাত কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে, বন্ধ রেখেছে নতুন তিনজনের নিয়োগ প্রক্রিয়াও। এর ফলে ন্যাটো মিশনে রুশ কূটনীতিকের সংখ্যা ৩০ থেকে ২০ এ নেমে এলো। “এটা রাশিয়াকে স্পষ্ট বার্তা দিল যে মূল্য দিতে হবে” বলেন ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোল্টেনবার্গ। আয়ারল্যান্ড ও মলদোভাও এদিন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করে ইউরোপীয় জোটের অন্য সদস্য দেশগুলোর নেয়া পদক্ষেপে সামিল হয়। স্ক্রিপাল হত্যাচেষ্টায় ৬০ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মস্কোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বহিষ্কৃত কূটনীতিকদের মধ্যে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত ১২ গোয়েন্দা কর্মকর্তাও আছেন। একই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র সিয়াটলের রাশিয়ান কনসুলেট বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ট্রাম্প ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে টেলিফোনে রাশিয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিন নেতা যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় কূটনীতিক বহিষ্কারসহ পশ্চিমের একাট্টা প্রতিক্রিয়ায় সমর্থন জানান। ন্যাটোর একতা নিয়ে যাদের সন্দেহ ছিল তাদের প্রতি যৌথ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা একটা বার্তা দিয়েছে জানিয়ে এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ব্রেক্সিট পরবর্তী আগাম নির্বাচনে টেরেসা মেÑ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নিজ দলের ভিতরেই তিনি যেন কর্তৃত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন।
×