ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়মিত মহড়া বন্ধ করতে হবে

উন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৯ মার্চ ২০১৮

উন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন চীনে চার দিনের সফর শেষ করেছেন। এই সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচানা হয়েছে। উন বলেছেন, তিনি পরমাণু কর্মসূচী ত্যাগ করতে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি আছেন। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে সহযোগিতার মনোভাব প্রত্যাশা করেছেন। দেশগুলোকে তাদের নিয়মিত বার্ষিক মহড়া বন্ধ করতে হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বিবিসি, চ্যানেল এশিয়া ও স্টার অনলাইন। কিম জং উন যে চীনে গেছেন, তৃতীয় পক্ষের বরাত দিয়ে সে খবর প্রকাশিত হলেও চীন বা উত্তর কোরিয়া কোন দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। দু’দিন পর আন্তর্জাাতিক গণমাধ্যমের জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার বেজিং বলেছে, রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বেসরকারী সফরে চীনে ছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম। উত্তর কোরিয়াও কিমের চীন সফরের কথা জানিয়েছে বলে বিবিসি খবর দিয়েছে। কিম উন ২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। এরপর এই প্রথম তার বিদেশ সফরের কথা জানা গেল। এর মধ্য দিয়ে দুই মিত্র প্রতিবেশী দেশ আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছে। পাশাপাশি কোরিয়া উপদ্বীপেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথ উন্মোচিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী থেকে বিরত হওয়ার কোন ইঙ্গিত দেননি। বরং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি এই আলোচনার সুযোগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাসের চেষ্টা স্বল্প স্থায়ী হতে পারে। কিম জং উন তার স্ত্রী রি সোল জুকে নিয়ে রবিবার বেজিং পৌঁছান এবং মঙ্গলবার বিকেলে বেজিং ত্যাগ করেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের রাজধানী বেজিংয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কিমের ‘সফল আলোচনা’ হয়েছে। আলোচনায় কিম শিকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, শর্ত সাপেক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিম বলেছেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যদি শুভ মনোভাব নিয়ে আমাদের উদ্যোগে সাড়া দেয়, শান্তি প্রচেষ্টায় প্রগতিশীল ও যুগপৎ পদক্ষেপ নিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার একটি বাতাবরণ গড়ে তোলে তাহলে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুটির সমাধান হতে পারে।’ চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মিত্রতার উন্নতিতে এ সফর ‘একটি মাইলফলক’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি উত্তর কোরিয়ায় ফিরতি সফরের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। চীন উত্তর কোরিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক মিত্র। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরিকল্পিত শীর্ষ বৈঠকের আগে দেশটি বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নিবে এমন ধারণা অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল বিশ্লেষকরা আশা প্রকাশ করেছিলেন। এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে এবং মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বেজিং সফরকে ওই বৈঠক দুটির জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রস্তুতি একটি লক্ষ্যণীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা। উত্তর কোরীয় নেতার এই সফরের বিষয়ে মঙ্গলবার চীন ট্রাম্প প্রশাসনকে অবহিত করেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চলা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও বৈরিতার মধ্যে গত মাসে কিমের পাঠানো আলোচনা প্রস্তাব গ্রহণ করেন ট্রাম্প। যদি সম্মেলন সফল হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার কোন নেতার সঙ্গে ঘটনা এটাই হবে প্রথম বৈঠক। উত্তর কোরিয়া গত বছর দুটি আইসিবিএমের সফল পরীক্ষা চালায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পুরো মূল ভূখ- এখন তদের পরমাণু ক্ষমতার নাগালের মধ্যে চলে এসেছে বলে পিয়ংইয়ং দাবি করেছিল। এছাড়া গত পুরো বছর জুড়েই পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে কমিউনিস্ট শাসিত একঘরে দেশটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সরগরম করে রাখে।
×