ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ মার্চ ২০১৮

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কালজয়ী অমর কাব্যরচনার সুর ‘সুদূর সমুদ্দুর প্রশান্তের বুকে হিরোশিমা দ্বীপে আমি শঙ্খচিল।’ এর সঙ্গে অসাধারণ নৃত্যশৈলীতে পুরো শহীদ মিনার চত্বরে বইছে আনন্দের ঢেউ। মঞ্চকে আবিষ্কার করা হয়েছে জাপানের হিরোসীমার দ্বীপ। পৃথিবীর মানুষ ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট চমকে উঠল একটি মাত্র বোমার আঘাতে। জাপানের হিরোসীমা দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষ এক নিমিষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। এই ধ্বংসলীলার সাক্ষী এক শঙ্খচিল। সে ভালবাসত সাগরিকাকে অর্থাৎ সাগরকন্যাকে। সে জাপান দ্বীপবাসী। শঙ্খচিল সংগ্রামী চেতনার প্রতীক। তার সংগ্রামী ডানার ঝপটায় উঠলো ঝড়। সে সেই ডানা মেলে দিল জাপান থেকে আফ্রো-এশিয়া-ল্যাতিন আমেরিকা। পরে সে বাসা বাঁধল ভিয়েতনামের ক্রুয়োংশাং পহাড়ে গেরিলা মুক্তিবাহিনীর মধ্যে। এটি প্রয়াত হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কালজয়ী অমর কাব্যরচনা। তাই নিয়ে গাথা হয়েছে একটি রূপকধর্মী নৃত্যালেখ্য ‘শঙ্খচিল’। বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী আয়োজিত সত্যের সেন গণসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় নৃত্যনাট্যটি। এর আগে ‘ঐক্যের সুরে সাম্যের গান বাঁধার প্রত্যয়’ স্লোগানে তিন দিনব্যাপী ‘সত্যের সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা ২০১৮’ উদ্বোধন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। উৎসব উদ্বোধনের সময় ইদু বলেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে সত্যেন দা’র সঙ্গে আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় মগ্ন ছিলাম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এখন দেশে ও বিদেশে হাজার হাজার সদস্য এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আমি এর সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। জয় হোক উদীচীর। এরপর সংগঠনের শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দলীয় গান ‘আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে যদি ভাবি কোটি জনতার মুখ দেখব’। পরে গণসঙ্গীতের কিংবদন্তি পুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অমর সৃষ্টি ‘শঙ্খচিল’ গানের নৃত্যরূপ পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের নৃত্যশিল্পীরা। এর নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নৃত্য গবেষক, পরিচালক ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়। এরপর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণসঙ্গীতশিল্পী বিমল দে। সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় আলোচনা। বক্তারা বলেন, বিশ্বায়নের নামে সঙ্গীতের সাম্যের সুর যেন কোথাও উধাও হয়ে গেছে। আজ রাজনীতিতে সংস্কৃতি নেই-সংস্কৃতিতে রাজনীতি নেই। সেই যে যুগলবন্দী যুগ এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন। অন্য সঙ্গীতের সঙ্গে গণসঙ্গীতের কোন বৈরিতা নেই। আমাদের জীবন শুরু হয়েছিল যে গণসঙ্গীত দিয়ে সেই সঙ্গীত আর শুনতে পাই না। অনেক লড়াইয়ের ফসল আমাদের এই দেশ। মানুষের সত্যিকারের লড়াইয়ে এই গণসঙ্গীতের ভূমিকা অনন্য। আমরা একইসঙ্গে আবার সেই মিছিলে সমবেত হতে চাই। যারা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা এ দেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। সব মানুষকে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে এক করতে চাই। তাহলে আমরা বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়তে পারব। আলোচনা শেষে প্রথিতযশা গণসঙ্গীত শিল্পীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদ প্রকাশিত সংকলন ‘গণসঙ্গীতের গণনায়কেরা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়। পরে গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীদের হাতে সনদ ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অতিথিরা। সবশেষে ছিল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের গণসঙ্গীত পরিবেশনা। এর আগে সকালে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে আলোচনা এবং সন্ধ্যায় থাকবে আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায় একক ও দলীয় গণসঙ্গীত। উৎসবের তৃতীয় দিন আগামীকাল শিশু একাডেমি মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে শেষদিনের আয়োজন। ‘স্থপতি ফজলুর রহমান খান: জীবন ও কীর্তি’ শীর্ষক আলোচনা ॥ স্থপতি ও পুরকৌশলী ফজলুর রহমান খান। তিনি দেশের কয়েকজন মানুষ শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাঙালীর অবস্থান বিশ্বমানে তুলে দিয়ে গেছেন, তাদেরই একজন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন আমেরিকার শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের (বর্তমানে উইওলস টাওয়ার) নক্সা প্রণয়ন, জন হ্যানকক সেন্টারের নক্সা, সৌদি আরবের-জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও হজ টার্মিনালের ছাদ কাঠামো এবং মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নক্সাকারক। সারাবিশ্বে কাঠামো প্রকৌশলের ‘আইনস্টাইন’ হিসেবে খ্যাত কৃতি এই বাঙালীর বিগত ২৬ মার্চ ছিল প্রয়াণবার্ষিকী। তার এ প্রয়াণবার্ষিকী স্মরণে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করে ‘স্থপতি ফজলুর রহমান খান: জীবন ও কীর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা। বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নগরবিদ ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ এবং ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেডের স্থপতি পরিচালক ইকবাল হাবিব। এছাড়াও এ অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে উপস্থিত থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরও এফআর খানের সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। আলোচনায় অধ্যাপক আদনান মোর্শেদ বলেন, ১৯২৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়কালে জন্ম নেন ফজলুর রহমান খান। তিনি স্কাইস্ক্র্যাপার ডিজাইনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। একটি ভবন যখন আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে, তখন তার কাঠামোর ওপরে পাশ থেকে একটা চাপ আসে। উচ্চতা যত বাড়তে থাকে, মূলত বাতাস কিংবা ভূমিকম্পভিত্তিক এই চাপও তত বাড়তে থাকে। এই চাপ সহ্য করার জন্য সুউচ্চ ভবন তৈরিতে, ভিত্তি থেকে শুরু করে কলাম এবং ভিমের আয়তন প্রচলিত জ্ঞানে প্রকা- করার দরকার হতো। এতে করে যে শুধু ভবন তৈরির উপাদানের সাশ্রয় হতো তা নয়, ভবনের চেহারাতেও এর প্রকাশ্য একটা প্রকোপ পড়ত। এফআর খান ‘টিউবুলার কনসেপ্ট’ নামে একটি মৌলিক প্রকৌশলতত্ত্ব স্কাইস্ক্র্যাপার ডিজাইনে নিয়ে আসেন। এই টিউবুলার কনসেপ্ট ব্যবহার করে তৈরি হয় সিয়ার্স টাওয়ার, যা ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ফজলুর রহমান খান সিয়ারস টাওয়ার ডিজাইন করছিলেন। সেই সময় বারবার কাজ ফেলে রেখে আমেরিকার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন স্বাধীনতার সপক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার জন্য। তিনি বলেন, এ অতি দুঃখের কথা যে এদেশে এখনও প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খানের উপর গবেষণার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ফজলুর রহমান খান ও তার কাজের উপর গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার নামে ঢাকায় একটি সড়কের নামকরণ করার কথা বলেন। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যে একজন বাঙালী বাংলাদেশী বিশ্বের কাছে এ দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে তাদের মধ্যে ফজলুর রহমান খান অন্যতম। তার প্রতিষ্ঠিত ২টি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার সপক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলার জন্য এবং এদেশের মানুষদের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিল। তিনি আরও বলেন, এদেশে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অভাব রয়েছে। এখনও তার উদ্ভাবিত কৌশল ব্যবহার করেই এখনও বিশ্বের সকল স্কাইস্ক্র্যাপার তৈরি করা হয়। এই কারণেই তিনি স্বীকৃতি পান কাঠামো প্রকৌশলের আইনস্টাইন হিসেবে। সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, কম খরচে সর্বোচ্চ ভবন তৈরির প্রযুক্তি তিনি উদ্ভাবন করেন। তিনি আরও বলেন, জনবহুল একটি দেশ বাংলাদেশ এবং ঢাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। জন্মদিনে ইউটিউব চ্যানেল চালু করলেন শাকিব খান ॥ জন্মদিনে ভিডিও শেয়ারের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল চালু করলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খান। বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গর সঙ্গে একীভূত হয়ে ‘শাকিব খান অফিসিয়াল’ নামের এ ইউটিউব চ্যানেল যাত্রা শুরু করেছে। যাতে শাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর ভিডিও এবং অডিও গান, ট্রেলার, প্রমো, বিহাইন্ড দ্য সিনসহ ছায়াছবির বিভিন্ন প্রচারমূলক ভিডিও ও অডিও ক্লিপ নিয়মিত প্রকাশ করা হবে। সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যাতে শাকিব খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাদ মোহাম্মদ ভাই ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। শাকিব খান বলেন, যুগ বদলাচ্ছে, আনন্দ বিনোদনের ক্ষেত্রে সিনেমা হল ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব পাচ্ছে ইউটিউব ও অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্ম। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে আমাদের চলচ্চিত্রগুলো ডিজিটাল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো থেকে উপার্জিত অর্থ, ঘরে নিতে পারছেন না এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অথচ ইউটিউব থেকে একজন শিল্পী বছরের পর বছর রয়্যালিটি পেতে পারেন। ইউটিউব উপার্জিত অর্থ দিতে পারে প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পী ও কলাকুশলীর পরিবারকে স্বচ্ছলতা। তিনি আরও বলেন, নামে বেনামে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের কারণে অনেক সময় শিল্পীর ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা মানসিক চাপের স্বীকার হয়ে কাজের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন না। তাদের দূরত্ব বেড়ে যায় ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে। অথচ শিল্পীর ইউটিউব চ্যানেল এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো দর্শক ও ভক্তদের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে পারে। তারকা-ভক্ত সম্পর্কটি হয়ে উঠতে পারে আরও সাবলীল, আরও উপভোগ্য।
×