ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ॥পুরস্কার পেলেন জনকণ্ঠের বিভাষ

সরকার দুর্নীতি কমাতে দুদকের সফলতার জন্য গর্ববোধ করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ মার্চ ২০১৮

সরকার দুর্নীতি কমাতে দুদকের সফলতার জন্য গর্ববোধ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড পেলেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার বিভাষ বাড়ৈ। বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০১৮ পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত শিক্ষাবিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘এমপিও পেতে পাঁচ স্তরে ঘুষ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জন্য প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন। অনুষ্ঠানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ৬ সাংবাদিককে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য সাংবাদিকরা হলেন প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম আবু সালেহ রনি (দৈনিক সমকাল), দ্বিতীয় নেসারুল হক খোকন ( দৈনিক যুগান্তর) ও তৃতীয় বিভাষ বাড়ৈ (দৈনিক জনকণ্ঠ)। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন মাহবুব কবির চপল (এটিএন বাংলা), দ্বিতীয় বদরুদ্দোজা বাবু (মাছরাঙ্গা) ও তৃতীয় এ এস এম জহিরুল ইসলাম (এনটিভি)। বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার, দ্বিতীয় জনকে ৪০ হাজার ও তৃতীয় জনকে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে একটি করে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, দুদকের কর্মকর্তা ও জুড়ি বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেন, বর্তমান সরকার সমাজ থেকে দুর্নীতি কমাতে দুদকের সফলতার জন্য গর্ববোধ করে। দুর্নীতি কমাতে সংস্থাটি বর্তমানে যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে অনেক রকমেরই দুর্নীতি হয় তবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কোনক্রমেই দমন করা সম্ভব হয় না। আমরা সরাসরি অর্থ গ্রহণকে দুর্নীতি বললেও এমনসব দুর্নীতি আছে যার মাধ্যমে সরাসরি অর্থ গ্রহণ না করলেও উপভোগ করি ও উষ্ণতা অনুভব করি। তাই এসব কাজ দুর্নীতি কি না তাও পরীক্ষা করা দরকার। সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, পত্রিকা বা মিডিয়ায় কোন দুর্নীতিবাজদের নাম এলেই দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হয়ে যায়। নেইম এ্যান্ড শেইম নামক কথার কারণে যে দুর্নাম হয় তাতেই শাস্তি হয়ে যায়। মন্ত্রী সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন,আপনারা অনুগ্রহ করে দুদকে আসা অভিযোগকেই অপরাধ হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করবেন না। এটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। আমরা অনেক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগকেই মূল অপরাধী বলায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগ নিয়েই বিভিন্ন মিডিয়ায় ভয়ানক নিউজ হয়েছে যা পরে মিথ্যাও প্রমাণিত। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাংক খাতের নানা সমস্যা সত্ত্বেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ওপরে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে; যা অত্যন্ত গৌরবের। তিনি সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত ও অবকাঠামোগত উন্নতির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শুধু কয়েক আমলার অসহযোগিতার কারণে বেসরকারী পর্যায়ে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে আজও কোন প্রকার রুলস করতে পারছি না। বর্তমান আইনে শুধু সরকারী অফিসার বা প্রতিষ্ঠানের মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা সম্ভব। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে বেসরকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা মানি লন্ডারিংয়ের দুর্নীতির তদন্ত কে করবে ? তারা কি অধরাই থেকে যাবে ? তিনি এই রুলসটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অর্থ প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, শুধু হুন্ডির মাধ্যমে, বিশাল পরিমাণ অর্থ পাচার করা কখনই সম্ভব নয়। তাই রুলসটি অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। বেশি কিছু করতে না পারি অন্তত কিছু তো করতে পারব? অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে না। দুদক দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এলেও তাদেরকে ধরতে কাজ করে। এছাড়া নিজস্ব উদ্যোগে দুদক কোন দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে না। প্রায় সকল অভিযোগের ও সংবাদমাধ্যমে আসা বিভিন্ন অভিযোগের কারণে আমরা দুর্নীতি তদন্ত করি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যত প্রকারের তদন্ত করা হয় ও সমাজ থেকে দুর্নীতি কমাতে পারছি তার প্রায় সবটুকুই মিডিয়ার কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। মূলত সমাজের দুর্নীতি কমানোর প্রধান কারিগর মিডিয়া। কর্মকর্তাকর্মচারীদের উদ্দেশ তিনি বলেন, সতর্ক হোন কারণ আমাদের অনেকেরই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে চাকরি গেছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখুন। যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তারও শাস্তি প্রদান করা হবে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক কোন ব্যক্তির মুখ দেখে বা রাজনৈতিক পরিচয়ে মামলা বা দুর্নীতির অনুসন্ধান করে না। এসব করা অবিচার। তবে তিনি দুর্নীতিবাজদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আপনারা মনে করবেন না যে, দুদকের হাত ছোট। অনুপার্জিত আয় দিয়ে আজ-কাল চললেও আর বেশিদিন চলতে পারবেন না। দুদকের হাতে ধরা আপনাকে পড়তেই হবে। আমরা আপনাদের কারণে পরবর্তী জেনারেশনকে ঝুঁকিতে ফেলে যেতে পারি না। সাংবাদিকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা দুর্নীতিবাজ বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গ্রুপের বিরুদ্ধে লিখুন। আপনারা চাকরি হারানোর ভয় করবেন না। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। প্রয়োজনে আপনাদের অফিসে যাব। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করুন। এর আগে বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সপ্তাহ পালন উপলক্ষে দুদক আয়োজিত এক মানববন্ধনে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অর্থপাচার রোধ করতে হবে। তাই দুদক চলতি বছর থেকেই অর্থ পাচার রোধে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করবে ও পাশাপাশি দুদকের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে। একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য যেকোন পরিসেবায় দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক কাজ করবে বলেও জানান তিনি। মানববন্ধনে দুদক পরিচালক নাসিম আনোয়ারসহ দুদক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, যেকোন উপায়ে দেশ থেকে অর্থপাচার রোধ করতে হবে আমাদের। বর্তমানে আমরা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করছি, অর্থপাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি দুর্নীতি দূর করতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরপরও আমরা নজরদারিতে রেখেছি। ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তাদেরকে বলে দেই, আপনাদের ক্ষমা নেই। দুর্নীতিকে টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি থাকলে টেকসই উন্নয়নে অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি আছে। তবে মাত্রা কিছুটা কমেছে। মানুষের সমর্থন ছাড়া দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে না। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দেশের সব সেক্টরের দুর্নীতি দমনে আপামর জনগোষ্ঠী যদি সচেতন না হন ও আন্তরিকতার সঙ্গে রোধে সচেষ্ট না হন তাহলে দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি বন্ধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে এ সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে যারা দুর্নীতি করবে তাদের কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশের দুর্নীতি কিছুটা কমলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা ধরে রাখতে হলে অর্থপাচার বন্ধ করা দরকার; যারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×