ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২ এপ্রিল শুরু

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৯ মার্চ ২০১৮

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ জন। আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে যত রকম উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে। আসন্ন পরীক্ষা নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী জানান, এবার সারাদেশের মোট আট হাজার ৯৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মোট দুই হাজার ৫৪১টি কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। গতবারের চেয়ে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৭৯টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ৪৪টি। সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্লাহ ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে দশ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে এক লাখ ১২৭ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএমে এক লাখ ১৭ হাজার ৭৫৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৯৬৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন ছাত্রী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে এবার বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৯৯ জন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ১৫৯ জন ছাত্র এবং ১৪০ জন ছাত্রী। এবার ২৮টি বিষয়ের ৫৪টি পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্ন হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালে কেবল বাংলা প্রথমপত্রে সৃজনশীল পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ের ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ থেকে মোট ২৮টি বিষয়ে ৫৪টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে নানা উদ্যোগ ॥ পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন নিতে হবে জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে যত রকম উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, এর সবই করা হয়েছে। আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সেট কোডের নির্দেশনা পাঠানো হবে। তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা যায় না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। এক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলী পন্থায় এগোচ্ছি। সবার সহযোগিতাও চেয়ে আসছি। আমাদের চাওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এ সংক্রান্ত গুজবে না মেতে অভিভাবকরা যেন ছেলেমেয়েদের ভালভাবে লেখাপড়া করান। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের প্রতি দৃষ্টি দিতে শিক্ষকদের কাছে আবেদন জানাই। প্রশ্নফাঁস রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফেসবুকে আগে দেয়া পোস্টে প্রশ্ন পরে দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে দেখানো যায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিপাকে ফেলতেই এসব করা হচ্ছে। এর পেছনে কাজ করছে কিছু শক্তি। তারা সরকারের ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা ও সাফল্যকে চাপা দিতে চায়। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফাঁসের গুজবের সঙ্গে জড়িত ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসএসসিতে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, বিগত বছরের ন্যায় এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। আর অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
×