ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দপুর সেনানিবাসে ৫ম ইএমই কোরের পুনর্মিলনী প্যারেড

সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৯ মার্চ ২০১৮

সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক ॥ রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ও সৈয়দপুর সংবাদদাতা ॥ জাতির পিতার হাতে গড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী আমাদের অহঙ্কার। তিনি বলেন, বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুুনিকায়নে বর্তমান সরকার কিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাষ্টপতি ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে ইএমই কোরের সদস্যগণ নিজ কর্তব্যের পাশাপাশি পদাতিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এতে ১৬২ন সদস্য শহীদ হন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বুধবার দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর সৈয়দপুর সেনানিবাসে অষ্টম কর্নেল কমান্ড্যান্ট অভিষেক অনুষ্ঠান বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন ২০১৮ এবং ৫ম ইএমই কোর’র পুনর্মিলনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর বারোটায় সৈয়দপুর সেনানিবাসের শহীদ ক্যাপ্টেন নুরুল আবছার প্যারেড গ্রাউন্ড আয়োজিত প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল সাখাওয়াত হোসেন পিএসসি। বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সীমিত সম্পদ দ্বারা জাতির পিতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠনে উদ্যোগী হন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোড়াপত্তন হয়। বঙ্গবন্ধু সব সময়ই আধুনিক, শক্তিশালী ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সামরিক বাহিনী একটি চৌকস, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ইতোধ্যেই আমাদের সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন সরঞ্জামাদি প্রবর্তন করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এসব আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম মেরামত করতে গিয়ে ইএমই কোরের পেশাগত চ্যালেঞ্জ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই কোরের সকল সদস্যকে কঠোর পরিশ্রম,অধ্যবসায় এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। দেশের যেকোন প্রয়োজনে মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ ও ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’-এর মাধ্যমে জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনাসহ যেকোন জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় সেনাবাহিনী তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। সেনাবাহিনী মিয়ানমার হতে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা ও চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় দিবা-রাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেনাবাহিনী ও দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, সামরিক জীবনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণ সকলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখে, পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, দক্ষতা বাড়ায়; সর্বোপরি আনুগত্য বাড়ায়। তাই আপনাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। তিনি ইএমই সেন্টার এ্যান্ড স্কুল ইএমই কোর সদস্যদের প্রাণকেন্দ্র। কোরের জন্য চৌকস সেনা সদস্য প্রস্তুত করতে এ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১৪ সাল থেকে পুরুষ রিক্রুটদের পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠান মহিলা রিক্রুটদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলছে। তাদের এ অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে ইএমই কোরের সামগ্রিক সাংগঠনিক ও অবকাঠামোতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নতুন ইউনিট স্থাপনসহ ইএমই কোরের জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ,বৈদেশিক মিশন ও প্রশিক্ষণের সুযোগদানের মাধ্যমে ইএমই কোরের কর্মকা- যথেষ্ট গতিময় হয়েছে। কার্যকরী কমান্ড চ্যানেলই সেনাবাহিনীর যেকোন কাজ সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। সকল স্তরের কমান্ডারদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও তাদের প্রতি আনুগত্য থাকলে যেকোন কাজ দক্ষতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে সমাধা করা সম্ভব। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি। পুনর্মিলনী প্যারেডের পর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ‘ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স সেন্টার এ্যান্ড সউকল’র প্রশিক্ষণ এলাকায় একটি আমগাছ রোপণ করেন। এরপর বাদ যোহর তিনি ইএমই কোরের কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য এবং শহীদ পরিবারবর্গের সঙ্গে প্রীতিভোজে অংশ গ্রহণ করেন। এর আগে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রাষ্ট্রপতি ঢাকা থেকে বিশেষ হেলিকপ্টারে সৈয়দপুর এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পাসপোর্ট ডিজি ও কর্নেল কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান,রংপুর ৬৬ পতাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ মাসুদ রাজ্জাক, কমান্ড্যান্ট ইএমই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাহবুব আনোয়ারসহ উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ তাকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যবৃন্দ, উর্ধতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দসহ ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যান্ড স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিরত এবং অন্যান্য পদবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২৭ মার্চ সৈয়দপুর সেনানিবাসে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুই দিনব্যাপী ইএমই কোরের কর্নেল কমান্ড্যান্ট অভিষেক অনুষ্ঠান, বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০১৮ এবং ৫ম ইএমই কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে অভিষেক অনুষ্ঠানে অষ্টম কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে পাসপোর্ট ডিজি, মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
×