ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তারেক রহমানও ফিরছেন না;###;কার্যত তিন ধারা এখন বিএনপিতে- কা-ারী বলতে কেউ নেই

বাড়ছে অবিশ্বাস ॥ বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ মার্চ ২০১৮

বাড়ছে অবিশ্বাস ॥ বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ অবিশ্বাস অস্থিরতা বাড়ছে বিএনপিতে। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে কর্তৃত্বের লড়াইয়ে শুরু হয়েছে পারস্পরিক অবিশ্বাস। সন্দেহ-বিশ্বাসে বাড়ছে দূরত্ব, সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা। সম্প্রতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে নিয়ে টানাপোড়েন এরই বহির্প্রকাশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একে অপরের প্রতি আস্থাশীল নন। স্বাভাবিক ভাবেই দলের কা-ারী বলতে এখন কেউ নেই। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিয়ে এখন যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে তা এরই অংশ। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মামলা ও তার জামিন না হওয়া নিয়ে দলের ভেতর তোপের মুখে পড়েন মওদুদ। কিছু নেতা মওদুদকে খালেদা জিয়া তার মামলার আইনজীবী থেকে বাদ দিয়েছেন বলে প্রচার করে রাজনৈতিকভাবে হেয় করারও কৌশল নেয়। এ পরিস্থিতিতে মওদুদ ইস্যুটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপিতে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস অনেক পুরনো। তবে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এটি আরও প্রকট হয়েছে। একদিকে খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মধ্য পর্যায়ের কিছু নেতার তৎপরতা বেড়ে যায়। অপরদিকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যারা পছন্দ করেন না এমন সিনিয়র নেতারা দলের কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে চান। আর মহাসচিব ও তার অনুসারীরা চান নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে। এসব কারণেই নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়া কারাগারে গেলেও দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব ছাড়েননি, বরং ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেভাবে এ দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছিলেন একইভাবে এবারও নিজের কাছেই চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব রেখে দিয়েছেন। তবে দলের মধ্য পর্যায়ের কিছু নেতা খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার একদিন পরই ভিন্ন কৌশলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে রাজি করেছেন এবং দলের মুখপাত্রের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় সাজা ও কোন কোন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় এবং বিদেশে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিতে পারবেন না ভেবেই খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে দল পরিচালনার দায়িত্ব কৌশলে নিজের হাতে রেখে স্থায়ী কমিটির নেতাদের সমন্বয় করে বিভিন্ন কর্মকা- চালিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। খালেদা জিয়ার নির্দেশ পেয়ে দলের সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাসসহ ক’জন সিনিয়র নেতা অধিকতর সক্রিয় হন। এদিকে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন নেতারাও দলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। আর মহাসচিব উভয় পক্ষের মন রক্ষা করতে গিয়ে জোরালো কোন ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। দলের মধ্যে কার্যত তিনটি ধারা সৃষ্টি হওয়ায় খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত দায়সারা গোছের যে সকল কর্মসূচী দেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই সফল হয়নি। আর কিছু নেতা গ্রেফতার এড়ানোর কথা বলে কর্মসূচী থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। এ কারণে কঠোর আন্দোলনেও যেতে পারছে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত বিএনপিতে ভাঙ্গনের সম্ভাবনা প্রকট না হলেও খালেদা জিয়া জামিন না পেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন অবস্থা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। কারণ, খালেদা জিয়া কারাগারে থেকে আগের মতো আর নির্দেশনা দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে কাজ করতে পারবেন না। আর তারেক রহমানও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন না এবং সুদূর লন্ডনে বসে সঠিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে দল পরিচালনা করতে পারবেন না। অভিজ্ঞমহল মনে করছে খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকেই যাবে। দলীয় যে কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে খালেদা জিয়ার নির্দেশ যেভাবে সর্বসম্মতভাবে মেনে নিয়ে পালন করা হয় সেভাবে অন্য কারো নির্দেশনা পালন হয় কি না এ নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ, ওয়ান-ইলেভেনের সময় এই বিএনপি নেতারাই পরস্পরবিরোধী গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। এবারও এ অবস্থা বেশি দিন চললে দলটি নতুন করে ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে। জানা যায়, খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা নিয়ে বিএনপিতে পদ-পদবী আছে এমন কিছু জুনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে ওই জুনিয়র আইনজীবীরা বিভিন্ন মাধ্যমে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কারাবন্দী দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে ব্যারিস্টার মওদুদ সম্পর্কে কান ভারি করে। তারা মওদুদের কারণে খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িছাড়া হওয়া ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় গোপনে প্রচার করতে থাকে। সূত্র মতে, সম্প্রতি কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান তার ৬ আইনজীবী। তখন খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তাদের কাছে জানতে চান তার জামিন হচ্ছে না কেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এতো সিনিয়র আইনজীবী থাকতেও যদি জামিন করাতে না পারেন তাহলে তাদের দরকার কি? মামলা ভাল বোঝেন এমন অনেক জুনিয়র আইনজীবী আছে তারাই তো এ মামলা পরিচালনা করতে পারে। এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ গোপনে প্রচার করতে থাকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নাকি তার মামলা থেকে বাদ দিতে বলেছেন। এদিকে বুধবারও খালেদা জিয়ার মামলায় অংশ নিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আদালতে যান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপীলের শুনানি চলাকালে অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদও অংশ নেন। আর এটি দেখে বিএনপির মওদুদবিরোধী নেতারা নাখোশ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ব্যারিস্টার মওদুদকে খালেদা জিয়া তার মামলার আইনজীবী প্যানেল থেকে বাদ দিয়েছেন, এমন একটি খবর চাউর হলে মওদুদ আহমদ চরম ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে তিনি দলের ক’জন সিনিয়র নেতার সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, দলের জন্য গুলশানের বাড়ি হারানোর পরও দলের মধ্য থেকেই কেউ কেউ অপপ্রচার করে। এর চেয়ে আর কষ্টের কি হতে পারে। এ ইস্যুতে বিএনপির আরও ক’জন নেতা মওদুদের পক্ষে তৎপর হয়। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও মওদুদ ইস্যুতে বৈঠক উত্তপ্ত হতে পারে মনে করে তা স্থগিত করা হয়। এদিকে খালেদা জিয়া মওদুদকে তার মামলার আইনজীবী থেকে বাদ দিতে বলেছেন কি না তা জানতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক’জন সিনিয়র নেতা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। তবে যে ৬ আইনজীবী সেদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তারা মঙ্গলবার এক মঞ্চে বসে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, খালেদা জিয়া মওদুদ আহমদকে তার মামলার আইনজীবী থেকে বাদ দিতে বলেননি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সম্প্রতি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তার মামলার বিষয়ে আলোচনা করেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের জানান, মামলার আইনগত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তার মামলায় জামিন হচ্ছে না কেন তা তিনি জানতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে পছন্দ করেন না এমন বিএনপি নেতারা তাকে বেকায়দায় ফেলতে ইস্যুর অপেক্ষায় থাকে। তাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ আইনজীবীর বৈঠকের পর বিএনপির কিছু নেতা খালেদা জিয়া তার মামলার আইনী সব কার্যক্রম থেকে মওদুদ আহমদকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রচার করতে থাকেন। তবে দলের মওদুদ অনুসারী নেতারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া মওদুদকে তার মামলা পরিচালনা থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশনা দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তাকে যারা পছন্দ করেন না তারাই এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। মওদুদ আহমদকে নিয়ে এখন দলের মধ্যে সন্দেহ করার কিছু নেই। কারণ, তিনি খালেদা জিয়ার ওপর আস্থা রেখে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর খালেদা জিয়ারও তার ওপর আস্থা আছে। জানা যায়, গত ক’বছর ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মামলাগুলো পরিচালনায় মূল ভূমিকা পালন করেন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করে থাকেন বিএনপির পদ-পদবিধারী ক’জন জুনিয়র আইনজীবী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় উচ্চ আদালতের শুনানিতে তারাই মূল ভূমিকা রাখছেন। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজাক খানসহ আরও ক’জন। মামলা পরিচালনায় এজে মোহাম্মদ আলীর সামনে থেকে ভূমিকা পালনকে দুই-একজন সিনিয়র আইনজীবী ততোটা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেননি। এ কারণে এজে মোহাম্মদ আলী ও তার সহযোগী জুনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ ক’জন আইনজীবীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১৯ মার্চ আপীল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের লিভ টু আপীল মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে দেন। আদালত থেকে এ ধরনের একটি আদেশ আসার পরও সামনের সারিতে বসা বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী নিশ্চুপ ছিলেন। এ অবস্থায় পেছনের সারিতে বসা অপেক্ষাকৃত কিছু জুনিয়র আইনজীবী সিনিয়রদের আদালতের উদ্দেশে কিছু বলার জন্য চাপ দেন। কেউ কেউ জামিন স্থগিত করার যুক্তি আদালতের কাছে জানতে বলেন। আদালত থেকে বের হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের ক’জন নেতা ও আইনজীবী সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মাহবুব হোসেন ওই কক্ষে যান। তখন মহাসচিবের সামনেই বিএনপির এক তরুণ নেতা ও আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছে জানতে চান, আপনারা এ ধরনের আদেশের পরও কেন নিশ্চুপ ছিলেন। জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের মতো বয়স হোক তারপর বুঝবেন কখন নিশ্চুপ থাকতে হয়। এক পর্যায়ে ওই তরুণ আইনজীবী মওদুদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবদীন তার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, খালেদা জিয়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে তার মামলার আইনজীবী থেকে বাদ দিতে বলেননি। এ ধরনের কথা যারা বলছেন, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়া । সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবদীন বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন সিনিয়র আইনজীবী। তার অনেক সুনাম আছে। অথচ বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন আমরা যেভাবে তার মামলা চালাচ্ছি সেভাবে মামলা চালিয়ে যেতে। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ না করলে তিনি মুক্তি পাবেন। আমরাও তাই মনে করি। খালেদা জিয়া কখনও মওদুদ আহমদকে সরে যেতে তার মামলা পরিচালনা থেকে সরে যেতে বলেননি। মওদুদ আহমদের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার বিষয়ে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, শিখছি। এমন একজন আইনজীবীকে খালেদা জিয়া কিভাবে তার মামলা পরিচালনা থেকে সরে যেতে বলতে পারেন! এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার মামলা পরিচালনা থেকে বাদ দিতে বলেছেন বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে তা ডাহা মিথ্যা। দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ঐক্য রয়েছে তা দেখে সরকার সহ্য করতে পারছে না। তাই বিভিন্ন কৌশলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তা সম্ভব হবে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা যে কোন সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, মওদুদ সাহেবকে নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। কারণ, তিনি একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী। দলের চেয়ারপার্সনের মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে কেন বাদ দিতে বলবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে এটা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হতে পারে।
×