ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরিফ হোসাইন হিয়া

বিনোদনে রূপান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৯ মার্চ ২০১৮

বিনোদনে রূপান্তর

‘বিনোদন’ শব্দটি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। বিনোদনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের সারাদিনের কর্মক্লান্তি শেষে মনের নিরেট প্রশান্তি এনে দেয়া যা আমাদের কর্মশক্তি অর্জনে সহায়তা করে। মানুষের জীবন সদা পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ক্ষমতা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইত্যাদি রূপান্তর ঘটছে। বিনোদনের ধরনও বদলে গেছে যুগে যুগে। একেক সময়ে একেক রূপে মানুষ বিনোদনের পথ উদ্ভাবন করছে। তবে বিনোদনের মূল উদ্দেশ্য যে আনন্দ দেয়া, এই উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয় না। সুদূর অতীতকাল থেকে মানুষ বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা যেমন- গোল্লাছুট, লাঠিখেলা, মার্বেল খেলা, লুডু খেলা, বউচোর খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো এবং বিভিন্ন ধরনের গান যেমন- সারিগান, পালাগান, জারিগান, মুর্শিদী গান, ভাটিয়ালি গান, পল্লীগীতি ইত্যাদি উপভোগ করে থাকে। এছাড়াও মাঠে ফুরফুরে হাওয়াতে বংশীবাদক তরুণদের মন পাগল করা বাঁশির সুর রেডিও শোনা ও টেলিভিশন দেখার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বাঙালীর বিনোদনের প্রধান উৎস ছিল। দাদার মুখে শুনেছিলাম, আবাদি জমির ফসল বিক্রি করে আনা পয়সা দিয়ে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ একত্রে হেঁটে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে শহরে বই (সিনেমা) দেখতে যেতেন এবং সেই বিনোদনের কথা শেয়ার করতেন। আমরা নিজেই দেখেছি রমজান মাসে ঈদের চাঁদ দেখতে যাওয়া অন্যরকম বিনোদন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে অনুভূতি হারিয়ে গেছে। গ্রাম ও শহরের বিনোদন চিত্রগুলো বদলে গেছে। এখন আর তেমন আবেগ নেই। কিন্তু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে এগুলো কেবলই বিনোদনই নয় বরং এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও দর্শন। সময়ের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির উন্নয়নে ও পুঁজিবাদের আগ্রাসনের মাধ্যমে বিনোদনের রূপান্তর ঘটেছে। আমি পাঁচ বছর ধরে সংস্কৃতির মাঠকর্ম করে আসছি এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই বিনোদনের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছি। আগে যে সকল বিত্তশালীরা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করত খোদ তারা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পড়ে আছে। এখানে একটি লাইন বলা যুক্তিসঙ্গত মনে করছি, ‘মানুষের কর্মতৎপরতা যত বৃদ্ধি পায়, শয়তানের কর্মতৎপরতা তত বৃদ্ধি পায়।’ যার বাস্তব উদাহরণ ‘ফেসবুক, ইউটিউব, ভাইবার, টুইটার, ইমো, হোয়াট্স এ্যাপ’ ইত্যাদি। বিনা প্রয়োজনে আমরা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খোসগল্প করছি, ভিডিও কল করছি, গেম খেলছি এবং সময়ের অপচয় করছি। যার ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের যে ধরনের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা তা না হয়ে আমরা এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে এগুলোই বিনোদনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছি। আমরা আমাদের ঐতিহ্যগত বিনোদনের মাধ্যম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। কালে কালে বিনোদনের রদবদল হতে পারে ও হবে। তবে আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ যেন দৃঢ় থাকে। অপবিনোদন কিংবা বিকৃত বিনোদন মানুষের জন্য প্রত্যাশিত নয়। বিনোদন সুস্থ হওয়ায় বাঞ্ছনীয়। দার্শনিক হোমার বলেন, ‘অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা মহৎ।’ তাই আমাদের সকলের উচিত হবে বিনোদনের পালাবদল হলেও প্রকৃত ইতিহাস ও মূল্যবোধকে ধারণ করে সুস্থ বিনোদন উপভোগ করা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×