ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার বল টেম্পারিং

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৯ মার্চ ২০১৮

অস্ট্রেলিয়ার বল টেম্পারিং

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় হতবাক ক্রিকেট বিশ্ব। এ নিয়ে বিশ্বের অগণিত ক্রিকেটামোদী একদিকে যেমন বিস্ময়ে বিমূঢ়, অন্যদিকে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মধ্যে চলছে তোলপাড়, কানাঘুষা সর্বোপরি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। অন্তত সবার মধ্যেই ব্যাপকভাবে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঘা বাঘা খেলোয়াড় এহেন একটা ন্যক্কারজনক কাজ করতে গেলেন কেন? মাঠে উপস্থিত আম্পায়ার, দু’দলের খেলোয়াড় ও দর্শকবৃন্দসহ শত শত শ্যেনদৃষ্টি সংবলিত ক্যামেরার লেন্সের সামনে যে দৃশ্য ধারণ হয়ে সম্প্রচারিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী, তাতে দেখা যায়, সে দেশের একজন বোলার ম্যাচ চলাকালে রিভার্স সুইং পাওয়ার জন্য বলের একপাশে হলুদ রঙের স্কচটেপ লাগিয়ে তা তড়িঘড়ি লুকিয়ে ফেলছেন পরিহিত অন্তর্বাসের ভেতরে। এতদিন পর্যন্ত ক্রিকেট বলের গায়ে হাতের নখ অথবা দাঁত দিয়ে আঁচড় দেয়ার কথা শোনা গেছে। এবার কিন্তু বলের গায়ে একেবারে হলুদ টেপ। এ তো ধরা না পড়ে উপায় নেই। ক্রিকেট বিশ্বে এতদিন এক নম্বর পরাশক্তি বলে দাবিদার অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা এরকম একটি অতি কাঁচা কাজ করতে গেলেন কেন? প্রশ্ন সেখানেই। যে কোন খেলায়ই জয়-পরাজয় থাকবেই। তৃতীয় ওই টেস্ট ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় ছিল অবধারিত। সে অবস্থায় যে কোন মূল্যে, ছলে বলে, কলা-কৌশলে জয় ছিনিয়ে নিতে হবেই, তাও আবার বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়ে! এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আর নীতিনৈতিকতা থাকে কোথায়। বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির স্বীকারোক্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, সহঅধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নেতৃত্ব থেকে। স্পিথকে এক টেস্ট সিরিজ নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। জরিমানা করা হয়েছে বোলার ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে। তবে এতেই সব শেষ হয়েছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে এতটা গুরুপাপে নিতান্তই লঘুদ-। অতএব সংশ্লিষ্টদের ভাগ্য জানতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় সর্বাধিক চাপের মুখে পড়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া অর্থাৎ সেদেশের জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কেননা, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষক ও সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর থেকে যাবতীয় সমর্থন ও চুক্তি প্রত্যাহার করে নিতে চাইছে। এর ফলে বোর্ডসহ খেলোয়াড়রা লক্ষ-কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড ও খেলোয়াড়দের নাক অবশ্য বরাবরই উঁচু। তারা নাকি অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাল খেলে থাকে ক্রিকেটটা। অবশ্য এই অস্ট্রেলিয়াই নিছক নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ বার বার পিছিয়েছে। তদুপরি তারা যে কোন দেশ সফরের আগে নানা শর্তারোপ করে থাকে। এমনকি বর্ণবাদের অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে অতীতের এসব ঘটনা ও বিতর্ককেই ছাপিয়ে গেছে এবারের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা। এখন দেখার বিষয়, সেদেশের সরকার ও ক্রিকেট বোর্ড কিভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম হয় এবং বাদবাকি ক্রিকেট বিশ্বই বা ঘটনাটিকে কিভাবে আমলে নেয়? খেলার সৌন্দর্য ও সৌকর্যের স্বার্থে ক্রিকেটের কলঙ্ক মোচনই প্রত্যাশিত বৈকি।
×