ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশে অর্থ বিভাগের অনীহা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৮ মার্চ ২০১৮

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশে অর্থ বিভাগের অনীহা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশে অনীহা অর্থ বিভাগের। মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে সুপারিশ করলে অর্থ বিভাগ এ সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো চাহিদামতো সহায়তা পাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছর বাজেট বরাদ্দের পুরোটা অর্থাৎ ২ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা বাবদ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগে সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থ বিভাগ এই দুই হাজার কোটি টাকা দিতে চাচ্ছে না। অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবছর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য এসব ব্যাংককে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই প্রতিবছর ব্যাংকগুলোর চাহিদামাফিক অর্থ দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ এই অর্থ জনগণের, এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার একটি ব্যাপার রয়েছে। একদিকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে একই সঙ্গে তাদের খেলাপি ঋণও বাড়ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যা আদায়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ ব্যাংকগুলো নিতে পারছে না। সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ছয় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হয়। এই অনুরোধপত্রে বলা হয়, অর্থ বিভাগের অধীনে ৩-০৯৩৪-০০০০-৭১১৩ নম্বর কোডের আওতায় ‘ব্যাংক মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরে যেন ছয় ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা দেয়া হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো চাহিদাপত্রে বলা হয়েছে, চলতি বছর সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের জন্যও ৪০০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের জন্য ৩০০ কোটি টাকা এবং বেসিকের জন্যও ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য চাওয়া হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর এই ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তা হিসেবে অর্থ দেয়া হয়। অর্থ দেয়ার সময় প্রতিবারই কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। এই শর্তের মধ্যে থাকে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা। কিন্তু এই শর্তগুলো কখনোই আক্ষরিক অর্থে পরিপালন করা হয় না। ফলে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখন আবার তাদের দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের এই অর্থ দিতে হয়। আমরা ঠেকানোর চেষ্টা করি, কিন্তু কোন লাভ হয় না। তবে যাই হোক, ব্যাংকগুলোকে মে-জুন মাসের আগে কোন অর্থ দেয়া হবে না। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত চার অর্থবছরে সরকারী ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের বেসিক ব্যাংককে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সোনালী ব্যাংকে। এটিকে দেয়া হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। একইভাবে জনতাকে ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংককে এক হাজার ৮১ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৩১০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এর আগে এ বছরের শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চায়। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটিই ‘হল-মার্ক’ কেলেঙ্কারির কারণে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতির কারণে আলোচিত অপর ব্যাংক বেসিকও মূলধন পূরণে চেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকটি ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রয়োজন এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে বিবেচিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সাত হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ৮০০ কোটি টাকা মূলধন সহায়তা চেয়েছে।
×