ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমা দেশগুলোর পাশেই যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৮ মার্চ ২০১৮

পশ্চিমা দেশগুলোর পাশেই যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন হন না কেন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনও রাশিয়ার চেয়ে ইউরোপের দেশগুলোকে বেশি সমর্থন করে। নার্ভ গ্যাস হামলায় ব্রিটেনে সাবেক রুশ গুপ্তচর নিহত হওয়ার পর মস্কোর সঙ্গে লন্ডনের কূটনৈতিক বিবাদের জেরে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬০ কূটনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনা সেই ইঙ্গিতই দেয়। সিএনএন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একসঙ্গে এত রুশ কূটনৈতিক বহিষ্কার অনেককে বিস্মিত করতে পারে। ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল যখন হোয়াইট হাউসে এ যাবতকালের মস্কোর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিটি আসীন রয়েছেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে হস্তক্ষেপ করেছিল, এ রকম অনুমান এখন অনেকটা বাস্তব সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ট্রাম্প ও পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কে কখনও ছেদ পড়েনি। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক কূটনৈতিক বহিষ্কারের সোমবারের ঘোষণা নিঃসন্দেহে ক্রেমলিনের জন্য উদ্বেগজনক। বিষয়টি দু’পক্ষের জন্য শীতল যুদ্ধ যুগকে স্মরণ করিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যে সঙ্কটের সময় ইউরোপের পাশে আছে এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন মস্কোকে স্পষ্টত বার্তাটি দিল। ট্রাম্প সোমবার রাশিয়ার ৬০ কূটনীতিককে তার দেশ থেকে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটলে রাশিয়ার কনস্যুলেট কার্যালয় বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৪ দেশও নিজেদের এলাকা থেকে বহিষ্কার করছে মস্কোর কূটনীতিকদের। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্টে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও তার মেয়েকে হত্যার চেষ্টার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশ। ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ৬০ রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তারা গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার জন্য ওই কূটনীতিকরা সাতদিন সময় পাবেন। সিয়াটলের রুশ কনস্যুলেট কার্যালয়ের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রে নৌবাহিনীর কার্যালয়। এ কারণে ওই কনস্যুলেটও বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। ইউরোপের যেসব দেশ রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে তার মধ্যে জার্মানি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, চেক রিপাবলিক রয়েছে। ওই ঘটনায় রাশিয়াকে সাজা দেয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করছে হোয়াইট হাউস। এদিকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেয়া সিদ্ধান্তেরই অনুসরণ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের মাটিতে রাশিয়া ‘রাসায়নিক অস্ত্র’ ব্যবহার করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এ সিদ্ধান্ত রাশিয়ার গোয়েন্দাবৃত্তি কমাতে সাহায্য করবে এবং দেশটির নিরাপত্তাও ঝুঁকিমুক্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক গড়তে প্রস্তুত। তবে রাশিয়ার সরকারের ব্যবহার বদলালেই কেবল তা সম্ভব। চলতি মাসে যুক্তরাজ্যে সাবেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালরে ওপর ‘নার্ভ এজেন্ট’ (স্নায়ুতে আঘাত হানতে সক্ষম বিষাক্ত বাসায়নিক পদার্থ) হামলা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসবেরিতে ‘রাশিয়া মিলিটারি গ্রেড নার্ভ এজেন্ট’ দিয়ে বাবা ও মেয়ের ওপর হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ওই হামলা ছিল রাসায়নিক অস্ত্র বিস্তার হ্রাস চুক্তিভঙ্গের একটি নজির। যুক্তরাজ্যের ২৩ রুশ কূটনৈতিককে বহিষ্কারের পর ২০টির বেশি দেশ ১শ’য়ের ওপর কূটনৈতিক বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এই প্রথম একসঙ্গে এত বেশি সংখ্যক রুশ কূটনীতিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে একসঙ্গে বহিষ্কৃত হচ্ছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কাউকে হত্যার চেষ্টাকে খুবই দুঃখজনক বলে সমালোচনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এর আগে বলেন, রুশ সরকার আমাদের সবার স্বার্থ ও রীতির বাইরে গিয়ে মহাদেশের ভেতরে ও বিশ্বব্যাপী বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। ইউরোপের একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সঙ্গে এই হুমকি প্রতিরোধ করবে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ৮০ রুশ কূটনৈতিক বহিষ্কার করেছিলেন। ২০১৬ সালে বারাক ওবামা প্রশাসন হিলারি ক্লিনটনের ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারে হ্যাক করার অভিযোগে ৩৫ কূটনীতিক বহিষ্কার করে। মস্কো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
×