ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি সিটের সুবিধা পায় না গরিবরা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ মার্চ ২০১৮

বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রি সিটের সুবিধা পায় না গরিবরা

নিখিল মানখিন ॥ বেসরকারী হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য নির্ধারিত ফ্রী সিট সুবিধা বাস্তবায়ন করার তাগিদ দিয়েছে সরকার। দেশের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে ফ্রী সিট সুবিধা নেই বলে অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এ তাগিদ দেয়া হয়। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে মোট শয্যার ১০ শতাংশ শয্যা গরিবদের জন্য ফ্রী রাখার বিধি থাকলেও সেটি কেউ মানছে না। এতে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন না অনেক দরিদ্র রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালায় লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে বলা আছে, হাসপাতাল-ক্লিনিকে ১০ শতাংশ বেড দরিদ্রদের ফ্রী দিতে হবে। লাইসেন্স গ্রহণের সময় এ অঙ্গীকার করেও পরে এই নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ত্রুটি এখানেও আছে। গরিবদের ফ্রী বেড দেয়া হলেও তাদের অন্যান্য চিকিৎসা খরচ কে বহন করবে সে সম্পর্কে নীতিতে কিছু বলা হয়নি। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে গরিবের ফ্রী বেড আছে এ তথ্যটি জানেন না অনেকেই। সূত্র আরও জানায়, দেশের শতকরা ৭০ ভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ফ্রি সিট ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে না। প্রথম শ্রেণীর বেসরকারী হাসপাতালগুলোর মধ্যে আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৫শ’ রোগী শয্যা। কিন্তু এ হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য ফ্রী সিটের ব্যবস্থা নেই। এভাবে ৩০৪ বেডের ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতাল, ১৮০ বেডের ঢাকা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ১২৫ বেডের চট্টগাম চন্দ্রঘোনার খ্রিস্টান হাসপাতাল, ১শ’ বেডের ঢাকার সিকদার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের অধিকাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য ফ্রী সিটের ব্যবস্থা নেই। সূত্র মতে, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের জন্য স্থাপিত হাসপাতালগুলোয় ১০ শতাংশ ফ্রী বেড দেয়ার বিধান থাকলেও অন্যান্য প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতাল এর আওতায় নেই। তবে মেডিক্যাল কলেজ মালিকরা যেন গরিবদের ফ্রী বেডে চিকিৎসার সুযোগ দেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু এ বিষয়টিই নয়, সব ধরনের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানায়, ফ্রী সিটের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা আইসিডিডিআরবি (কলেরা হাসপাতাল। এই হাসপাতালের ৩০০ বেডের মধ্যে সবগুলোই ফ্রী। এভাবে সিলেটের জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া হাসপাতালের ৮৯০ বেডের মধ্যে ফ্রি বেড ৯, বারডেমের ৫৯৬ বেডের মধ্যে ১১৮, ঢাকা আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেডের মধ্যে ২৯০, ঢাকা উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ বেডের মধ্যে ২০০, উত্তরা ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪০০ বেডের মধ্যে ৮০, সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনূস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪০০ বেডের মধ্যে ৪০, সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল এমসি এ্যান্ড হাসপাতালের ৪০০ বেডের মধ্যে ১২০, ঢাকা উত্তরা মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এ্যান্ড হাসপাতালের ৩৫০ বেডের মধ্যে ৫০, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের ২৫০ বেডের মধ্যে ৭৫, সিরাজগঞ্জের বিএনএসপি হাসপাতাল ১০০ বেডের মধ্যে ২০ ফ্রি বেডের সুবিধা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশে বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসা কাঠামো পরিচালনায় ৩৩ বছর আগে প্রণীত অধ্যাদেশ বহু আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে। ওই আইনের প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক অসঙ্গতি। এত দীর্ঘ সময়েও বেসরকারী খাতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারেনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আর এ সুযোগে যাচ্ছেতাই অবস্থা চলছে বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে। সেবামূল্যও আদায় করছে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসায় অত্যধিক ব্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রে টাকা খরচ করেও মিলছে না সেবা। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে মোট শয্যার ১০ শতাংশ শয্যা গরিবদের জন্য ফ্রী রাখার বিধি থাকলেও সেটি কেউ মানছে না। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে না। আইন নেই, থাকলেও কার্যকারিতা নেই- এ দোহাই তো অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরী চিকিৎসা ও নির্দিষ্ট পরিমাণ সেবা গরিবদের বিনামূল্যে দিচ্ছে না। এর দায়ে প্রায় সবক’টি প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়। জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে ‘বেসরকারী চিকিৎসাসেবা আইন’ শিরোনামে নতুন একটি আইন করার উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বছরের পর বছর ধরে ওই আইনের খসড়াটি মন্ত্রণালয়ে ঝুলছে। প্রতি বছর শুধু সাল পরিবর্তন করে খসড়া তোলা হয়। পরে আবারও তা হিমাগারে চলে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
×