ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডি

সিঙ্গাপুরে কবিরের পা কেটে ফেলা হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৮ মার্চ ২০১৮

সিঙ্গাপুরে কবিরের পা কেটে ফেলা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত কবির হোসেনের ডান পা কেটে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে প্লেন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোমবার রাতেই সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতালে কবির হোসেনের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আমরা কবির হোসেনের বিষয়ে এখানে থাকা অবস্থায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সে সিদ্ধান্তেই সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার ডান পায়ের হাঁটুর পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। বাঁ পায়ের বিষয়েও সেখানকার চিকিৎসকরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে গত শনিবার সকালে বোর্ড মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবারের সম্মতিক্রমে এবং ইউএস-বাংলার তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত তিনি ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সামন্তলালের ব্রিফিং ॥ এদিকে এক সংবাদ সন্মেলনে ঢাকা মেডিক্যালের ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান-নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় আহত শাহীন ব্যাপারী সেপটি সিনিয়া শকে মারা গেছেন। ব্ল্যাডে ইনফেকশন ঢুকলে সেপটি সিনিয়া শকে মৃত্যু হয়। সেপটি সিনিয়া শকের ব্যাখ্যা দিয়ে ঢামেকের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রবিউল করিম খান (পাপন) বলেন-শাহীন ব্যাপারীর মৃত্যু হয়েছে সেপটি সিনিয়া শকের কারণে। এক্ষেত্রে রোগীর দেহের অভ্যন্তরে রক্তের ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়, যে কারণে ধীরে ধীরে রোগীর দেহের লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অর্গ্যান ড্যামেজ হয়ে রোগী মৃত্যুবরণ করে। আমি সারাদিন শাহীন ব্যাপারীর পাশে ছিলাম। তার ড্রেসিং ও অন্যান্য চিকিৎসা চলমান ছিল। এরইমধ্যে তার মৃত্যু হয়। নেপাল থেকে আসা সাতজন আহত যাত্রীর মধ্যে একজন শাহীন ব্যাপারী। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোমবার। পরিবারের সদস্যরা তার লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করেন। এদিকে আরেক আহত রোগী কবির হোসেন সম্পর্কে ডাঃ সামন্তলাল সেন বলেন, এর আগে কবির হোসেনকে সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা নিয়ে যান। সেখানে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে। এটি এখানে থাকা অবস্থায় আমরা কাটার কথা বলেছিলাম, পরিবারের সদস্যরা রাজি হননি। পরে সেখানে যাওয়ার পর সেখানের চিকিৎসকরাও তার পা কেটে ফেলার ব্যাপারে মত দেন। তারা এখন তার অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া আমাদের এখানে ভর্তি রোগীরা ভাল আছেন। তারা হলেন, শাহরিন আহমেদ, আলীমুন নাহার এ্যানী, সৈয়দ রাশেদ রবাইয়াত, কামরন নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান। তাদের সবার অবস্থা এখন ভাল। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দৃষ্টি রয়েছে। তাই আমরা তাদের যখন তখন ছেড়ে দিতে পারি না। আজ বুধবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাদের দেখতে আসবেন। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বর্ণাসহ অন্যদের কাশির কফে যে কালো রং হচ্ছিল, সেটা এখন অনেকটা কেটে গেছে। স্বর্ণার ভাই সৈয়দ আতাউর রহমান পান্না বলেন, এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল। স্বর্ণার কফের সঙ্গে আর কালো রং নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন কথা বলি, তখন তিনি ভালই কথা বলেন, স্বাভাবিক থাকেন। কিন্তু যখন একা থাকেন, তখন যে ভাল থাকেন না, তা আমরা বুঝতে পারছি। উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭১ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১। এতে নিহত হন ৫১ জন। তাদের মধ্যে ২৮ জনই বাংলাদেশী। তাদের স্মরণে ১৫ মার্চ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়।
×