ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুচলেকার শর্তে বিজিএমইএর সময়ের আবেদন বিবেচনার আশ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৮ মার্চ ২০১৮

মুচলেকার শর্তে বিজিএমইএর সময়ের আবেদন বিবেচনার আশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হাতিরঝিলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না- সংগঠনটির কাছ থেকে এমন মুচলেকা পাওয়ার শর্তে সময়ের আবেদন বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে আপীল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় স্কুল-কলেজের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নির্দেশনামূলক সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে না এটি কোরআন শরীফের কোথায় আছে তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিষয়ে দায়ের করা রিটকারী আইনজীবীর প্রতি এমন প্রশ্ন করেছে আদালত। ‘স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত গাইবে, আর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গাইবে না, এটা তো হতে পারে না। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গেলে যখন বিদেশীরা জাতীয় সঙ্গীতের বিষয় জানতে চাইবে, তখন শিক্ষার্থীরা কী জবাব দেবে? ব্রিটিশ আমলে আমরা ইংরেজী না শিখে পিছিয়ে পড়েছিলাম। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিতে এ ধরনের রিট করা হয়েছে। মঙ্গলবার আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না- সংগঠনটির কাছ থেকে এমন মুচলেকা পাওয়ার শর্তে সময়ের আবেদন বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে আপীল বিভাগ। এমন আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ মামলাটি নট টুডে (আজকে নয়) রাখেন। আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। এর আগে বহুতল ভবন ভাঙতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মতো আরও একবছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। পরে ২৫ মার্চ এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এই বিষয়ে আদেশের জন্য ২৭ মার্চ দিন ঠিক করেছিলেন আপীল বিভাগ। শুনানির শুরুতেই বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আপনারা তো বারবার আসেন। ইউ আর পেন্ডয়িং উইথ কোর্ট অর্ডার। এটা সো আনফরচ্যুনেট। আপনার নিজেরও তো বিষয়টি নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে দ্বিধা হওয়ার কথা। আমাদের লজ্জা লাগে। আদালতের প্রেসটিজ চলে যাবে আর আপনি আপনার ক্লাইন্টের জন্য আসবেন এটা হতে পারে না। আদালতের আদেশ পালন করা কি দরকার ছিল না? সময় কতবার নিয়েছেন, এরপর আবার বলবেন আবার আসবেন। বারবার আসতেই থাকবেন। উত্তরে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার সময় চাওয়া হয়েছে। তখন আদালত বলেন, ভবন ভাঙতে এ পর্যন্ত কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?’ জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো স্পেস খুঁজছি, কি পদক্ষেপ নিয়েছি সেটা আবেদনেও আছে।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘যে স্টেপ নিয়েছেন তাতে তো মনে হচ্ছে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। আবারও সময় চাইতে আসবেন!’ জবাবে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘সমস্যায় পড়লে তো আদালতে আসতে হয়। ক্লাইন্টের জন্যই তো আমাকে সময়ের আবেদন করতে হয়। এটা তো আমার প্রফেশনাল ডিউটি। এ সময় আদালত বলেন, ‘প্রফেশনাল ডিউটি সেকেন্ডারি। প্রথম হচ্ছে আদালতের ডিউটি। আপনারা (বিজিএমইএ) খুব বুদ্ধিমান। কারণ এক সঙ্গে কোথাও এত বড় স্পেস পাবেন না। আর তখন কোর্টে আসবেন সময়ের জন্য। এ বুদ্ধি নিয়ে তো থাকেন। বিজিএমইএর অফিস কত স্কয়ার ফিট? ৬০ হাজার স্কয়ার ফিট,’ জবাবে বলেন কামরুল হক সিদ্দিকী। তখন আদালত বলে, ৬০ হাজারের স্কয়ার ফিটের ভবন পাবেন কোথাও? আর কোর্ট কি অর্ডার বাস্তবায়নের কথা বলে দেবে? কোর্ট শুধু আদেশ দেবে। আর আদেশ পালন না হলে কনটেম্পট রুল দেবে। শেষ এক বছরে কি স্টেপ নিয়েছেন?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘১১০ কাঠা জমি আমরা পারচেজ করেছি। তখন আদালত বলে, এভাবে তো পাঁচ বছর লাগবে। কারণ এখন বলছেন, পাইলিং হচ্ছে। কয়দিন পর বলবেন বেজমেন্ট হচ্ছে। কামরুল হক বলেন, না, মাই লর্ড; বেশি সময় লাগবে না। আদালত বলে, তাহলে আপনাদের আন্ডারটেকিং দিতে হবে যে, আর সময় চাইবেন না। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘তাহলে সময় দেন। এ সময় আদালত বলে, তাহলে নট টু ডে রাখলাম। রিট খারিজ ॥ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় স্কুল-কলেজের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের নির্দেশনামূলক সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে তৈমুর আলম খন্দকার জানান, ১৮ জানুয়ারি সরকার একটি সার্কুলার জারি করে। এই সার্কুলারের মাদ্রাসার অংশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কুড়িগ্রাম রাজারহাটের ছাকিরপাড়া তালুক গ্রামের লোপাজ উদ্দিন ব্যাপারির ছেলে ও সুখদেব ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম মিয়া ও ঢাকার পূর্ব কদমতলীর মেরাজনগরের বাসিন্দা আদেল উদ্দিন শেখের ছেলে মনির হোসেন স্বাধীন শেখ। আবেদনকারীদের দাবি, ১৯৭৮ সালের বিধান অনুসারে কেবল স্কুলেই দিনের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। মাদ্রাসা শরিয়ত মোতাবেক চলে। এখানে কোন প্রকার সঙ্গীতের প্রতিযোগিতা অনুমোদন করে না। রিটের শুনানিতে আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলে, ‘আপনি দেখান পবিত্র কোরানের কোথায় আছে, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে না? পবিত্র কোরানের কোথাও নেই যে, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে না। আগে তো মাদ্রাসার সিলেবাসে অঙ্ক, ইংরেজী, বিজ্ঞান বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। যুগের চাহিদা অনুযায়ী সে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রকারান্তরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার জন্যই এ রিট করা হয়েছে। এরপর আদালত তার এক আদেশে রিটটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে আদেশ দেয়।
×