ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষা ॥ কাল থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ মার্চ ২০১৮

এইচএসসি পরীক্ষা ॥ কাল থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্বিঘœ করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন কোন কোচিং সেন্টার সচল রাখা যাবে না। লিখিত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। এছাড়া মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ, কেন্দ্র সচিব ছাড়া আর কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে আসতে পারবেন না। ট্রেজারি বা থানা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিতে হবে। গেল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষাপটে আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের নিয়ে তাই সতর্ক অবস্থানে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের নতুন সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এবং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি হবে। এদিকে পরীক্ষাকে নির্বিঘœ করতে সবাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতার আশ্বাস ছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এবারের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয়ের নেয়া নতুন পদক্ষেপগুলোও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী আজ দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন ড. প্রিয়ব্রত পাল, অধ্যাপক ড. পি এম সফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক জুনায়েদ হালীম, ড. এ কে এম সালাউদ্দিন এবং ড. আমিনুর রহমান সুলতান। এদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামীকাল থেকেই কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এসএসসিতে একই কথা বলে কোচিং বন্ধ রাখা হলেও প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যায়নি একথা স্বীকার করছেন কর্মকর্তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জাবেদ জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এবং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বেশকিছু সিদ্ধান্তের বিষয়ে আজ আদেশ জারি হবে। তার মধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে এইচএসসি পরীক্ষার সময় শুধু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোচিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোচিং সেন্টার খোলা রাখতে পারবে। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষা-সংক্রান্ত জাতীয় তদারক কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেগুলোই আদেশ আকারে জারি করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ, কেন্দ্র সচিব ছাড়া আর কেউ মোবাইল ফোন কেন্দ্রে না আনতে পারবে না। তবে কেন্দ্র সচিবও শুধু একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া এবার ট্রেজারি বা থানা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিতে হবে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে। এ ছাড়া কোন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা, তার সেট নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলেছেন, পরীক্ষার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৯ মার্চ থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়াও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনে আরও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। তবে কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কোচিং এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব আরেফিন। তার দাবি, কোচিং সেন্টার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত না হলেও পরীক্ষার আগে তা বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে আমরা আর্থিকভবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। উল্লেখ্য, আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলবে ১৪ মে পর্যন্ত। কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ ওএসডি ॥ অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের অভিযোগ ওঠা রংপুরের কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ মিয়াকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। একই সঙ্গে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা শিক্ষকদের পক্ষে থাকা উপাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাককেও ওএসডি করা হয়েছে। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে। আদেশে যদিও বলা হয়েছে, অবসর গ্রহণের সুবিধার্থে ওই দুজনকে ওএসডি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল লতিফ মিয়া আগামী আগস্টে অবসরে যাবেন। মূলত কলেজের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণেই তাকে আগেভাগে ওএসডি করা হয়েছে। আবদুল লতিফ মিয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ভায়রা ভাই। আগামী জুন মাসে উপাধ্যক্ষের অবসরে যাওয়ার কথা। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিবাদে ওই কলেজের শিক্ষকেরা প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন করছেন। এতে কলেজটিতে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছিল। শিক্ষকদের একটি অংশের দাবি ছিল, ওই অধ্যক্ষকে সরাতে হবে।
×