ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় বললেন প্রধানমন্ত্রী ॥ বাংলাদেশ অবশ্যই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার;###;‘স্বাধীনতার সুফল আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছাবই’

ওদের ঠেকাতে হবে ॥ স্বাধীনতা ব্যর্থ করতেই ওরা ক্ষমতায় আসতে চায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ মার্চ ২০১৮

ওদের ঠেকাতে হবে ॥ স্বাধীনতা ব্যর্থ করতেই ওরা ক্ষমতায় আসতে চায়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করে দিতে চায় তারা যেন কোনদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হয়ে না যায়। আর যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায় তারা যেন কোনদিন এদেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে। বাংলাদেশে কোনদিন জঙ্গী-সন্ত্রাসী-যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থান হবে না, বাংলাদেশ অবশ্যই হবে মুক্তিযোদ্ধাদের, মুুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুফল আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবই। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের কথা তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত ছিলেন, দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এমনকি এতিমের টাকা পর্যন্ত আত্মসাত করেছেন। এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে মামলা হলে বিচারে আদালতের মাধ্যমে শাস্তি পেয়েছেন। এখানে আমাদের কী করার আছে? যদি তাকে (খালেদা জিয়া) গ্রেফতার করতেই হতো তবে নির্বিচারে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার সময়ই করতে পারতাম। আসলে বিএনপি আইন-কানুন, আদালত কিছুই মানে না। ক্ষমতায় থাকতে এবং ক্ষমতার বাইরে থেকে মানুষ হত্যা ও ষড়যন্ত্র করাই বিএনপির একমাত্র চরিত্র। ওয়ান ইলেভেনের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের কারণেই এ দেশে ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়। তখন আমি বিরোধী দলের নেতা হওয়ার পরও আমাকে আগে গ্রেফতার করা হয়। এর সঙ্গে কে কে জড়িত আজ আমরা তা জানি, এর হিসাবটা আমরা পরে নেব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া যারাই ক্ষমতায় থেকেছেন তারা সবাই নিজেদের ভোগ-বিলাস ও অর্থ সম্পদের মালিক হতে ব্যস্ত থেকেছে। দেশের মানুষের দিকে তাদের তাকানোর কোন সময় ছিল না। এ কারণে বাংলাদেশ ওই সময়টায় আর এগোতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন ও সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম না উল্লেখ করে বলেন, দেশে একজন প্রাইজ পাওয়া ব্যক্তি রয়েছেন। প্রাইজ পেয়েও একটি ব্যাংকের এমডির পদের লোভ তিনি সামলাতে পারেননি। আদালতে হেরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তদ্বির করে ওই ব্যক্তিটি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে ভূমিকা রাখেন। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আমার নয়, আমার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কোথাও দুর্নীতির অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় কি না, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে চেষ্টা করেছে, এমনকি ওই ব্যক্তিটিও (ড. ইউনুস) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন। কেউই আমাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু খুঁজে পায়নি। কানাডার আদালত রায় দিয়ে বলেছে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সবই ভুয়া। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার যে দুর্নীতি করে না তা মুখের কথা নয়, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সফলতার চিত্র তুলে ধরার সময় পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগে জড়িয়ে পড়েন তার কন্যা শেখ হাসিনা। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর এত বছর পর আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ পেলাম। মনে মনে ভাবি নিশ্চয়ই হয়তো আব্বা (জাতির পিতা) বেহেস্ত থেকে দেশ ও দেশের মানুষের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা দেখতে পারছেন। দেশের একজন মানুষও আজ না খেয়ে থাকে না, দেশের কোন মানুষ এখন কুঁড়ে ঘরে থাকে না। দেশের কোন ঘর আগামীতে অন্ধকারে থাকবে না, প্রত্যেক ঘরে আমরা আলো জ্বালাব। স্বাধীনতার সুফল আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ক্ষমতার পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন এবং ক্ষমতার বাইরে থাকতে তিনটি বছর ধরে আন্দোলনের নামে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারা সারাদেশে দুঃশাসন চালিয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। বাংলা ভাই সৃষ্টি, একযোগে দেশের ৫শ’স্থানে বোমা হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। আবার নির্বাচন ঠেকানো ও আন্দোলনের নামে ক্ষমতার বাইরে থাকতেও বিএনপি-জামায়াত জোট দেশজুড়ে নারকীয় নাশকতা-ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে তারা পুড়িয়েছে, সাড়ে ৫শ’র মতো মানুষকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করেছে। দেশের জনগণ তাদের অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলা করে নির্বাচনে ভোট দিয়েছে বলেই দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়ন-অগ্রগতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইসঙ্গে সরকারী চাকরিজীবীদের ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি পৃথিবীর কোন সরকার কোনদিন করতে পারেনি। বিএনপি আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৩৪৩ মার্কিন ডলার, এখন যা এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির আমলে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ ভাগ থেকে এখন তা ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। বিএনপির আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬৬ হাজার ৫শ’ কোটি। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেট পৌঁছেছে ৪ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায়। বিএনপির আমলে উন্নয়ন বাজেট ছিল মাত্র ১৯ হাজার কোটি টাকার। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ চিত্র দেখলেই দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হবে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি দেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ও উন্নত জীবন দেয়া। এটাকে আমার দায়িত্ব হিসেবে নিয়েই দেশের মানুষের জন্য করে যাচ্ছি। অর্থ সম্পদের জন্য অনেকে মারামারি-কাটাকাটি করেন। কিন্তু অর্থ সম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন না, সবকিছু ফেলে রেখেই চলে যেতে হয়। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, একটা মানুষও না খেয়ে থাকবে না- এটাই আমার প্রধান লক্ষ্য। কী পেলাম সেটি বড় কথা নয়, দেশের মানুষের জন্য কতটুকু দিয়ে যেতে পারলাম- সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, দেশকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা থেকে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বাঙালী জাতিকে শোষণ-বঞ্চলা থেকে মুক্তি দিতে সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার জীবনের মূল্যবান সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারে। বাঙালির প্রতি পাকিস্তানের চরম বৈষম্য তিনি কোনভাবেই মেনে নেননি। বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীনতার সকল প্রস্তুতি অনেক আগ থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনিই এই পূর্ববঙ্গের নাম বাংলাদেশ রাখেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান নিশ্চিত ছিল নির্বাচনে বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন মাত্র দুটি ছাড়া সব আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। নির্বাচনে তাই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জানতেন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও ক্ষমতা দেবে না, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। যুদ্ধ করতে হলে কী কী করণীয়, কী প্রয়োজন তার সবকিছুই বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন। অস্ত্র প্রয়োজন, ট্রেনিং প্রয়োজন, শরণার্থীরা কোথায় যাবেন, পরবর্তীতে কী হবে তাও ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে লন্ডনে বসেই ঠিক করে রেখেছিলেন জাতির পিতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা তো বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চেই দিয়ে গেছেন। জনগণের ভোটে ম্যান্ডেট নিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার অধিকার বঙ্গবন্ধু অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার মেসেজও আগেই তৈরি ছিল। হানাদারদের হামলার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মেসেজ ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সব জায়গায় পৌঁছে দেয়া হয়। আর বাংলাদেশের পতাকার ডিজাইনও বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছিলেন। জাতীয় সঙ্গীত কী হবে সেটাও বঙ্গবন্ধু ঠিক করে দিয়ে যান। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়। তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে ৩ বছরে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করে এ মর্যাদা অর্জন কোন সাধারণ ঘটনা নয়। পৃথিবীর কোন দেশের কোন নেতা এটা করতে পারেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র দেশ যেখানে মিত্রবাহিনী ফেরত গেছে। পৃথিবীর কোন দেশ থেকে মিত্রবাহিনী ফেরত যায়নি। বাংলাদেশ একমাত্র ব্যতিক্রম। স্বাধীনচেতা নেতা ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদর-আলশামস, যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, নিষিদ্ধ করা রাজনীতি ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়। এটা শুরু করেছিল সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান। যিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তিনি কখনও কোন যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানাতে পারেন না। কোনদিন করবেও না।
×