ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় কারণে বাড়ছে রডের দাম

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৭ মার্চ ২০১৮

 ছয় কারণে বাড়ছে রডের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্মাণ খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ রড। গত তিনমাসে এই নির্মাণ সামগ্রিটির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানত ছয় কারণে বেড়েছে রডের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকের সুদের হার ও ডলারের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুত এবং চট্টগ্রাম বন্দরে মাল খালাসের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে হঠাৎ করেই বেড়েছে রডের দাম। অটো রি-রোলিং এ্যান্ড স্টিল মিলস এ্যাসোসিয়েশন, রিহ্যাব ও মিল মালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত তিন মাসে রডের কাঁচামালের (রডের কাঁচামাল বিলেট, আর বিলেটের কাঁচামাল মিলটিং স্টেপ) দাম ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ৪৩০ ডলার হয়েছে। এতে রডের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। দেশে ডলারের দাম ৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪/৮৫ টাকা হয়েছে। বেশি দামে ডলার কেনায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং সামনে আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। গত জানুয়ারি মাসে পরিবহন সংক্রান্ত একটি এসআরও জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনে মালবাহী গাড়ি ১২ টনের বেশি পণ্য বহন করতে পারবে না। আগে প্রতিটি মালবাহী গাড়ি সর্বোচ্চ ২৫ টন পর্যন্ত মাল বহন করতো। এতে গাড়ি ভাড়া একই থাকলেও মাল বহন করতে হচ্ছে অর্ধেক। ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। পঞ্চম, চট্টগ্রাম বন্দরে মাল খালাসের জন্য প্রতি কন্টেনারে ৫৪ হাজার ৬০০ টাকা করে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরে আগে জাহাজ থেকে সরাসরি মাল খালাস করে ট্রাকে উঠানো হতো। বর্তমানে কন্টেনার ডেলিভারি না করে ডিপোতে স্থানান্তর করা হয়। এতে করে প্রতি কন্টেনারে ডিপো চার্জ সাড়ে ৭ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। ফলে, টনপ্রতি মাল খালাসের খরচ বেড়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ষষ্ঠত ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হয়ে গেছে। রডের দাম বাড়ার পেছনে এসব কারণকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দাম কমাতে সরকারের করণীয় পরামর্শ ॥ সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবহনের ওপর জারি করা সরকারের এসআরও আপাতত স্থগিত রাখা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার ডিপোতে স্থানান্তর না করে সরাসরি ডেলিভারির ব্যবস্থা করা। দেশীয় ব্যংকের ঋণের সুদের হার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া এবং ডলারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। গত এক মাস ধরে গাজীপুরের টঙ্গী শিল্প কারখানায় গ্যাস নাই। ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে। সেখানে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং এ্যান্ড স্টিল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত তিন মাসে রডের কাঁচামালের দাম বেড়েছে টন প্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ ডলার। দেশে ডলারের দাম ৭৮ থেকে বেড়ে ৮৪ টাকা হয়েছে। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বরং রডের দাম যতটুকু পরিমাণ বাড়ার কথা সে তুলনায় বাড়েনি। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং এ্যান্ড স্টিল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি কন্টেনারের জন্য নতুন করে ৬৫০ ডলার সারচার্জ দিতে হচ্ছে। এতে টন প্রতি খরচ বেড়েছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আগে যে গাড়িতে করে ২৫ টন মাল বহন করা যেত, এখন সেই গাড়িতে ১২ টন মাল পরিবহন করতে হয়। ফলে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কাঁচামাল ও ডলারের দাম বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম বন্দর সারচার্জ আরোপ এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সর্বসাকুল্যে রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। বিপরীতে দাম বেড়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। ফলে দাম আরও বাড়ার কথা। বর্তমানে রডের দাম ॥ ৬০ গ্রেডের রডের প্রতি টনের বাজার মূল্য প্রায় ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৫৪ থেকে ৫৭ হাজার টাকা। অথচ টিসিবি হিসেবেও এক সপ্তাহ আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ছিল ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা, ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৫১ হাজার টাকা। আর এক বছর আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫২ হাজার আর ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৪২ থেকে ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরে রডের বাজার মূল্য প্রতি টনে বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ ব্যাপারে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পরবে। যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
×