ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির সব কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে লিডসাস। সামনে বেশ কিছু দেশে নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাবার কথা আমার এবং সেখানে দেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরব। নিয়ে আসতে চেষ্টা করব আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ। আমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ দেয়ার মতো দক্ষত

লিডসাস নিয়ে ওয়াইএসআইয়ে সাদিক

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৭ মার্চ ২০১৮

লিডসাস নিয়ে ওয়াইএসআইয়ে সাদিক

বাংলাদেশের তরুণদের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। ভেবে দেখুন, একটা ছেলে সমাজের সকল বাঁধাকে পরাভূত করে বিশ্বজুড়ে উদ্যোক্তাদের অন্যতম সুবৃহৎ প্ল্যাটফর্ম ওয়াইএসআইয়ের বাংলাদেশ অঞ্চলের মিডিয়া এ্যান্ড আউটরিচ ডিরেক্টর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। নাম সাদিক আল সরকার, সম্প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ বছরের জানুয়ারিতে আমন্ত্রণ পান গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ বুটক্যাম্প- এ অংশ নেয়ার। আয়োজনটি হয় থাইল্যান্ডে। এ ছাড়াও গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ বুটক্যাম্প (জিইবি), ওয়াইএসআই, হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিউচার সিটি সামিট (এফসিএস)-প্রতিষ্ঠানসমূহের বাংলাদেশ রিজিওন এর অফিসিয়াল পার্টনার এবং আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম সংস্থা হাব গ্লোবালের ডিজিটাল পার্টনার নির্বাচিত হয়েছে সাদিক-এর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান লিডসাস। আজ জানব তার কথা, সাক্ষাতকার নিয়েছেন- বেনজির আবরার। ডিপ্রজন্ম : উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহের কথা প্রথম যেভাবে মাথায় এলো..? সাদিক আল সরকার : একটা মানুষের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছে ছাড়াও বিভিন্ন কারণ থাকে। চলার পথে অর্জিত নানা অভিজ্ঞতা তাকে বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।চিন্তা করছিলাম কি করা যায়। তখন ২০১৫-এর প্রথম দিকের কথা- লক্ষ্য করলাম জননিরাপত্তা বা ডিজিটালাইজেশন নিয়ে দেশের কোন প্রতিষ্ঠানই পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করছে না। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম যে, একটা আধুনিক প্রতিষ্ঠানের যে সার্ভিসগুলো প্রয়োজন- তা কেউই একসঙ্গে দিচ্ছে না। অতঃপর কী কী সার্ভিস থাকলে কমপ্লিট ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান, তথা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা একটি প্রতিষ্ঠান গড়া সম্ভব, সেগুলো তালিকাভুক্ত করতে থাকি। অতঃপর আমি ও আমার টিম লিডসাস একটি কমপ্লিট কনসেপ্ট নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হলাম- যেখানে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি যে কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন সম্ভব হবে। আর এভাবেই জন্ম হলো লিডসাস লিমিটেডের। ডিপ্রজন্ম : ওয়াইএসআইয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ যেভাবে পেলেন, সংগঠনটির কাজ যদি পাঠকদের জন্য বিস্তারিত জানাতেন? সাদিক আল সরকার : বর্তমানে উদ্যোক্তা হওয়ার পথটি বেশ কণ্টকাকীর্ণ। এ পথে পদে পদে রয়েছে বাধা। তাহলে কি এই তরুণ উদ্যোক্তাদের সঠিক পথের দিশা দেয়ার কেউ নেই? না, অবশ্যই আছে। বিভিন্ন সংগঠনই বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে, তাদের উদ্যোগগুলো সফল করে তোলার লক্ষ্য অর্জনে। তেমনই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হলো ওয়াইএসআই, যার পুরো নাম ইয়াং সাস্টেইনেবল ইমপ্যাক্ট। প্রকৃতপক্ষে ওয়াইএসআই কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে। প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে বেছে সেরা ২৫ জন উদ্যোক্তাকে তুলে আনে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের কাজের পরিধিকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে ওয়াইএসআইয়ের বাংলাদেশ, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও কানাডা অঞ্চলের অপারেশন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উন্নত ৪টি দেশের পাশে একমাত্র উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে ওয়াইএসআই বাংলাদেশ তার যাত্রা শুরু করে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর মূল উদ্দেশ্য ছিল আগের মতোই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা। ওয়াইএসআই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য এ দেশের ২৫ বছরের কম বয়সী তরুণ উদ্যমী ও সৃজনশীল জনগোষ্ঠীকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। সংগঠনটির মিডিয়া এ্যান্ড আউটরিচ বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে সুযোগ পাওয়াটা স্বপ্নের মত, তারা আমাকে সুযোগটা দেয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। ডিপ্রজন্ম : উদ্যোক্তা হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছেন। সে সম্পর্কে শুনতে চাই। সাদিক আল সরকার : উদ্যোক্তা হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য এ বছরের জানুয়ারিতে আমন্ত্রণ পাই গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ বুটক্যাম্প- এ অংশ নেয়ার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অয়া ইনকরপোরেশন আয়োজনের ও এমআইটির সহায়তায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনটি এবার অনুষ্ঠিত হয় থাইল্যান্ডে। বিশ্বজুড়ে নানা প্রান্ত থেকে তরুণ উদ্যোক্তারা আমন্ত্রণ পাই এখানে। সারাবিশ্বের এত বড় বড় উদ্যোক্তাদের কাছে দেশকে প্রতিনিধিত্বের আলাদা একটা গর্ব হয়েছিলো সেখানে। অনেক বড় বড় মানুষের সঙ্গে সরাসরি দেখা করাটা আর কথা বলে পরামর্শ নেয়ার সুযোগটা ছিল অসাধারণ। ডিপ্রজন্ম : আপনার প্রতিষ্ঠিত ‘লিডসাস’ এর বর্তমান অবস্থা? সাদিক আল সরকার : কাঠামোগত দিকগুলো বিবেচনা করলে লিডসাস লিমিটেডকে একটি বহুমুখী কাঠামোসম্পন্ন কমপ্লিট ডিজিটালাইজেশন বিপ্লবের প্রতিষ্ঠান বলা চলে। লিডসাস ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এখানে রয়েছে আলাদা পরিকল্পনা বিভাগ, যেখানে সময়োপযোগী পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির চাহিদা ও মতামতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে স্বতন্ত্র ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বিভাগ, গ্রাফিক্স ও এনিমেশন বিভাগ, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি ইকুয়িপমেন্ট ও এ্যাক্সেসরিজসহ নানা বিভাগ। লিডসাস-এর মাঝে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। পৃথিবীর দ্রুততম মানব ক্যালকুলেটর ভানু প্রকাশের নিজস্ব সংগঠন এক্সপ্লোরিং ইনফিনিটিজ এর ডিজিটাল পার্টনার এখন লিডসাস। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির সব কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে লিডসাস। সামনে বেশ কিছু দেশে নানা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাবার কথা আমার এবং সেখানে দেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরব। নিয়ে আসতে চেষ্টা করব আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ। আমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ দেয়ার মতো দক্ষতা এদেশের তরুণদের আছে। লিডসাস এর নীতি নির্ধারণী দলের ইচ্ছা আগামী ২ বছরের মধ্যে পৃথিবীর নানা দেশে খোলা হবে লিডসাস এর কার্যালয়, সেখান থেকে দেশে পাঠানো হবে বড় বড় সব কাজের অর্ডার। ডিপ্রজন্ম : পরিবারের সমর্থন কতটুকু পেয়েছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে? সাদিক আল সরকার : আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি- পরিবার থেকে আমি সবসময়ই পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি, আমার প্রতিটা পদক্ষেপের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। যখনই আমি হতাশ হয়েছি- পরিবারই দাঁড়িয়েছে আমার পাশে। এক্ষেত্রে আমি নিজেকে ভাগ্যবানদের একজন মনে করি। তিনি আরও জানান- বাংলাদেশে সফল উদ্যোক্তা গড়ে ওঠার পেছনে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে- এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এখানে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক- এমনকি রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ডিপ্রজন্ম : বর্তমান প্রজন্ম উদ্যোক্তা হতে চায় বেশিরভাগই। যদি কোন পরামর্শ দেন তাদের জন্য- সাদিক আল সরকার : উদ্যোক্তা হতে হলে তরুণদের বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ - ব্যবসায়ের ধরন, উৎপাদন, বিপণন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সব সুবিধা-অসুবিধাগুলো খুঁজে বের করে নোট করতে হবে সবার আগে। তারপর অধ্যবসায় ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক এগুতে পারলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তরুণ উদ্যোক্তাগণকে হতাশ না হয়ে বেসিক কিছু গাইডলাইন ফলো করতে হবে। ধরুন- আপনি যে বিজনেসই প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন- সেটার ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে হবে। আরও জানতে হবে সর্বোৎকৃষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান- যা আপনার বিজনেসকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। এজন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আপনার পছন্দের বিজনেস আইডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিগণ আপনার অভিজ্ঞতা সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। আপনার আইডিয়া সম্পর্কে তাদের মতামত জানুন। তাদের কোন আইডিয়া থাকলে সেগুলোও লিখে ফেলুন। খেয়াল করুন- এদের সকলেই যে আপনাকে সঠিক তথ্য প্রদান করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে সাহায্য করবেন- এমনটা ভাবাও বাস্তবসম্মত হবে না। আপনি প্রত্যেকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নোট করে নিন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে কোন প্রকার অলসতা করবেন না- অসদুপায় তো নয়ই। দ্বিতীয়ত- আপনার সময়কে ভাগ করে নিন। প্রতিদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বিজনেসের জন্য আলাদা করে রাখুন। ছোট পরিসরে হলেও কাজ শুরু করুন এবং নিয়মিত সময় দিন। আপনার প্রতিদিনের নিয়মানুবর্তিতা-ই আপনাকে সফল করে তুলবে। তৃতীয়ত- যে কোন ব্যবসায়ের প্রাণসঞ্চার করে তার মূলধন। এক্ষেত্রে কোন উৎসের উপরই সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করা যাবে না। পরিবার থেকে আপনি শতভাগ সমর্থন নাও পেতে পারেন। এতে করে হতাশ হওয়া চলবে না। বর্তমানে এদেশে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় মূলধন সংগ্রহ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই রেগুলার আপডেটগুলো জানতে বিভিন্ন খবরের কাগজ নিয়মিত পড়ার কোন বিকল্প নেই। ডিপ্রজন্ম : ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনায় যা ভাবছেন? সাদিক আল সরকার : টিম লিডসাসের অন্যতম লক্ষ্য হলো যথাযথ প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করে উন্নত বিশ্বের আদলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের পাশাপাশি সেখানে আধুনিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা। বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে প্রযুক্তিগত সব সুবিধা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।
×