ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ দল স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল ক্রিকেট খেলে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৭ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ দল স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল ক্রিকেট খেলে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ যুগে যুগে বলের আকৃতি পরিবর্তন করা, বাড়তি সুবিধার জন্য স্বাভাবিকতা বিনষ্ট করার ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকবারই ঘটেছে। সেসব নিয়ে আলোচনাও হয়েছে, কেউ কেউ শাস্তিও পেয়েছেন। কিন্তু এবার সদ্য সমাপ্ত কেপটাউন টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার করা বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই আলোচনার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এ বিষয়ে তিন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন ও হাবিবুল বাশার তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। আকরাম ও সুজন দাবি করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক স্বচ্ছ এবং সুশৃঙ্খল। বল টেম্পারিংয়ের কোন ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোন পর্যায়ে ঘটেনি বলেই দাবি করেন তারা। আর হাবিবুল মনে করেন এটি শৈল্পিক কাজ যা বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় রপ্ত করতে পারেনি। সুজন অবশ্য জানালেন ঢাকা লীগে পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা যখন খেলেছে সে সময় অনেকবার টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এসেছিল যা প্রমাণ করা যায়নি। কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা ঘটে যখন দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছিল। ওই অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব থেকে সরে গেছেন স্টিভেন স্মিথ এবং এক টেস্টে হয়েছেন নিষিদ্ধ। তার সহকারী ডেভিড ওয়ার্নারও পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে তাদের আরও বড় শাস্তির সম্ভাবনা জোরালো। কারণ, সংবাদ সম্মেলনে টেম্পারিংয়ের অভিযোগ স্বীকার করেছেন স্মিথ। আর এটি দেশের মর্যাদাহানি এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এ দু’জনের ইন্ধনে বল টেম্পারিংয়ের দুঃসাহসিকতা দেখানো ক্যামেরন ব্যানক্রফট পেয়েছেন ৩টি ডিমেরিট পয়েন্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এ ধরনের কিছু কি কখনও কোন পর্যায়ে হয়েছে? সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বলেন, ‘কখনই না। আন্তর্জাতিক ম্যাচে তো কখনই হয়ইনি আর ঘরোয়াতে...! মূলত এইগুলা হয় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট পর্যায়ে। কিন্তু আসলে বলের আকৃতি পরিবর্তন করার মতো সেরকম কিছু দেখিনি। এখন পর্যন্ত আমাদের ছেলেদের এই জিনিসটা দেখিনি। আমরা আসলে অভ্যস্ত না, আমাদের ছেলেরা অভ্যস্ত না।’ তবে বর্তমান সময়ে ক্রিকেটে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বল টেম্পারিংয়ের কাজটা বেশ দুরূহ। এ বিষয়ে হাবিবুল আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমরা আসলে করিওনি, দেখিওনি। আসলে বল টেম্পারিং করাটা আসলে একটা শিল্প। আমাদের ছেলেরা ওই পথে কখনও হাঁটেনি। আমি যেটা মনে করি যে বলটা মেন্টেন করা। সেই বিষয়ে বোলারদের হয়ত একটু স্বাধীনতা দেয়া উচিত। এখন যদি দেখেন উইকেট অনেক ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। এখন বোলারদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন। নিয়ম কানুন সব বোলারের বিপক্ষে। আমি বলব না বলের আকৃতি বদলানো বা কোন সিরীষ কাগজ ব্যবহার করে ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করা। সেটা আমি কখনই সমর্থন করি না। বল মেন্টেন করার স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বোলারদের মনে হয় একটু স্বাধীনতা দেয়া উচিত।’ টেম্পারিংয়ের এই অভিযোগের পর এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কি কিছুটা সতর্ক হবে? ক্রিকেটারদের কাছে কোন বার্তা দেবে? এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম বলেন, ‘না, আমাদের ক্রিকেট বোর্ড থেকে এ ধরনের কোন বার্তা নেই। যেহেতু যারা খেলছে তারা সবাই খুবই সৎ। তারা সবসময় ক্রীড়াসুলভ মনোভাব নিয়ে থাকে। সবকিছু অতি সাধারণভাবেই করার মনোভাব থাকে, কখনও কোন নেতিবাচক কিছু করে কিংবা বাজে কিছু করে জয় করার বিষয়টা আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে নেই এবং থাকবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সবখানে ম্যাচ রেফারি থাকে, থার্ড আম্পায়ার ও ম্যাচে দায়িত্বপ্রাপ্ত আম্পায়াররা থাকেন। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন কথা আসেনি এবং আমার মনে হয়নি এ ধরনের কোন চিন্তা কেউ কখনও করছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের ক্রিকেট এখন খুবই সুশৃঙ্খল।’ জাতীয় দলের ম্যানেজার ও আরেক সাবেক অধিনায়ক, মিডিয়াম পেসার সুজনও আকরামের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন, ‘আমরা সব সময় স্বচ্ছ ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের এমন (টেম্পারিং করার) বিশেষজ্ঞও নাই বলতে গেলে। বাংলাদেশ পাকিস্তানী অনেক খেলোয়াড় লীগ খেলতে আসত। ঢাকা লীগে এটা অনেক হতো। অনেক অভিযোগ ছিল এটা নিয়ে। ইতিহাসা ঘেঁটে দেখলে দেখবেন যে কোন বোলার প্রথম ৫ ওভারে ৪০ রান দিত, পরে ৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে নিত। বল রিভার্স হতো এই কারণে। পাকিস্তানীরা যখনই আসত এটা হতো। ধরে নিতাম যে তারা আসলে এটা জানে বা করে। প্রিমিয়ার লীগে এখন সুযোগটা কম। তিনজন খেলত আগে, এখন একজন খেলে। বিপিএলে কিছু ক্ষেত্রে হচ্ছে না যে তা না। হয়তবা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারি না। এটা যারা করে তারা অনেক ট্যাক্টফুলি করে, অনেক পন্থা অবলম্বন করে। এটা নৈতিক না। কিন্তু অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা এটা করেছে কাজেই এটাকে খেলার অংশই বলতে হবে এখন।’
×