ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ রিক্সাচালক মোহাম্মদ আলী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৮

ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধে   প্রথম শহীদ রিক্সাচালক মোহাম্মদ আলী

নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও, ২৬ মার্চ ॥ ২৭ মার্চ, ১৯৭১। স্বাধীনতার ইতিহাসে ঠাকুরগাঁওয়ে মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের একটি দিন। ওইদিন স্বাধীনতার পক্ষে জয়বাংলা বলে শ্লোগান দেয়ার অপরাধে হানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিতে হয় শহরের রিক্সাচালক মোহাম্মদ আলীকে। সেদিন ঠাকুরগাঁও শহরে বলবৎ ছিল সান্ধ্য আইন। সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে বিচ্ছিন্নভাবে শহরে মিছিল চলে। অনেকেই ভিড় করে আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন এমপিএ ফজলুল করিমের বাসার সামনে। সে সময় ফজলুল করিম ছিলেন জেলা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক। ২৫ মার্চ ৭১ গভীর রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকায় বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল। পাকবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে বাঙালী পুলিশ, ইপিআর ও ছাত্রসহ সাধারণ মানুষকে। কিন্তু ২৬ ও ২৭ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ের জনসাধারণ এ ব্যাপারে কোন সংবাদই পায়নি। সান্ধ্য আইন জারি থাকলেও ঠাকুরগাঁওবাসী অন্যান্য দিনের মত ২৭ মার্চেও খ- খ- মিছিলে শহরের বিভিন্ন স্থানে তারা ব্যারিকেড দেয়। দুপুরে একটি মিছিল জয়বাংলাসহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায় ইপিআর ক্যাম্পের দিকে। আর একটি ছোট মিছিল শহরের কালিবাড়ি মোড়ের সামনে পৌঁছলে দক্ষিণ দিক থেকে ইপিআর বোঝাই একটি লরি ও একটি জীপ এসে থামে। জীপ থেকে নামে ইপিআর উইং কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ হোসেন ও ক্যাপ্টেন নাবিদ আলম। সামনে হানাদার বাহিনীকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে ছোট মিছিলটি। মিছিলের সামনেই বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মুখে চাপ দাড়ি মধ্য বয়সের রিক্সাচালক মোহাম্মদ আলী। হানাদার বাহিনীর সামনে মোহাম্মদ আলী বজ্রকণ্ঠে জয়বাংলা বলে শ্লোগান দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মেজর মোহাম্মদ হোসেনের ইশারায় হানাদারের রাইফেল গর্জে ওঠে। মুহূর্তে চিৎকার দিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে মোহাম্মদ আলী। মিছিলের বাকি লোক ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটে পালিয়ে যায়। পাকা রাস্তার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে মোহাম্মদ আলীর লাশ।
×