ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেপাল দুর্ঘটনায় আহত শাহিন ব্যাপারী ঢামেকে মারা গেলেন

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ মার্চ ২০১৮

 নেপাল দুর্ঘটনায় আহত শাহিন ব্যাপারী ঢামেকে মারা গেলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত শাহিন ব্যাপারী অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এ নিয়ে লাশের মিছিলে ২৯ জন যোগ হলো। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। আহত হওয়ার পর ১৫ দিন ধরে বেঁচে থাকার লড়াই করে আর পরিবারের মাঝে ফিরে আসেননি। এদিকে একই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত কবির হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, সোমবার দুপুর ২টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢামেক বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরপর ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলেন চিকিৎসকরা। শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তার মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। এর আগে দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, দুপুরে হঠাৎ শাহিন ব্যাপারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় চিকিৎসকরা তাকে সর্বোচ্চ অবজারভেশন করছেন। তাকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ হোসাইন ইমাম জানান, আজ (সোমবার) সকালে শাহিনের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, রবিবার সকালে টানা দেড় ঘণ্টা শাহিনের দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারে শাহিন ব্যাপারীর পুড়ে যাওয়া ৮০ শতাংশ জায়গায় আমরা চামড়া লাগিয়ে দিতে পেরেছি। বাকি যেটুকু থাকবে সেখানে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে। তিনি জানান, এর আগে বুধবার শাহিনের প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার হয়। এদিকে শাহিন ব্যাপারীর অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে তার স্বজনরা বার্ন ইউনিটে ছুটে আসেন। তারা চিকিৎসকদের কাছে বারবার অনুরোধ করছেন শাহিনকে উন্নত চিকিৎসায় দেশের বাইরে নেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা কিছু জানাচ্ছেন না বলে জানান তারা। গত ১৮ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহিন ব্যাপারীকে দেশে আনা হয়েছিল। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে শাহিনকে দেশে আনা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, ২১ মার্চ বার্ন ইউনিটে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা দেড় ঘণ্টা দ্বিতীয় দফায় তার অস্ত্রোপচার করা হয়। নিহতের স্বজনরা জানান, শাহিন ব্যাপারী বাংলাদেশ শান্তি সংঘের সদস্য। পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার বিক্রমপুর গার্ডেন সিটিতে মেসার্স করিম এ্যান্ড সন্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কোম্পানি থেকে বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণে নেপাল গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বান্দেগাঁও গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে শাহিন ব্যাপারী। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করতেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেলেন কবির ॥ এদিকে নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় আহত কবির হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছে। রবিবার রাত পৌনে ১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্ট থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে ইউএস-বাংলার তত্ত্বাবধানে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছে। ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রাত পৌনে ১টার দিকে ইউএস-বাংলার তত্ত্বাবধানে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে। এর আগে শনিবার (২৪ মার্চ) সকালে বোর্ড মিটিংয়ে জানানো হয়, বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ তাদের মধ্যে কবির হোসেন একজন। তার ফুসফুস ও লিভারে আঘাতের কারণে কার্যক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া ফ্র্যাকচারও রয়েছে শরীরে। তার অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। কবির হোসেনের ভাতিজা জমির হোসেন জানান, সোমবার ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত কবির হোসেন সিঙ্গাপুর উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা দেয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশী ২৮ জন। আহত ১০ বাংলাদেশীর মধ্যে প্রথম দেশে নিয়ে আসা হয় শেহরিনকে। বৃহস্পতিবার তাকে ভর্তি করা হয় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। মেহেদী হাসান সুমন, সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার এ্যানিকে দেশে আনা হয় শুক্রবার। পরে শনিবার আনা হয় শেখ রাশেদ রুবায়েতকে। রবিবার কবির হোসেন ও শাহিন ব্যাপারীকে দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল।
×