ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বল টেম্পারিং কলঙ্কে বেসামাল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ মার্চ ২০১৮

 বল টেম্পারিং কলঙ্কে  বেসামাল ক্রিকেট  অস্ট্রেলিয়া

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ একেই বলে নক্ষত্রের পতন। স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসা। এক মুহূর্তের ভুলে নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হলেন স্টিভেন স্মিথ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে সতীর্থ ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিংয়ের দায় স্বীকার করে নিজে ডুবলেন, ডোবালেন কুলীন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটকেও। বলের আকৃতি পরিবর্তন করে বোলারের বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা নতুন নয়, টেম্পারিংয়ের নৈতিক-অনৈতিক বিষয়টিও তাই বহু পুরনো। তবে স্মিথরা ছাড়িয়ে গেছেন আর সব কিছুকে। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ফিল্ডিংয়ে থাকা ব্যানক্রফট পকেট থেকে রীতিমতো সিরিশ কাগজ বের কর বল ঘষামাজা করেন! টিভি আম্পায়ার ফুটেজ দেখে বার্তা পাঠালেও ফিল্ড আম্পায়ারদের কাছে সেটি অস্বীকার করেন ব্যানক্রফট। তবে মুহূর্তে ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টা স্বীকার করেন অধিনায়ক স্মিথ! খোদ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী এটিকে ক্রিকেট, দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন স্মিথ। সহ-অধিনায়কত্ব হারান ডেভিড ওয়ার্নারও। এত বড় ঘটনা অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি স্মিথকে মাত্র এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ও ম্যাচ ফির শতভাগ, আর ব্যানক্রফটকে ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ জরিমানা করে! তবে কঠোর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তাৎক্ষণিক কেপটাউনে তদন্ত দল পাঠায়। সোমবার সিএÑএর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হতে পারেন স্মিথ। ডেভিড ওয়ার্নারসহ সিনিয়র ক্রিকেটাররা ঘটনার নেপথ্যে থাকায় তাদেরও ওপরই আসতে পারে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট বল পেয়ে পকেটে হাত দেন। সেখান থেকে হলুদ রঙের একটি টেপ জাতীয় বস্তু (সিরিশ কাগজ) বের করেন। আঙ্গুলের ভাঁজে গুঁজে নেন সেটি। এরপর বলটিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে যে পাশটাতে একটু ক্ষত হয়েছে সে দিকটায় ঘষতে থাকেন। এরপর সেই হলুদ রঙের বস্তুটি আবার পকেটে পুড়ে রাখেন। ঘটনাটি কয়েক সেকেন্ডের। কিন্তু ক্যামেরার চোখ এড়ায়নি। এরপর জায়ান্ট স্ক্রিনে বার বার ব্যানক্রফটকে দেখাতে থাকে। ব্যানক্রফট বিষয়টি লক্ষ্য করে পকেট থেকে হলুদ বস্তুটি বের করে ট্রাউজারের গিঁট খুলে ভেতর ঢুকিয়ে আড়াল করেন! ফুটেজ দেখেই টেলিভিশন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড মাঠের দুই আম্পায়ার নাইজল লং ও রিচার্ড ইলিংওয়ার্থকে সতর্ক করেন। আম্পায়াররা অবশ্য মাঠে কিছুই খুঁজে পাননি। ব্যানক্রফটকে চ্যালেঞ্জ করলে পকেট থেকে একটি সানগ্লাস কভার বের করে দেখান। পরে অবশ্য আম্পায়াররা ব্যানক্রফটের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির অভিযোগ আনেন। সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার নিজেই পকেটে সিরিশ কাগজ থাকার কথা স্বীকার করেন। প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে ক্রিকেট দল যে কান্ড করেছে, এরপর স্মিথ অধিনায়ক থাকার সব অধিকার হারিয়েছেন। আমি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সঙ্গে কথা বলে, হতাশার কথা জানিয়েছি। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। এর সঙ্গে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক গর্ব জড়িয়ে আছে। ব্যাগি-গ্রীন ক্যাপ পরে কেউ সেটার অপমান করলে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।’ স্মিথকে এক সময় অস্ট্রেলীয়দের ক্রিকেট দেবতা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনা করা হতো। বর্তমান সময়ে দেশটির পতাকাবাহক হিসেবেও সবার আগে ছিল তার নাম। কিন্তু একটা ঘটনাতেই চূর্ণ হয়ে গেল তাকে ঘিরে থাকা সম্মানের বলয়। এক মুহূর্তে বিশ্ববন্দিত থেকে বিশ্বনিন্দিত স্মিথ।
×