ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দামের সমন্বয় করা হবে

২৫ এপ্রিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৭ মার্চ ২০১৮

২৫ এপ্রিল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের যাত্রা শুরু

রশিদ মামুন ॥ আগামী ২৫ এপ্রিল দেশে নতুন জ্বালানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজির যাত্রা শুরু হচ্ছে। এজন্য ২২ বা ২৩ তারিখে এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি ভর্তি রিগ্যাসিফিকেশন (পুন গ্যাসে রূপান্তর) ইউনিট মহেশখালী এসে পৌঁছাবে। জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন জ্বালানির যাত্রায় দেশে গ্যাসের দামের পরিবর্তন হবে। এলএনজিকে গ্যাসের দরের সঙ্গে সমন্বয় করে বিক্রি করা হবে। দেশের জ্বালানি সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে সরকার ২০১২ সালে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। তবে দীর্ঘ দরপত্র পক্রিয়ার পরে পেট্রোবাংলা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে পিছিয়ে পড়ে পরবর্তীতে দরপত্রের বাইরে গিয়ে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিশেষ আইনে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে কাজ দেয়া হয়। এক্সিলারেট এনার্জি শুধু এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করতে প্রতি ইউনিটে ৪৯ সেন্ট নেবে। এর বাইরে চুক্তি অনুযায়ী সব কর পরিশোধ করবে পেট্রোবাংলা। কূপ থকে প্রাকৃতিক গ্যাস তুলে চাপ প্রয়োগে সংকুচিত করে তরলে রূপান্তরেকে এলএনজি বলা হয়ে থাকে। এই এলএনজি জাহাজে করে পরিবহন করে আনা হবে। এরপর দেশে আনার পর আবার গ্যাসে রূপান্তর করে গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। যা প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে যারা ব্যবহার করেন তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। সরকার ইতোমধ্যে কাতারের সঙ্গে এলএনজি সরবরাহে চুক্তি করেছে। এর বাইরে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এলএনজি সরবরাহে আলোচনা চলছে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এই প্রথম দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে। প্রথমে প্রতি দিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে। পর্যায়ক্রমে সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করা হবে। এর বাইরে একই ধরনের টার্মিনাল নির্মাণ করছে সামিট গ্রুপ। আশা করা হচ্ছে বছরের শেষভাগে সামিটও তাদের রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করতে পারবে। প্রথমবার এক্সিলারেট এনার্জি তাদের রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। এরপর এলএনজি ট্যাঙ্কারে করে এলএনজি আনা হবে। ইতোমধ্যে এলএনজি আনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। নতুন জ্বালানি আসায় সরকার দেশের বাণিজ্যিক এবং শিল্পখাতে গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দেশে চাহিদা এবং এলএনজির যোগানের ওপর ভিত্তি করে এই সংযোগ দেয়া হবে। বিদ্যুত জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে এলএনজি আমদানির প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে শিল্প বাণিজ্যের সঙ্কট কিছুটা হলেও কমে আসবে। পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আসলে চট্টগ্রামে আর গ্যাস দেয়ার প্রয়োজন হবে না। উপরন্তু এলএনজির কিছু অংশ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা যাবে। ইতোমধ্যে দেশের খুলনা এলাকায় নতুন গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস পেলেও সঙ্কট সৃষ্টি হবে দামের ক্ষেত্রে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে। কমিশন সূত্র বলছে বিতরণ কোম্পানিগুলো এলএনজি আমদানির শুরুতে একবারে ৭০ ভাগ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায়। আপাতত এলএনজি এলেও বাসা বাড়িতে গ্যাসের দাম বাড়ছে না। তবে শিল্প-বাণিজ্য, বিদ্যুত, চা শিল্প এবং সিএনজি গ্রাহকদের বাড়তি দর পরিশোধ করতে হবে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর হয়। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য সাত টাকা ৩৫ পয়সা। কমিশন বিতরণ কোম্পানির আবেদনে সাড়া দিলে একবারে দেশে গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারে ৫ টাকা ১৪ পয়সা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ টাকার ওপরে। তবে একবারে দেশে গ্যাসের দাম অতীতে এতটা বৃদ্ধি পায়নি। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র জানায়, সরকার এক্ষেত্রে কোন ভর্তুকি দেবে কি না তার ওপর নির্ভর করবে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এলএনজি আসলে কম দামে গ্যাস বিক্রি সম্ভব হবে না। তবে সরকার এলএনজি আসার পর গ্যাসের ওপর থেকে সব ধরনের কর তুলে নেয়ার কথা বলেছে। কেবল ১৫ ভাগ ভ্যাট থাকবে গ্যাসের ওপর। এছাড়া গ্যাসের ওপর নানা ধরনের ৯৩ শতাংশ করের পুরোটা তুলে নেয়া হবে।
×