ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাক্রোমিল জরিপ সংস্থার গবেষণা

ছুটির জন্য এখনও লড়াই করতে হয় জাপানীদের

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২৭ মার্চ ২০১৮

ছুটির জন্য এখনও লড়াই করতে হয় জাপানীদের

বিশ্বব্যাপী জাপানের পরিচিতি রয়েছে কারোশি বা অতিরিক্ত কাজের ফলে মৃত্যুর জন্য। শারীরিক ও মানসিক চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত কাজ ও অপর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য কর্মীরা হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে আবার বিষণœতায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। নিপ্পন ডট কম। জাপানে প্রতিবছর তিনটি প্রধান ছুটি থাকে। যার একটি নববর্ষ। অপর দুটি হল অবোন উৎসব ও গোল্ডেন উইক। মধ্য আগস্টে অবোন উৎসব শুরু হয়। এপ্রিলের শেষ ও মে মাসের শুরুতে গোল্ডেন উইক। গত বছরের মার্চে মাসে অনলাইনে ম্যাক্রোমিল জরিপ সংস্থার করা গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ গোল্ডেন উইকে নয়দিনের ছুটি চান। খুবই অল্প সংখ্যক কোন ছুটিই চান না। সর্বোপরি বেশিরভাগ কর্মী সাতদিনের ছুটি প্রত্যাশা করেন। যখন কর্মীদের প্রশ্ন করা হয়েছে তারা কতদিন ছুটি পান, অধিকাংশই উত্তর দিয়েছেন মাত্র পাঁচ দিন বলে। ম্যাক্রোমিলের অপর এক জরিপে উঠে এসেছে যে, গ্রীষ্মের ছুটির জন্য ৫৩ দশমিক দুই শতাংশ কর্মীরা আশা করেছেন সাত থেকে ১৩দিনে ছুটি দেয়া হোক। গড়ে এই ছুটি দেয়া হয় ছয় দশমিক দুই দিন। যা সর্বোচ্চ ছুটি আশা করা সংখ্যার অর্ধেক। স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত জেনারেল সার্ভে অন ওয়ার্কিং কন্ডিশন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে জাপানী কর্মীরা গড়ে ১৮ দশমিক একদিন অর্জিত ছুটি পেয়েছেন তাদের কোম্পানিগুলো থেকে। গড়ে কর্মীদের আসলে শুধু আট দশমিক আট দিন ছুটি দেয়া হয় অর্জিত ছুটি হিসেবে। যা তাদের পুরো ভাতার ৪৮ দশমিক সাত শতাংশ। কেন তাদেরকে পুরো ভাতা দেয়া হয়না ছুটিতে থাকার সময়। এই প্রশ্নের উত্তরে তারা বিভিন্ন কারণ জানান। যার মধ্যে রয়েছে, কর্মীরা যখন ছুটি চান তখন অফিস তাদের প্রয়োজনীয় ছুটি দেয় না। জটিল পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয় যাতে কেউই নিজেদের কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করানোর সুযোগ পান না। দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে বিন্যাস করা হয়না। যদি কেউ বিভাগীয় কাজে বাইরে যান তবে তার কাজগুলো সম্পূর্ণ করা হয় না। প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অন্যদের জন্য খুবই ঝামেলাপূর্ণ করে রাখা হয়। এই বাধাগুলো ছুটির আদর্শ ও বাস্তবতার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এক্সপেডিয়া প্রকাশিত সবচেয়ে খারাপ কর্মস্থল হিসেবে পরিচিত দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। ৩০টি দেশের কর্মীদের ওপর ভিত্তি করে এটি প্রকাশিত হয়। ইনডিড জব হ্যাপিনেস ইনডেক্স ২০১৬ অনুযায়ী সেরা ৩৫টি দেশের মধ্যে করা তালিকায় জাপানের কর্মীরা সবচেয়ে কম খুশি। জাপানের সমাজে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সইতো তারোর অনুমান, ২০১৬ সালে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি ৭০ লাখ কমেছে। যা ২০২৬ সালে কমে ৬ কোটি ২০ লাখ হবে। এক হিসেবে প্রতিবছর শূন্য দশমিক সাত শতাংশ কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত হচ্ছে। ব্যাপক সংখ্যক কর্মীরা তাদের বয়স্ক মা-বাবাদের দেখাশোনায় ব্যয় করছে। মা-বাবা ও সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য সময় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক কর্মীরা ক্যান্সার বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যেজন্য তারা পুরো সময় কাজের জন্য ব্যয় করতে পারছে না। তবে তাদের চিকিৎসার জন্য অর্থ উপার্জন করা প্রয়োজন। এমনকি কর্মরত জনগোষ্ঠীও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে যদিও কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। তারা হল সন্তানসহ নারী ও বয়স্করা। ম্যাক্রোমিল যখন জাপানী কর্মীদের জিজ্ঞেস করেছিল গ্রীষ্মের ছুটিতে তারা কি করতে চান। এর উত্তরে বেশিরভাগ লোক জবাব দিয়েছিল, বাড়িতে থেকে বিশ্রাম করা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান ও কবরস্থানে গিয়ে প্রার্থনা করা। জাপানে অবোন উৎসবে ঐতিহ্যগতভাবে আত্মীয়রা মারা যাওয়া আত্মীয়-পরিজনদের কবরে গিয়ে প্রার্থনা করেন। সমাজে কাজ ও বিশ্রাম নেয়া লোকজনের জন্য প্রয়োজন।
×