ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাতি নিভিয়ে কালরাত স্মরণ

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৬ মার্চ ২০১৮

বাতি নিভিয়ে কালরাত স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর ইতিহাসে বিভীষিকাময় কালরাতটি বাতি নিভিয়ে স্মরণ করল জাতি। রবিবার রাত নয়টা বাজতেই এক মিনিটের জন্য নামল ঘুটঘুটে অন্ধকার; একাত্তরে পাকি জান্তার ‘অপারেশন সার্চলাইটের সেই ভয়াল গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে এই কর্মসূচী পালনে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। একাত্তরের কালরাত স্মরণে এ ধরনের কর্মসূচী এবারই প্রথম পালিত হল। সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, কেন্দ্রীয়ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করা হবে না। নিজ নিজ উদ্যোগে বাতি নিভিয়ে এক মিনিট এই প্রতীকী কর্মসূচীতে যোগ দিতে হবে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কালরাতের কর্মসূচী পালনকালে ব্ল্যাক আউটের সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এক মিনিটের ‘ব্ল্যাক আউট’ কর্মসূচী পালন করা হয়। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে কর্মসূচী পালন শেষে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল্লাহিল মারুফ বলেন, “আমাদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো এই প্রতীকী কর্মসূচী পালন হলো। কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রিডলাইন বন্ধ করা সম্ভব ছিল না, তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগের ওপর সব হয়েছে।” ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন শুরু করে পাক সেনারা। নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চালায় নির্বিচারে গণহত্যা। পাক বাহিনীর সেই নৃশংসতার পর রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি, স্বাধীনতার জন্য শুরু হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম, তার পথ ধরে এসেছিল স্বাধীনতা। শহীদ মিনারে ৪৭টি মশাল জ্বালিয়ে আলোর মিছিল ॥ সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালনের কর্মসূচী আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও; মুক্তিযুদ্ধ শহীদদের সন্তান ও নতুন প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ-তরুণী মোমবাতি হাতে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন। গণহত্যা দিবস পালন ॥ জাতীয় সংসদে স্বীকৃতির পর এবারই দ্বিতীয় বারের মতো ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ। মশাল প্রজ্বালন, আলোর মিছিল, বিভীষিকাময় সেই কালরাতের স্মৃতিচারণ আর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রি স্মরণে নানা অনুষ্ঠানমালার। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে রাত নয়টা এক মিনিটে আলো বন্ধ করে পালিত হয়েছে ব্ল্যাক আউট অনুষ্ঠান। অন্যদিকে রাতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নতুন প্রজন্মের হাতের মশাল আর হাজারো প্রজ্বলিত মোম থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোতে আলোকিত হয়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। আলোর মিছিল করে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গণহত্যা দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যে কোন মূল্যে রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। দিবসটি পালনে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ছিল প্রচন্ড। পাকি হন্তারকদের ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে পরাজিত পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। একাত্তরের গণহত্যার কথা এখনও অস্বীকার করে পাকিস্তান। বাঙালীর জাতির আত্মপরিচয় ও মর্যাদার ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচারের জবাব দিতেই ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীর মধ্যে ছিল গণহত্যার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক গীতিনাট্য/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারের উদ্যোগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রাঙ্গণে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ : গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোর মিছিলে উদ্ভাসিত শহীদ মিনার ॥ ২৫ মার্চ স্মরণে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে আসা মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরের রণাঙ্গনের সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনীতিক, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নতুন প্রজন্মেও প্রতিটি সদস্যের মুখে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও প্রগতিবিরোধী অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আলোকবর্তিকা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার। বাংলা একাডেমির আলোচনা ॥ একাত্তরে বাঙালী অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যত প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন এবং গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেলে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালায় আমরা তার দলিলপত্র প্রণয়ন করতে পেরেছি, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, এটা আমাদের সাফল্য। জাতীয় মসজিদে মিলাদ ॥ বাসস জানায়, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রবিবার বিকেল সোয়া ৫টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন দ্বীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী পরিচালক জুবাইর আহাম্মদ আল আযহারী।
×