ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৬ মার্চ ২০১৮

চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় মানুষের ঢল

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জমজমাট রূপ ধারণ করেছে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রতিদিনই মানুষের ঢল মেলা অভিমুখে। নগরীর পলোগ্রাউন্ডের সুবিশাল পরিসরে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে দেশী-বিদেশী চার শতাধিক স্টল। এবারের মেলাকে সাজানো হয়েছে চট্টগ্রামে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে। তোরণ সেজেছে কর্ণফুলী টানেলের আদলে। এ বছরও মেলায় পার্টনার কান্ট্রি হিসেবে রয়েছে থাইল্যান্ড। ঢাকার বাণিজ্যমেলা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উদ্যোগে আয়োজিত হলেও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করে আসছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। বেসরকারী উদ্যোগে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যমেলা। গত ৩ মার্চ শুরু হওয়া মাসব্যাপী চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা এখন শেষ দিকে। ফলে দর্শনার্থীর চাপও এখন যেন বাঁধ ভাঙ্গা। চট্টগ্রামের মানুষ সারা বছরই প্রতীক্ষায় থাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার জন্য। মেলায় প্রদর্শিত হয় দেশে উৎপাদিত পণ্য। বিশাল এ সম্ভার থেকে ভোক্তারা পছন্দের জিনিসটি কিনে নেন। এমন অনেক পণ্যই রয়েছে যা পাওয়ার জন্য এ মেলাটির প্রতীক্ষায় থাকেন গৃহিণীরা। ইলেট্রনিক্স, ইলেকট্রিকাল, বস্ত্র, গৃহস্থালি, রান্নাঘরের সামগ্রী, খেলনা, পাদুকাসহ এমন কোন পণ্য নেই যা পাওয়া যায় না এই মেলায়। শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসটি কেনার জন্যই যাওয়া নয়, হঠাৎ এমন পণ্যও চোখে পড়ে যায়, যা দেখে মনে হয় এই জিনিসটিই তো খুঁজছিলাম। পলোগ্রাউন্ড অভিমুখে নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর নির্বিশেষে সকল বয়সের মানুষের স্রোত। বাণিজ্যমেলার কারণে টাইগার পাসের সড়কটিতে অনেক রাত পর্যন্ত থাকছে যানজট। ভোগান্তি কিছুটা হলেও চট্টগ্রামের মানুষ তা মেনে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মর্যাদা বিবেচনা করে। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবারও পার্টনার কান্ট্রি থাইল্যান্ড। মেলায় অংশ নিয়েছে ভারত, থাইল্যান্ড, মরিশাসসহ বিভিন্ন দেশ এবং স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। থাইল্যান্ড বিগত ১৪ বছরের ন্যায় এবারও ৫ হাজার ৪শ বর্গফুট জায়গা নিয়ে বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলার ব্যাপ্তি প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট। এতে রযেছে ১৭টি প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, ১১টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৮টি স্ট্যান্ডার্ড প্যাভিলিয়ন, ১৭২টি প্রিমিয়ার মেগা স্টল, ২৩টি মেগা স্টল, ১৪টি প্রিমিয়ার গোল্ড স্টল, ১৩টি প্রিমিয়ার স্টল, ১৪টি স্ট্যান্ডার্ড স্টল, ৩টি রেস্টুরেন্ট, পার্টনার কান্ট্রির থাই জোন এবং ৩টি আলাদা জোনসহ মোট ৪৫০টির অধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ। আবুল খায়ের গ্রুপ, ইউনিলিভার, বিআরবি, পিএইচপি গ্রুপ, এইচআরসি, এস আলম গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপ, হাতিলসহ দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা পরিদর্শন করছেন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এই আয়োজন। এ মেলা চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদাও পূরণ করে থাকে। তাছাড়া চট্টগ্রামবাসীর সপরিবারে বেড়াবার একটি স্থানও বটে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও লাখ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চেম্বারের ভূমিকার উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি জানান, চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে চট্টগ্রামে আমরা সম্পূর্ণ আলাদা একটি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক ব্যবসায়ী শিল্প স্থাপনের জন্য আগ্রহী। অথচ স্থানাভাবে পারছেন না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চেম্বার নিজেই একটি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে গড়ে উঠবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। দেশের ইপিজেডগুলোর আদলে গড়ে উঠবে এই শিল্পজোন। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ বলেন, এই মেলায় বেশকিছু বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। এতে করে পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদন খরচ ইত্যাদির তুলনামূলক বিচার করার মাধ্যমে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যসমূহের মানোন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
×