ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুমেক হাসপাতালে গর্ভের সন্তান দ্বিখন্ডিত

চিকিৎসক, পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে হাইকোর্টে তলব

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ মার্চ ২০১৮

 চিকিৎসক, পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে হাইকোর্টে তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় হাসপাতাল পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জন ও অভিযুক্ত চিকিৎসকসহ সাতজনকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ৪ এপ্রিল অভিযুক্তদের সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী এ্যাডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। তিনি জানান, এই ঘটনায় আগামী ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, কুমিল্লার সিভিল সার্জন, গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ করুনা রানী কর্মকার, ডাঃ নাসরিন আক্তার পপি, ডাঃ জানিবুল হক, ডাঃ দিলরুবা শারমিন ও ডাঃ আয়েশা আফরোজকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। রবিবার এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোঃ আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারহানা ইসলাম খান, আনিসুল হাসান ও সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জনকণ্ঠসহ দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত এ ঘটনায় সাতজনকে ৪ এপ্রিল তলব করেছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জানাজানি হয় শনিবার। জুলেখা বেগম নামের ওই প্রসূতি গত এক সপ্তাহ ধরে সন্তান ও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন। এ ঘটনায় হাসপাতালসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুলেখা বেগম নামে এক প্রসূতি মায়ের নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন ও তার জরায়ু কেটে অপারেশনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর নবজাতকের মরদেহ দারোয়ানের মাধ্যমে হাসপাতালের অদূরে মাটিচাপা দেয়া হয়। জানা যায়, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ (শনিবার) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই প্রসূতির ভর্তির রেজিস্ট্রার ও কাগজপত্র দেখে জানা যায়, পরদির রবিবার দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ওই সিজার করা হয়। এ সময় ডাঃ নাসরিন আক্তার পপি, ডাঃ জানিবুল হক, ডাঃ দিলরুবা শারমিন ও ডাঃ আয়েশা আফরোজসহ অন্যরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসূতির স্বামী সফিক কাজী জানান, ১৭ মার্চ শনিবার জুলেখা বেগম হাসপাতালে ভর্তির পর প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা তাকে সিজারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন ১৮ মার্চ (রবিবার) দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। সফিক কাজী অভিযোগ করে জানান, অপারেশন থিয়েটারে থাকাবস্থায় ডাক্তাররা তার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে তিনি জানতে পারেন তার নবজাতক ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং তার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। অপারেশনের পর স্ত্রীকে দেখতে চাইলে তাকে দেখতে দেয়া হয়নি। পরে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর মৃত বাচ্চা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ওইদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটি চাপা দেয়ার জন্য ৫শ’ টাকা চায়। পরে তিনি ৩শ’ টাকা দিলে ওই দারোয়ান হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে নবজাতকের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। শনিবার (২৪ মার্চ) সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমায়। দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের অতিরিক্ত ১নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রসূতি জুলেখা বেগম। জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার জরায়ুপথে পেটের ভেতর হাত দিয়ে টানাটানি করে আমার সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে। তারা সিজারের সময় ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আমার জরায়ু কেটে ফেলে।
×