ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্রজুড়ে পানি সঙ্কট ॥ গভীর নলকূপেও মিলছে না

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৬ মার্চ ২০১৮

বরেন্দ্রজুড়ে পানি সঙ্কট ॥ গভীর নলকূপেও  মিলছে না

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকহারে নিচে নেমে যাওয়ায় পানি মিলছে না গভীর নলকূপেও। আর হস্তচালিত নলকূপ টিকছেই না। এ অবস্থায় খাবার পানির ভরসা সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টাও ভেস্তে যেতে বসেছে। খাবার পানির সঙ্কটের পাশাপাশি সেচ নিয়েও এখন বিপাকে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকহারে বেশি নিচে গেছে। অনেক আগে থেকেই রাজশাহীর তানোর অঞ্চলে খাবার পানির সঙ্কটে ভুগছে মানুষ। প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুম আসলেই পানির জন্য হাহাকার পড়ে। এবারে চৈত্রের শুরু থেকে পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক গভীর নলকূপ। ফলে সেচ সঙ্কটে পতিত পড়ে রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমি। শনিবার তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার মাহালিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা হাতে বালটি, কলস, হাড়ি-পাতিল নিয়ে একটি সাব-মার্সিবল পাম্পের কাছে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। সবার দরকার খাবার পানি। কিছুক্ষণ পরে একব্যক্তি তার বাড়িতে বসান সাব-মার্সিবল পাম্প চালু করলে ফিতা পাইপের মাধ্যমে অপেক্ষমাণরা পানি সরবরাহ পান। এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে তারা খাওয়ার পানি নিয়ে বাড়ি ফিরেন। এ দৃশ্য এখন প্রতিদিনের। দিনে একবার পানি নিয়েই ফিরেন বাসায়। তা চলে সারাদিন। পানির জন্য এমন হাহাকার এখন বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়েই। গ্রামবাসী জানান, ওই এলাকায় ভূ-গর্ভস্থর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপ ১০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। পৌরসভার দেয়া দুইটি সাব-মার্সিবল পাম্প ও তিন বছর ধরে পানি না উঠায় বন্ধ। গ্রামের ছোট বড় পুকুরও পানিশূন্য হয়েছে চৈত্রের আগেই। এ অবস্থায় গ্রামবাসীর খাওয়ার পানির ভরসা একজনের বাড়িতে বসান সাব-মার্সেবল পাম্প। এখন থেকে পানি নিতে অবশ্য গুণতে হয় মাসিক টাকা। এমন খাওয়ার পানির সঙ্কট শুধু তানোর উপজেলার মাহালিপাড়ার গ্রামেই নয়, পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে পানির জন্য হাহাকার। চৈত্র মাস পড়তে না পড়তে খাল-বিল পুকুরে পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অনেক পুকুর চৌচির হয়ে গেছে। গৃহপালিত পশুপাখির জন্য পানি সংগ্রহ এখন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তানোরের মুন্ডুমালা মৌজার গভীর নলকূপ অপরেটর মাহাবুর রহমান জানান, বিএমডিএ আওতাধীন তার গভীর নলকূপটি পাঁচ বছর ধরে পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে। এ নলকূপের এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমি এখন পতিত পড়ে রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতির নব্বইয়ের দশক থেকে ব্যাপক হারে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়। বসান হয় শত শত গভীর নলকূপ। সেই সব নলকূপ থেকে বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে দেয়া হয় পানির সংযোগও। সেই পানি ব্যবহার করে এলাকার মানুষ সাচ্ছন্দ্যে ঘরে বসে খাবার পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খরা মৌসুমে পতিত থাকা জমি চাষের আওতায় নেয়া হয়। কিন্তু অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলনের ফলে এখন কুফল দেখা দিয়েছে। তানোরের মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী জানান, বোরো মৌসুমে অতিমাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে দুই ফুট করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটি হওয়ার কারণে পানির সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হস্তচালিত নলকূপ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে এলাকায়। গভীর নলকূপেরও পানি উঠছে না ঠিকমতো। তিনি বলেন প্রথমিকভাবে সাব-মার্সেবল পাম্প বসান হলেও এক দুই বছরের মধ্যে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাওয়ার পানির পাশাপাশি চলছে দারুণ সেচ সঙ্কট। তার মতে বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে সরকারকে খুব দ্রত বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে। বিকল্প উপায়ে নদী থেকে পানি এনে সেচকাজে ব্যবহার করলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।
×