ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবার ফ্রান্সে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৬ মার্চ ২০১৮

আবার ফ্রান্সে

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় ত্রিবস শহরের এক ব্যস্ততম সুপার মার্কেটে শুক্রবার জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। সুপার ইউশপ নামের ওই মার্কেটে একজন বন্দুকধারী গুলি ছুড়তে ছুড়তে প্রবেশ করে কয়েকজনকে জিম্মি করে। এ ঘটনায় কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়। জীবন বিপন্ন করে জিম্মিদের উদ্ধার করা ফরাসী পুলিশ কর্মকর্তা শনিবার মারা গেছেন। হামলার সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে জিম্মিদের উদ্ধার করেন লে. কর্নেল আহনু বেলত্রামে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ৪৫ বছরের বেলত্রামেকে ‘নায়ক’ বলেছেন। এ দায়িত্বশীলতা প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশের নিরাপত্তাকর্মীদের জন্যই শিক্ষণীয়। এর আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস দু’দফা আক্রান্ত হয়। ফ্রান্সে প্রথম আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে। প্যারিসের অন্তত ছয়টি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হন। ভয়াবহ এসব হামলায় আরও কয়েক শ’ আহত হয়েছেন। সে সময় দেশটিতে জরুরী অবস্থাও ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম দেশটিতে জারি করা হয় কারফিউ। শিল্প ও শিল্পীদের পীঠস্থান বলে খ্যাত প্যারিসে জঙ্গী হামলা ছিল অভাবিত। রম্য পত্রিকা শার্লি হেবদোর দফতরে দুই জঙ্গীবাদীর হামলায় ১০ জন কার্টুনিস্ট সাংবাদিক এবং পুলিশের দুই সদস্য নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এই হামলার নিন্দা এবং নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি প্রকাশ করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে প্যারিসের প্লাস দোলা রেপুবলিক চত্বরে সমবেত হন ১৫ লাখ মানুষ। একাত্মতা প্রকাশ করতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন অন্তত ৪০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। স্মরণযোগ্য, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ সে সময় যথার্থই বলেছিলেন, ‘প্যারিসই আজ পুরো বিশ্বের রাজধানী। আজ জেগে উঠেছে পুরো বিশ্ব।’ ওই অভূতপূর্ব সমাবেশের মধ্য দিয়ে ফরাসীরা বার্তা পেয়েছিল- তারা একা নয়, তাদের পাশে রয়েছে সারা বিশ্ব। ওই তাৎক্ষণিক বিপুল প্রতিক্রিয়া ও সংহতি বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের জন্য ছিল নিঃসন্দেহে এক কঠোর হুঁশিয়ারি। এর মাধ্যমে জাতিধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল জঙ্গীবাদের বিপক্ষে একতাবদ্ধ রয়েছে গোটা বিশ্ব। এরপরও পুনরায় ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা স্পষ্টত জানিয়ে দেয়Ñ আজ পৃথিবীর ঘোর দুর্দিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফ্রান্সের হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনাগুলোকে শুধু মর্মান্তিক বলে বর্ণনা করলে পুরোটা বোঝানো যায় না। সংগঠিতভাবে চালানো এই হামলাগুলো নিঃসন্দেহে দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল। অতীতে অভিন্ন হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আল-কায়েদা ইন ইয়েমেন এবং আইসিস বিবৃতি দিয়েছে। এবারের হামলাও আইসিসের ‘আদর্শে অনুপ্রাণিত’। হামলা যারাই পরিচালনা করে থাকুক না কেন, তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা মানবতাবিরোধী। এই ধরনের হামলা ও হত্যাযজ্ঞ কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন জঙ্গীবাদ সম্পর্কে সচেতন। দেশে দেশে সাধারণ মানুষের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই এদের প্রতি। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রশক্তি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সতত সোচ্চার থাকলেও হঠাৎ হঠাৎ জঙ্গী আক্রমণে বিপদাপন্ন হয়ে উঠছে ফ্রান্সের মতো বিশ্বের আরও দেশ। দুঃখজনক হলো জঙ্গীবাদের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টির পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রের। আমরা আশা করেছিলাম প্যারিসে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমাবেশ, শোভাযাত্রা এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিন্ন বক্তব্য ও অঙ্গীকার তুলে ধরার ফলে আগামীতে জঙ্গীবাদ অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বে। চরম পরিতাপের বিষয়- বাস্তবে তা হয়নি। তাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আজ নতুন করে ভাবতে হবে মানববিনাশী অপশক্তিকে কী উপায়ে প্রতিরোধ করা যায়। বিশ্ব মানবতার কল্যাণের লক্ষ্যে শুভবোধ জাগ্রত রাখা এবং শুভশক্তির ঐক্য খুবই জরুরী।
×