ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জরায়ুুসহ শিশুর মাথা বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৫ মার্চ ২০১৮

জরায়ুুসহ  শিশুর মাথা বিচ্ছিন্ন  করার অভিযোগ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা, ॥ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুলেখা বেগম নামে এক প্রসূতি মায়ের নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন ও তার জরায়ুু কেটে অপারেশনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর নবজাতকের মরদেহ দারোয়ানের মাধ্যমে হাসপাতালের অদূরে মাটিচাপা দেয়া হয়। শনিবার সকালে এ খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ভিড় জমায়। এ ঘটনায় হাসপাতালসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ওই প্রসূতির জীবন রক্ষার্থেই অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। জানা যায়, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ (শনিবার) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই প্রসূতির ভর্তির রেজিস্ট্রার ও কাগজপত্র দেখে জানা যায়, পরদিন রবিবার দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ওই সিজার করা হয়। এ সময় ডাঃ নাসরিন আক্তার পপি, ডাঃ জানিবুল হক, ডাঃ দিলরুবা শারমিন ও ডাঃ আয়েশা আফরোজসহ অন্যরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসূতির স্বামী সফিক কাজী জানান, ১৭ মার্চ শনিবার জুলেখা বেগম হাসপাতালে ভর্তির পর প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা তাকে সিজারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন রবিবার দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। সফিক কাজী অভিযোগ করে জানান, অপারেশন থিয়েটারে থাকাবস্থায় ডাক্তাররা তার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে তিনি জানতে পারেন তার নবজাতক ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং তার স্ত্রীর জরায়ুূ কেটে ফেলা হয়েছে। অপারেশনের পর স্ত্রীকে দেখতে চাইলে তাকে দেখতে দেয়া হয়নি। পরে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর মৃত বাচ্চা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ওইদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটি চাপা দেয়ার জন্য ৫শ’ টাকা চায়। পরে তিনি ৩শ’ টাকা দিলে ওই দারোয়ান হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে নবজাতকের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি মোবাইলে নবজাতকের ছবি তুলে রাখেন। এরপর দারোয়ান হাসপাতালের অদূরে নিয়ে নবজাতককে মাটিচাপা দেয়। সন্তানের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টিও তাকে জানান হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। শনিবার (২৪ মার্চ) সকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমায়। দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের অতিরিক্ত ১নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রসূতি জুলেখা বেগম। জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার জরায়ুুপথে পেটের ভেতর হাত দিয়ে টানাটানি করে আমার সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে। তারা সিজারের সময় ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আমার জরায়ু কেটে ফেলে। অপারেশনে অংশ নেয়া হাসপাতালের ডাঃ নাসরিন আক্তার পপি, ডাঃ আয়েশা আফরোজ, ডাঃ জানিবুল হক, ডাঃ দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। এমতাবস্থায় আমরা প্রথমে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করি। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা জরায়ুটি কেটে ফেলি। বর্তমানে ওই প্রসূতি সুস্থ আছে। অপারেশনের আগে এসব বিষয়ে প্রসূতির স্বামীর অনুমতি নেয়া হয়েছে এবং এতে ডাক্তারদের কোন অবহেলা ছিল না বলে তারা দাবি করেন। এ বিষয়ে জানতে প্রসূতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ করুনা রানী কর্মকারকে মেডিক্যাল কলেজে পাওয়া যায়নি এবং তার মোবাইল ফোনের সংযোগও বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মতিউর রহমান সংশ্লিষ্ট চারজন ডাক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খন্ডে বের করে আনেন।
×